লিয়াকত হোসেন খোকন: ঈশ্বরদীর পাশেই পদ্মা নদী। এ নদী রাজশাহীর দিকে চলে গেছে। আবার এ পদ্মাই পাবনার ৫ মাইল দক্ষিণ দিক হয়ে সুজানগরের পাশ দিয়ে গেছে দৌলতদিয়ার দিকে। তারপর মাওয়ার পাশ দিয়ে বয়ে মেঘনার সঙ্গে মিশেছে পদ্মা। ঈশ্বরদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশে বসে আছি। দু’দিন আগেই ঢাকা থেকে এসেছি এখানে। সেখানেই পরিচয় হল কৃষ্ণ নামের একজনের সঙ্গে। আমার উদ্দেশ্য নৌকা ভ্রমণে বের হবÑ দূরে কোথাও যাব। গাঁও-গেরাম দেখে দেখে এক জায়গায় নেমে পাবনায় ফিরে আসব। তখন শরৎকাল। কাশবন দেখব, শেফালী ফুল নেব দু’হাত ভরেঃ। আমার ই”ছার কথাগুলো কৃষ্ণকে বলতেই ও বলল, আমি তো সুজানগর যাচ্ছি নৌকায় একত্রে চলুন। মিনিট পনেরো পর নৌকা পেয়ে গেলাম। নৌকার মাঝিও যাচ্ছে সুজানগরের দিকে। বয়সে সে তর“ণ। ভাবলাম, জমবে এবার ভ্রমণ। কৃষ্ণ জানায়, মন্দিরে মন্দিরে কীর্তন গান করি। মাঝির সঙ্গে শর্ত ছিল, মাঝে মধ্যে নৌকা কূলে ভিড়াতে হবে। নৌকাচালকের নাম বিষ্ণু দাস। সে একটু হেসে বেড়াবেন তা কাশবন দেখবেন তো। শরৎ মানেই তো কাশবন। কূলে নেমে দেখবেন ওখানে কত না গাছগাছালি।
পদ্মার তীর ঘেঁষে চলছে নৌকা। পদ্মার রূপ দেখে যা”িছ। ভাবছি অতীতের কতই না কথা। এ পদ্মায় প্রথম বেড়াতে এসেছিলাম ১৯৮৪ সালে। তখন আমার বন্ধু ছিল সোহেল রানা, রনি, ইমরানÑ তাদের দেখা সেই পদ্মা আজকের পদ্মার সঙ্গে কোনই মিল খুঁজে পা”িছ না। তখন ছিল কি-ই না বিশাল নদীÑ আর আজ চর পড়ে পড়ে নদী যেন ছোট হয়ে এসেছে। বিষ্ণু দাস বলল, ওই যে নদীতীরে দেখুন, শেফালী ফুল গাছঃ। নৌকা থেকে নেমে এলাম আমি ও কৃষ্ণ। শেফালী ফুল হাতে নিয়ে কৃষ্ণ গান ধরল। উঠে এলাম নৌকায়। চোখে পড়ে না পদ্মার বুকে জেলেদের নৌকা। কবে সেই দিনগুলোতে সোহেল ও আমি পদ্মায় নৌকায় ভেসে ভেসে হঠাৎ দেখেছিলাম, এক জেলে জাল ভরা ইলিশ উঠাল নৌকায়। আজ আর তাতো দেখি না! এদিন যে কোথায় চলে গেল! ইলিশ যদি নদীতে নাইবা মেলে তাহলে ইলিশ নিয়ে আমাদের এত গর্ব কেন!
নৌকায় বসে এ কথাগুলোই বারবার ভাবছিলাম। দেখলাম, পদ্মার যৌবন রূপ আর যে নেই। এদিকে-সেদিকে চর জেগে নদী তার নাব্যতা হারিয়েছে। কমে গেছে প্রশস্ততা। বিষ্ণু দাসকে জিজ্ঞেস করলাম এই যে বিষ্ণু, পদ্মায় ইলিশ-টিলিশ পাওয়া যায় কি না দেখ তো। ইলিশ যে খেতে ই”ছা করছেঃ। একটু হেসে বিষ্ণু বলল, ইলিশ পাবেন কোথায়। পদ্মা যে আজ ইলিশশূন্য। বুকে লালন করতে পারছে না ইলিশকে, এ জন্য পদ্মার কী কম কষ্ট! কথাগুলো বলতে বলতে বিষ্ণু গান ধরল।
পদ্মা পাড়ি দিয়ে নৌকা নিয়ে এলো কুষ্টিয়া জেলার দিকে। নৌকা ভিড়িয়ে বিষ্ণু বলল, ওই যে পথটা দেখছেন এরই মাইল দেড়েক দূরে কবিগুর“ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি। কূলে নেমে দেখি শিউলি গাছÑ গাছের তলে শিউলি ফুল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। কৃষ্ণ ফুলগুলো তুলতে তুলতে বলল, শিউলি ফুলের মালা গাঁথব, সেই মালা পরিয়ে দেব সখীকে। জিজ্ঞাসা, তোমার প্রিয়তমার নাম কী? একটু হেসেÑ ‘অনুরাধা।
কৃষ্ণ আমার হাতটা স্পর্শ করে বলল, চলুন পদ্মায় ফিরে যাই। নৌকা চলছে। দু’কূলের দৃশ্য দেখে দেখে ‘শরৎ তোমার অর“ণ আলোর অঞ্জলি। ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলিঃ’ কবিতার এ দুটি লাইন বারবার মনে জাগল। দুপুর গড়িয়ে গেছে। বড্ড খিদে পেয়েছে। সেই ক্ষণে বিষ্ণু তীরে নৌকা রেখে বলল, চলুন কিছু দূর গেলেই বাজার। ওখানে দুপুরের খাওয়াটা সেরে নেবেন। ভাত পাওয়া যায় এমনি এক হোটেলে ঢুকে দোকানিকে জিজ্ঞেস করলাম ইলিশ আছে? দোকানি একটু গম্ভীর হয়ে বাবু, ইলিশ-টিলিশ নেই। এ জনমে পাবেন না আর ইলিশ। শুনেছি, একটা ইলিশের দাম দেড় হাজার টাকাঃ। কথাটা শুনে কৃষ্ণ মাথায় হাত রাখল। কি আর করা পুকুরে চাষ করা তেলাপিয়া মাছ দিয়ে খেলাম। এক পে¬ট ভাত আর তেলাপিয়া মাছ খেতে এক একজনের বিল নেয়া হল ৮০ টাকা করে। অর্থাৎ দিলাম ২৪০ টাকা। পদ্মার তীরে এসে দেখি ওই যে দূরে কাশবন। বাতাসে দুলছে। এ দৃশ্য দেখে কৃষ্ণ বলল, শরৎ দেখা যে সফল হল। এদিকে আকাশে তাকিয়ে দেখি সাদা মেঘের ভেলা। বিষ্ণু বলল, সুজানগর পৌঁছতে আর ঘণ্টা দুই সময় লাগবে। পথে আর কোথাও নৌকা ভিড়াব কি না! বললাম, তোমার খুশি। চোখে পড়ল ধু-ধু বালুচর। কত না পাখি উড়ে এসে বালুচরে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। এ দৃশ্য দেখে শ্যামল গাঁয়ের কাছে নৌকা আসতেই বিষ্ণু বলল, নৌকা রাখব নাকি! বললাম, সবই তো দেখতে পাচ্ছি। চোখে পড়ল হিজলগাছ। গাছে গাছে ফুল। সেই মুহূর্তে কৃষ্ণ ও আমার মনে লেগেছিল রং। দেখি নদীতে ভেসে যাচ্ছে হিজল ফুলের মালা।
শরতের একটা দিন এভাবে নৌকায় কেটে গেল আমাদের। কৃষ্ণই বলল, পদ্মায় শরৎ কাটানোÑ এ তো ভাগ্যের ব্যাপার। আমরা ততক্ষণে পৌঁছে গেছি সুজানগরের কাছে। এবার নৌকা থেকে নামার পালা। মাঝি বিষ্ণুকে একটা ৫০০ টাকার নোট দিতেই সে বলল, টাকা বড় নয়Ñ যা পেয়েছি তাতেই সš‘ষ্ট। দু’নয়ন ভরে পদ্মায় বসে শরৎকাল দেখেছি এটা কী কম ভাগ্যের কথা! কথাগুলো শুনে কূলে ওঠার সময় কৃষ্ণ আমার হাতটা স্পর্শ করেÑ চলুন আপনাকে পাবনার বাসে উঠিয়ে দিই। বাসে ওঠার আগে বলল, এই নিন একটা কাগজ এখানে আমার মোবাইল নাম্বার লেখা আছে। এ শরতেই তো হবে বিশ্বকর্মা পূজা, গণেশ পূজা। তারপর তো কার্তিকের শুর“তে হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। তখন আসবেন আমাদের গাঁয়ে দেখবেন পূজা-পার্বণ। আর শুনবেন রয়ানী কীর্তন। সেই ক্ষণে দেব আনন্দ, ভ্রমণও হবে সার্থক। বললাম, এ দিনের কথা ভুলি কেমনে!---ডিনিউজ
পদ্মার তীর ঘেঁষে চলছে নৌকা। পদ্মার রূপ দেখে যা”িছ। ভাবছি অতীতের কতই না কথা। এ পদ্মায় প্রথম বেড়াতে এসেছিলাম ১৯৮৪ সালে। তখন আমার বন্ধু ছিল সোহেল রানা, রনি, ইমরানÑ তাদের দেখা সেই পদ্মা আজকের পদ্মার সঙ্গে কোনই মিল খুঁজে পা”িছ না। তখন ছিল কি-ই না বিশাল নদীÑ আর আজ চর পড়ে পড়ে নদী যেন ছোট হয়ে এসেছে। বিষ্ণু দাস বলল, ওই যে নদীতীরে দেখুন, শেফালী ফুল গাছঃ। নৌকা থেকে নেমে এলাম আমি ও কৃষ্ণ। শেফালী ফুল হাতে নিয়ে কৃষ্ণ গান ধরল। উঠে এলাম নৌকায়। চোখে পড়ে না পদ্মার বুকে জেলেদের নৌকা। কবে সেই দিনগুলোতে সোহেল ও আমি পদ্মায় নৌকায় ভেসে ভেসে হঠাৎ দেখেছিলাম, এক জেলে জাল ভরা ইলিশ উঠাল নৌকায়। আজ আর তাতো দেখি না! এদিন যে কোথায় চলে গেল! ইলিশ যদি নদীতে নাইবা মেলে তাহলে ইলিশ নিয়ে আমাদের এত গর্ব কেন!
নৌকায় বসে এ কথাগুলোই বারবার ভাবছিলাম। দেখলাম, পদ্মার যৌবন রূপ আর যে নেই। এদিকে-সেদিকে চর জেগে নদী তার নাব্যতা হারিয়েছে। কমে গেছে প্রশস্ততা। বিষ্ণু দাসকে জিজ্ঞেস করলাম এই যে বিষ্ণু, পদ্মায় ইলিশ-টিলিশ পাওয়া যায় কি না দেখ তো। ইলিশ যে খেতে ই”ছা করছেঃ। একটু হেসে বিষ্ণু বলল, ইলিশ পাবেন কোথায়। পদ্মা যে আজ ইলিশশূন্য। বুকে লালন করতে পারছে না ইলিশকে, এ জন্য পদ্মার কী কম কষ্ট! কথাগুলো বলতে বলতে বিষ্ণু গান ধরল।
পদ্মা পাড়ি দিয়ে নৌকা নিয়ে এলো কুষ্টিয়া জেলার দিকে। নৌকা ভিড়িয়ে বিষ্ণু বলল, ওই যে পথটা দেখছেন এরই মাইল দেড়েক দূরে কবিগুর“ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি। কূলে নেমে দেখি শিউলি গাছÑ গাছের তলে শিউলি ফুল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। কৃষ্ণ ফুলগুলো তুলতে তুলতে বলল, শিউলি ফুলের মালা গাঁথব, সেই মালা পরিয়ে দেব সখীকে। জিজ্ঞাসা, তোমার প্রিয়তমার নাম কী? একটু হেসেÑ ‘অনুরাধা।
কৃষ্ণ আমার হাতটা স্পর্শ করে বলল, চলুন পদ্মায় ফিরে যাই। নৌকা চলছে। দু’কূলের দৃশ্য দেখে দেখে ‘শরৎ তোমার অর“ণ আলোর অঞ্জলি। ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলিঃ’ কবিতার এ দুটি লাইন বারবার মনে জাগল। দুপুর গড়িয়ে গেছে। বড্ড খিদে পেয়েছে। সেই ক্ষণে বিষ্ণু তীরে নৌকা রেখে বলল, চলুন কিছু দূর গেলেই বাজার। ওখানে দুপুরের খাওয়াটা সেরে নেবেন। ভাত পাওয়া যায় এমনি এক হোটেলে ঢুকে দোকানিকে জিজ্ঞেস করলাম ইলিশ আছে? দোকানি একটু গম্ভীর হয়ে বাবু, ইলিশ-টিলিশ নেই। এ জনমে পাবেন না আর ইলিশ। শুনেছি, একটা ইলিশের দাম দেড় হাজার টাকাঃ। কথাটা শুনে কৃষ্ণ মাথায় হাত রাখল। কি আর করা পুকুরে চাষ করা তেলাপিয়া মাছ দিয়ে খেলাম। এক পে¬ট ভাত আর তেলাপিয়া মাছ খেতে এক একজনের বিল নেয়া হল ৮০ টাকা করে। অর্থাৎ দিলাম ২৪০ টাকা। পদ্মার তীরে এসে দেখি ওই যে দূরে কাশবন। বাতাসে দুলছে। এ দৃশ্য দেখে কৃষ্ণ বলল, শরৎ দেখা যে সফল হল। এদিকে আকাশে তাকিয়ে দেখি সাদা মেঘের ভেলা। বিষ্ণু বলল, সুজানগর পৌঁছতে আর ঘণ্টা দুই সময় লাগবে। পথে আর কোথাও নৌকা ভিড়াব কি না! বললাম, তোমার খুশি। চোখে পড়ল ধু-ধু বালুচর। কত না পাখি উড়ে এসে বালুচরে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। এ দৃশ্য দেখে শ্যামল গাঁয়ের কাছে নৌকা আসতেই বিষ্ণু বলল, নৌকা রাখব নাকি! বললাম, সবই তো দেখতে পাচ্ছি। চোখে পড়ল হিজলগাছ। গাছে গাছে ফুল। সেই মুহূর্তে কৃষ্ণ ও আমার মনে লেগেছিল রং। দেখি নদীতে ভেসে যাচ্ছে হিজল ফুলের মালা।
শরতের একটা দিন এভাবে নৌকায় কেটে গেল আমাদের। কৃষ্ণই বলল, পদ্মায় শরৎ কাটানোÑ এ তো ভাগ্যের ব্যাপার। আমরা ততক্ষণে পৌঁছে গেছি সুজানগরের কাছে। এবার নৌকা থেকে নামার পালা। মাঝি বিষ্ণুকে একটা ৫০০ টাকার নোট দিতেই সে বলল, টাকা বড় নয়Ñ যা পেয়েছি তাতেই সš‘ষ্ট। দু’নয়ন ভরে পদ্মায় বসে শরৎকাল দেখেছি এটা কী কম ভাগ্যের কথা! কথাগুলো শুনে কূলে ওঠার সময় কৃষ্ণ আমার হাতটা স্পর্শ করেÑ চলুন আপনাকে পাবনার বাসে উঠিয়ে দিই। বাসে ওঠার আগে বলল, এই নিন একটা কাগজ এখানে আমার মোবাইল নাম্বার লেখা আছে। এ শরতেই তো হবে বিশ্বকর্মা পূজা, গণেশ পূজা। তারপর তো কার্তিকের শুর“তে হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। তখন আসবেন আমাদের গাঁয়ে দেখবেন পূজা-পার্বণ। আর শুনবেন রয়ানী কীর্তন। সেই ক্ষণে দেব আনন্দ, ভ্রমণও হবে সার্থক। বললাম, এ দিনের কথা ভুলি কেমনে!---ডিনিউজ
খবর বিভাগঃ
দর্শনীয় স্থান
প্রতিবেদন
ফিচার
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়