Sunday, September 8

মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন পেতে জোর প্রচেষ্টা ওবামার


ঢাকা: জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়ার তীব্র বিরোধিতার পর এবার সিরিয়ায় হামলা চালানোর জন্য মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন লাভের জন্য জোর পরিকল্পনা করছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি এরই মধ্যে দেশবাসীকে বলেছেন, সিরিয়া যাতে আর কোন রাসায়নিক হামলা চালাতে না পারে সে জন্য সেখানে সীমিত পরিসরে সামরিক শক্তি ব্যবহারের প্রয়োজন। এটা ইরাক বা আফগানিস্তান যুদ্ধের মতো প্রচণ্ড ব্যয়ের দিকে যাবে না। 

সাপ্তাহিক রেডিও ও ইন্টারনেট ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি মঙ্গলবার দেশবাসীর উদ্দেশে টেলিভিশনে ভাষণ দেবেন। এ কথাও জানিয়ে দেয়া হয়েছে এর মাধ্যমে তিনি সিরিয়ায় হামলা চালানোর সমর্থন দিতে কংগ্রেস সদস্যদের প্রভাবিত করতে পারবেন বলে পরিকল্পনা করছেন। তবে ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস থেকে ওই ভাষণ দেবেন ওবামা। সিরিয়ায় সামরিক হামলা চালানো হবে কি হবে না এ নিয়ে আগামী সপ্তাহে কংগ্রেসে ভোট হবে। তার আগে সদস্যরা যাতে তাকে সমর্থন দেন সে জন্য এ চেষ্টা। এখনও অনেক কংগ্রেস সদস্য তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানান নি। ফলে তাদেরকে প্রভাবিত করাই হবে এর উদ্দেশ্য- এমন কথা বলেছেন, ডেমোক্রেট দলের এক কংগ্রেসনাল সহায়তাকারী। 

রাশিয়ায় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে শুক্রবার ওবামা নিরাশ হয়েছেন। ফলে এখন তিনি কংগ্রেসের ওপর ভর করছেন। এক্ষেত্রে পরিণতি কি হবে তা জানে না ডেমোক্রেট ও বিরোধী রিপাবলিকানরাও। তবে জনমত জরিপ তাকে সমর্থন দিচ্ছে না। এখনও বেশির ভাগ মার্কিনি সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিরোধী। মার্কিনিরা এখন চায় না যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ুক। মঙ্গলবার রয়টার্স/ইপসোস পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, শতকরা ৫৬ ভাগ মার্কিনি বিশ্বাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়া পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে সামরিক হামলার পক্ষে রয়েছে শতকরা ১৯ ভাগ মার্কিনি। এ জন্যই ওবামা তার ভাষণে বলেন, আমি জানি এক যুগের ইরাক যুদ্ধ শেষ হয়েছে। আফগানিস্তানের যুদ্ধ শেষ হয়ে আসছে। তবুও অনেক মার্কিনি উদ্বিগ্ন এটা আমি জানি।

এখানে উল্লেখ্য, সিরিয়ায় সামরিক হামলা চালানোর ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শুধু দেশেই নন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এরই মধ্যে এর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে বৃটিশ পার্লামেন্ট। ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন জানিয়ে দিয়েছেন তারা সিরিয়ায় হামলায় অংশ নিচ্ছেন না। ওদিকে, রাশিয়া ঘোরতর বিরোধী এ হামলার। বিরোধিতা করছে ইরান। তারা সবাই পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে সিরিয়ায় হামলা হলে মধ্যপ্রাচ্যে আগুন জ্বলবে।

ওবামার দুই মেয়েকে অপহরণের হুমকি: ওদিকে, ইরানের কৌশলগত বিষয়ের এক বিশেষজ্ঞ আলি রেজা ফোরঘানি সিরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় হামলা চালালে, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ২ মেয়েকে অপহরণ ও ধর্ষণ করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন তিনি। আলি রেজা ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কিশ প্রদেশের সাবেক গভর্নর। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ওবামা প্রশাসন সিরিয়ায় সেনা অভিযান চালালে, বিশ্বব্যাপী মার্কিন নাগরিকদের গণহারে অপহরণ ও হত্যা করা হবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডেইলি মেইল। 

আলি রেজা বলেন, সিরিয়ায় হামলার মাত্র ২১ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান করা প্রত্যেক মার্কিন মন্ত্রী, মার্কিন রাষ্ট্রদূত, মার্কিন সেনা কমান্ডারদের পরিবারের একজন করে সদস্যকে অপহরণ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, সিরিয়ায় হামলা হলে, ইরাকের রাজধানী বাগদাদে মার্কিন লক্ষ্যবস্তুতে জঙ্গিদের হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন এক ইরানি কর্মকর্তা ও সে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।

এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, বাগদাদে মার্কিন দূতাবাস একটি সম্ভাব্য টার্গেট। এর পরই আলি রেজা ফোরঘানি যুক্তরাষ্ট্রকে এ হুমকি দেন।

লেবানন ও তুরস্কের মার্কিন দূতাবাসে নিরাপত্তা জোরদার: ওদিকে, সম্ভাব্য হামলা বা সহিংসতার আশঙ্কায় লেবানন ও তুরস্কে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। লেবানন ও তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় আদানা থেকে দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। লেবানন ও তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মার্কিন নাগরিকদের ভ্রমণে না যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। সম্ভাব্য সহিংসতা বা হামলা থেকে বাঁচতে সতর্ক থাকার ব্যাপারে তুরস্কে থেকে যাওয়া মার্কিনিদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়েছে। 

ওই দেশ দুটিতে মার্কিন লক্ষ্যবস্তু ও নাগরিকের ওপর সম্ভাব্য হামলার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য জানাননি মার্কিন কর্মকর্তারা। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যারি হার্ফ বলেন, এগুলো সম্ভাব্য হুমকি। অবশ্যই সিরিয়াসহ ওই অঞ্চলে উত্তেজনা এতে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। হার্ফ বলেন, সুনির্দিষ্ট কোন হুমকির ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।---ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়