Tuesday, September 24

দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া): কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। উপজেলার ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে নানা ধরনের অনিয়ম, দর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নঔষধ সংকট, রোগীদের নিম্নমানের খাবার পরিবেশনসহ প্রয়োজনীয় ৩৪ জন চিকিৎসকের স্থলে মাত্র ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে নামে মাত্র চলছে দৌলতপুর উপজেলার প্রায় ৭ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা। ফলে প্রতিদিন শতশত রোগী চিকিৎসা নিতে এসে সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডাঃ নাজিম উদ্দিন জানালেন হাসপাতালের দৈনদিন কাজে মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার, স্কীমের মাতৃসেবা ও সিজার, ইনডেক্স আউটডোরের দিবারাত্রী দায়িত্ব পালন মাত্র ৩ জন ডাক্তার দিয়ে অসম্ভব। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচএ) সহ ২০ জন এবং উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১৪ জন সহ সর্বমোট ৩৪ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে জুনিয়র কনসাল্টেন্ট (গাইনী) ডাঃ সফর আলী ও সানিয়া সুলতানাকে বদলি করায় বর্তমানে টিএইচসহ মাত্র ৪ জন চিকিৎসক এখানে কর্মরত আছেন। আর ১৪ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র চিকিৎসক শুন্য অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে, এ উপজেলার প্রায় ৭ লক্ষাধিক মানুষ সরকারের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুধুমাত্র জরুরী বিভাগে সামান্য কাটাছেড়া রোগীর সেবা দেওয়া ছাড়া অন্যান্য চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভাগ্যভাল হলে হয়ত কোন চিকিৎসকের দর্শন মিলে। কেননা ডাক্তার সংকটের কারণে বর্হিবিভাগে সকাল ৯টার পরিবর্তে বেলা ১২টার আগে কোন ডাক্তার পাওয়া যায় না। তাছাড়া সামন্য জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসকের অভাবে মেডিকেল এ্যাসিস্টেন্টরা রোগীকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল বা রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছে। হাসপাতালের এক্সরে মেশিনটি প্রায় একযুগ ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ইসিজি মেশিনটি ৫/৬ বছর ধরে নষ্ট। সংরক্ষণ ও মেরামতের নামে অর্থ ব্যয় হলেও তা অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়। অক্সিজেন না থাকায় মুমুর্ষ রোগীরা মৃত্যের কোলে ঢলে পড়ছে। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অ-স্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে রোগীরা আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। রোগীদের খাবার পরিবেশনে লক্ষ্য করা গেছে শুভঙ্করের ফাঁকি। রোগীদের প্রতিদিন একবেলা মাছ ও একবেলা মাংশ দেবার শর্ত থাকলেও তা দেওয়া হচ্ছে না। গরু বা খাশির মাংশের পরিবর্তে ব্রয়লার মুরগীর মাংশ এবং রুই মাছের বদলে পাঙ্গাস বা সিলভার কার্প মাছ দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা জানায়, আমরা গরীব মানুষ যা দেয় ইচ্ছা না থাকলেও তাই খাচ্ছি। একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, সরকারীভাবে হাসপাতালে ৩৬ ধরণের ঔষধের সরবরাহ থাকলেও রোগীদেও প্যারাসিটামল, এন্টাসিড ও মেট্রোনিডাজল সহ মাত্র ১০/১২ ধরণের ঔষধ দেয়া হয়। সরবরাহ থাকা স্বতেও দামী ঔষুধ গুলো রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক জানান, টিএইচএ ডাঃ সালেহ আহমেদ এখানে ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে যোগদান করার পর থেকে এখানে চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়েছে। তিনি নিয়মিত দায়িত্ব পালন না করে ৩ কিলোমিটার দূরে তার নিজস্ব ক্লিনিকে বসে রোগী দেখতে ব্য¯ত থাকেন। প্রতিমাসে ১৪ দিন ১৪ টি ইউনিয়নে স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করার কথা থাকলেও তিনি পরিদর্শন না করে পরিদর্শন বাবদ বরাদ্দ সরকারী কোষাগার থেকে তুলে নিচ্ছেন। তার কথামত না চলার কারণে তিনি আমাদের মত সাধারণ চিকিৎসকদের বিভিন্ন ধরনের চাপ সৃষ্টি করে অন্যত্র বদলি হতে বাধ্য করেন। চলতি মাসের শুরুতে বদলি হওয়া জুনিয়র কনসাল্টেন্ট (গাইনী) ডাঃ সফর আলী জানান, ডিএসএফ প্রকল্পের আওতায় গর্ভবতী মায়েদের সিজার করা বাবদ আমার প্রাপ্ত অংশ থেকে টিএইচএ সালেদ আহমেদ কমিশন দাবী করলে তিনি তা দিতে অস্বীকার করায় তাকে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় বদলি করা হয়েছে। হাসপাতালের ঘনিষ্ট সূত্র গুলো জানায়, টিএইচএ সালেহ আহমেদের বাড়ি দৌলতপুরে হওয়ার কারণে ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে সাহস পায়না। তাছাড়া স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতা হওয়ার সুবাদে তিনি অবাধে সকল অপকর্ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপরে টিএইচএ ডাঃ সালেহ আহমেদ এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি।---ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়