Wednesday, September 25

ফেসবুকের 'পিকচার কমেন্ট' নিয়ে যতো কমেন্ট

ফেসবুক। এই মুহুর্তে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগাযোগের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। ২০০৪ সাল থেকে যাত্রা শুরুর পর ফেসবুকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বৈচিত্রময় বিষয় (ফিচার) যুক্ত করে চলেছে। জনপ্রিয়তার মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে এসব ফিচার। নতুন কোনো ফিচার যুক্ত হলেই দেখা যায় ব্যবহারকারীরা কেউ তাকে সাদরে গ্রহণ করছেন; আবার কেউ বিরক্তি প্রকাশ করছেন। কেউ আবার পরে ধাতস্ত হচ্ছেন। কেউবা মানিয়ে নিতে না পেরে সে ফিচার ব্যবহার করছেন না।
সেই প্রথম থেকেই সময় গড়ানোর সাথে সাথে ফেসবুকে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য ফিচার। কয়েক মাস আগেই এ ফিচারের সাথে যুক্ত হয় বেশ কিছু বৈচিত্রময় ইমো এবং ই-ষ্টিকার। এর সাথে সাথেই আসে ‘কমেন্ট’ এ ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে ছবি ব্যবহার (পিকচার কমেন্ট) করার সুযোগ। কমেন্ট-এ ছবিযুক্ত করে এখন মন্তব্য করা যায় দেদার। আর এই ছবিযুক্ত কমেন্ট নিয়েই এখন কেউ বিব্রত, কেউ আবার অতিমাত্রায় উৎসাহী। মজার মজার এবং নানা ধরণের ছবির উপর ফটোশপে মন্তব্য জুড়ে দিয়ে তা ব্যবহার করা হচ্ছে।
কেউ কেউ একে ভালোভাবে নিয়েছেন। তারা বলেছেন খুবই মজার ফিচার এটি। আবার অনেকে বলেছেন, এটা রীতিমত বিব্রতকর বা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। দেখা গেছে হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় আলোচনার ফাঁকে কেউবা হুট করে একটি বিব্রতকর ছবি 'কমেন্ট’ হিসেবে জুড়ে দিয়েছেন। আর এ নিয়ে কখনো কখনো বিব্রতকর পরিস্থিতিরও সৃস্টি হয়। তবে নিছক মজার জন্য এই ‘ছবি কমেন্ট’ এখন বেশ জনপ্রিয় হয়েও উঠেছে। এ বিষয় নিয়ে পরিবর্তন ডটকমের পক্ষ থেকে কয়েকজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর মন্তব্য চাওয়া হয়। দেশের ৬০/৭০ লাখ ব্যবহারকারীর মধ্যে এটা একটি নগণ্য সংখ্যা মাত্র। তবে এখান থেকে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের নতুন ফিচারটি সম্পর্কে যৎকিঞ্চিত ধারণা মিলবে। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সেইসব মন্তব্য তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য। এটা ধারাবাহিকভাবে চলবে।
বোরিং লাগে এখন
পদ্ম :
 
চিৎকার ব্যান্ড দলের গায়ক এবং একজন নিয়মিত ফেসবুক ব্যবহারকারী পদ্ম বলেন, “এটা ফেসবুক ফান। কপি পেস্ট বেশি হওয়ায় বোরিং লাগে এখন। এক জিনিস বারবার পেষ্ট করা হলে আর ফান হিসেবে থাকে না। বিরক্তিকর হয়ে যায়। তবে মানুষ এখন ভিজ্যুয়াল এক্সপ্রেশনের দিকে ঝুঁকছে। ছবিতে দৃষ্টি আকর্ষন বেশি হয়। আর ফেসবুকে মানুষ নিজের দিকে অন্যদের আর্কষন বাড়াতে চায় সবসময়”।
এটি বেশ মজার
ডাক্তার লিমা :
 “ছবিযুক্ত কমেন্টের ব্যবহার বেশ মজার। নানা ধরনের মজার মজার সব
 পোষ্ট আসে এখানে। তবে মাঝে মাঝে খুব বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে এই সব কমেন্ট। হয়তো সিরায়স ইস্যুকে নিয়ে ব্যাঙ্গ কৌতুক শুরে করে দেয় কেউ কেউ। আবার অনেক রাজনৈতিক নেতাদের ছবি ব্যবহার করেও এইসব কমেন্ট আসা। যা একদিকে তাদের জন্য অবমাননাকর আবার অন্য দিকে যাকে কমেন্টটি করা হয় তার জন্যও অস্বস্তির সৃষ্টি করে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হেসে ফেলি এইসব কমেন্ট দেখে”।
এটি কাদা ছোড়াছুড়ি
মঈন কাদের :
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা এবং গণমাধ্যম বিভাগের ছাত্র মঈন কাদের বলেন, “অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এগুলা ব্যক্তি আক্রমনমূলক হয়ে যায়। মূল টপিক থেকে সরে গিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি প্রধান হয়ে ওঠে এবং শেষে ভদ্র পাবলিকের বিদায় নিতে হয় আলোচনা থেকে”।
অস্বস্তিকর ব্যাপার
মৌ ইশরাত :
 ইউনিভার্সিটি অব ডেন্টাল কলেজের ছাত্রী মৌ ইশরাত বলেন,  “আসলে ফেসবুকের এই
 ব্যিপারটা খুব মজার আবার একই সাথে কিছু জায়গায় অস্বস্থিকর ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। অনেকে আছেন খুব সিরিয়াস একটা জায়গায় এই ধরণের ফটো কমেন্ট দিয়ে বসেন। এসব কারণে আমি দেখেছি কিছু গ্রুপ কিংবা পেইজে এই কমেন্ট করা নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। একটা সময় আমাদের জন্য ফেসবুক টাইম পাস কিংবা মজার জায়গা ছিল কিন্তু এখন আর সেটা নেই তেমন সবার কাছে। ফেসবুকের মাধ্যমে আমারা অনেক কাজ করে থাকি। সুতরাং দেখা যায় কোন একটা সিরিয়াস পোস্ট কিংবা ছবি কিংবা কোন কাজের জন্য পোস্ট দেয়া হয়েছে অনেকে না বুঝেই ফটো কমেন্ট করে বসেন। এতে যেমন ওই পোস্টটির মুল্যটা থাকে না তেমন আস্তে আস্তে অনেকে ওই ব্যাপারটা গুরুত্ব দেন না। তাই মনে করি জায়গা বুঝে কমেন্টগুলো করা উচিত”।
পদ্ধতিটি বন্ধ করা উচিৎ
আইনজীবি আজমীর সুমি বলেন, “এটা মোটেও ভালো লাগে না। বিরক্তিকর ছবি দিয়ে অনেকেই ওয়ালকে শ্রীহীন করে। এই পদ্ধতি বন্ধ করা উচিৎ।” 
সঙ্গতিপূর্ণ হলে ক্ষতি নেই
গৃহিণী জেসমীন জাহান বলেন, “যদি ছবিটি স্ট্যাটাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং কোন অর্থ বহন করে, সর্বোপরি শালীন হয় তাহলে ক্ষতি কী? কিন্তু যদি ছবিটি অপ্রাসঙ্গিক ও ফাজলামোতে ভরপুর হয় তাহলে আমি এর বিরোধী।”
এটা ভাল লাগে
অভিনেতা ফারুক আহমেদ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, “ছবি দিয়ে ভক্তরা তাদের প্রতিক্রিয়া দেখায় এটা ভালো লাগে। যেকোন ছবি হোক, তাতে আপত্তি নেই। সুধু শালীনতা বজায় থাকলেই হল। সব কিছু পজিটিভ দেখা ভালো।”
এ পদ্ধতি থাকা ঠিক না
চাকরিজীবি সিনহা ইসলাম বলেন, “এটা খুব খারাপ পদ্ধতি। মাঝেমাঝে বর্ণে লেখা বাজে কমেন্টেসকেও এসব ছবি হার মানায়। এই পদ্ধতি থাকা ঠিক না।”
ভাল-মন্দ দুই-ই আছে
ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম বলেন, “আমার ভাল মন্দ দুইই অভিজ্ঞতা আছে। অনেকে অনেক ভাল ও মজার মজার ছবি দেন। তা ভালই লাগে। এই সুযোগে আজকাল কিছু অসভ্য এর অপব্যবহার করে কিছু আজে বাজে ছবিও পোস্ট করে 
মজা-ই লাগে
নাট্য নির্মাতা শ্রাবনী ফেরদাউস বলেন, "মজা-ই লাগে, খারাপ না। কিন্তু মাঝেমাঝে এতো পচাঁ ছবি দেয় তখন ঘাবরে যাই। ভয় পাই। বন্ধুরাতো এগুলো মজা করেই দেয়। এটাকে সহজভাবে দেখলেই হয়। তবে অনেকে কিছু না বুঝেই অনেক সময় ছবি দিয়ে দেয়। এগুলো সত্যিই বিরক্তিকর।”
তিনি আরো বলেন, “এই অপশন থাকতে পারে। কিন্তু ব্যবহারটা যথাযথভাবে করা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে কারো বিড়ম্বনার কারণ না হয়। ফেসবুক একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এটা সবার মনে রাখা উচিৎ। তাহলে আর সমস্যা থাকার কথা না। যে যেভাবে ইউস করেন। তবে অপশনটা মন্দ নয়।”
রুচির পরিচয় মেলে
গৃহিনী নীতু হক বলেন, “আসলে ফেসবুকে স্টাটাসে বা ছবিতে বন্ধুদের জন্য লাইক বা কমেন্টস দেয়ার অপশনটা ভালো। এখানে কেউ লাইক দেয়। কেউ আবার কমেন্টস করে। তবে ছবি দিয়ে কমেন্টস করার মাধ্যমে অনেকটা রুচির পরিচয় মিলে। কমেন্টেসের ঘরে কেউ বিরক্তিকর ছবি দিলে তাকে আনফ্রেণ্ড বা ব্লক করা উচিৎ। তাহলে শিক্ষা হবে অনেকের। এদের কারণে অনেক ভদ্র মানুষ ছবিতে কমেন্টস করতেও ভয় পায়।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের সচেতন হওয়া উচিৎ। পদ্ধতিটাকে বন্ধ করলে এর সমাধান আসবে না। কারণ বন্ধ করলে ভালো ব্যবহারকারীরা বঞ্চিত হবেন। তাদের বঞ্চিত করা ঠিক হবে না।”
অনেকে নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেয়
মিয়ানমার প্রবাসী আয়েশা করিম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, "আমি মনে করি যারা কমেন্টে ছবি দেয় তারা শুধু মজা করার জন্য এটা করে। তবে অনেকের অসৎ উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। এটা মানুষভেদে দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। এটার মাধ্যমে বন্ধুদের রূচিরও পরিচয় পাওয়া যায়।"
তিনি আরো বলেন, "জাতীয় বিপর্যয়, সামাজিক সমস্যার বিষয় যখন স্টাটাসে বা ছবির মাধ্যমে কেউ তুলে ধরে, সেখানে ছবির কমেন্টস গ্রহণযোগ্য নয়। তখন সেটাকে তামশা মনে হয়। এ ধরণের কমেন্টস করে অনেকেই নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেয়।”
খুবই বিরক্তিকর
উন্নয়নকর্মী শামীমা ঝুমুর বলেন, “এটা খুবই বিরক্তিকর। মাঝেমাঝে মেজাজ খুব খারাপ হয়ে যায়। ছবিসহ কমেন্টস সবসময় বাজে ভাবে উপস্থাপণ করে মানুষকে। এটা বন্ধ হওয়া উচিৎ। ফেসবুকে কোন স্টাটাস এবং ছবি আপ করে শান্তি পাওয়া যায় না। কি সব ছবি কমেন্টেসের ঘরে আপ করে দেয় যা সত্যি খারাপ লাগে"
ভীষন অপছন্দের
সাংবাদিক ও লেখক উদিসা ইসলাম বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা ভীষণ অপছন্দ করি, কেন না আপনি হয়তো একটা গোলাপ ফুলের পোস্ট দিয়েছেন; সেখানে আপনার কোন বন্ধু বিদঘুটে কোন ছবি দিয়ে দিলো কমেন্ট অপশনে। কি বিশ্রী কম্বিনেশন ভাবুন তো একবার!"
উদিসার ভাষ্য, "এছাড়াও এর অন্য ভাষা হতে পারতো। আমার বন্ধু তালিকায় আমার পরিবার-কলিগ-ছেলেবেলার বন্ধু সবাই আছে। হয়তো এমন কোন ভাষা বা ছবি ব্যবহার করলেন, যেখানে আমি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হলাম। বন্ধু হিসেবে আরেক বন্ধুকে অস্বস্তিতে ফেলা কোন কাজের কথা হলো কি?''
 ---পরিবর্তন ডটকম

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়