Friday, September 6

‘পাল ওড়ায়ে দাও-ও মাঝি নাও ছাড়িয়া দাও’

এস আর এ হান্নান ॥ ‘পাল ওড়ায়ে দাও- ও মাঝি নাও ছাড়িয়া দাও’ চিরপরিচিত পল্লী প্রকৃতির এই গানের লিরিক এখনো মানুষের মুখে শোনা যায়। শোনা যায় পালের নৌকা ব্যবহারের নানান সংস্কৃতির কথাও। যদিও এখন আর আগেকার মতো পালের নৌকা চোখে পড়ে না। ক্রমেই কমে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐত্যিহ্যের ধারক বাহারি রঙের পালের নৌকা। অথচ একটা সময় ছিলো- স্রোতস্বীনি নদ-নদীতে মাঝি-মাল্লারা পালের নৌকার ওপর নির্ভর করেই উজানে পাড়ি দিতো। বিভিন্ন ধরণের জাল ফেলে ভাটিতে আসতো। জেলেদের জালে জড়াতো রূপালী ইলিশসহ বিভিন্ন ধরণের তরতাজা মাছ।

বিশেষ করে শরতের মেঘ-রৌদ্রের লুকোচুরিতে যখন; ভেসে বেড়াতো সাদা মেঘের ভেলা-তখন নদীতীরে আপন সৌন্ধর্য্য মেলে ধরতো অমলধবল কাঁশফুল। চিরন্তন বাংলার অপরূপ সাজে মোহিত-মুগ্ধ হতো প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। কিন্তু নানা কারণে ওলট-পালোট হচ্ছে যাচ্ছে প্রকৃতি। যার প্রভাব পড়ছে মানবজীবনে। 

নিকট অতীতেও মাঝি-মাল্লারা বাতাসে ভর করে পালতুলে দিয়ে নৌকা চালাতেন। এসব দৃশ্য একটা সময় হরহামেশা চোখে পড়তো। পল্লী প্রকৃতির চিরচেনা রূপের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলো পালতোলা নৌকা। সারি সারি পালের নৌকার দৃশ্য নদ-নদীতে ভীন্ন আবহ সৃস্টি করতো। অনেক দূর থেকে নজরে আসতো বাহারি রঙের পালের সারি। মঝিরা নৌকায় পালতুলে সারিবদ্ধভাবে উজানে আসতো। এরপর পাল খুলে নদ-নদীতে জাল ফেলে ভেসে যেতো ভাটীতে। জেলেদের জালে জড়াতো রূপালী ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। সারাদিন-সারারাত জেলেরা এভাবেই পালতুলে উজানে আসতো-আবার জাল ফেলে মাছ ধরতে ধরতে ভেসে যেতো ভাটীতে। কিন্তু নদ-নদীতে আগেকার মতো মাছ না পাওয়ায় জীবীকার তাগিদে পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছে তারা। ফলে গ্রাম-বাংলার অপরূপ প্রতিচ্ছবি পালের নৌকা বিলুপ্ত হতে চলেছে। 

পালের নৌকা শুধু মাছ ধরার জন্য ব্যবহৃত হতো না। এক সময় বিয়ে এবং বর-বউ আনা-নেওয়া করা হতো পালের নৌকাতেই। বাঙালি সংস্কৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বাঙালির সেইসব কৃষ্টিকালচার। সেসব গতিময়-গীতিময় ছন্দধারায় পতন ঘটিয়েছে ইঞ্জিন চালিত ট্রলার নৌকা। তবে এখনো মাগুরার মহম্মদপুরের মধুমতি নদীতে পালের নৌকার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। স্থানীয় নদী পাড়ের জেলেরা কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে জেগে নৌকায় পাল তুলে দিয়ে সারিবদ্ধভাবে মাছ ধরতে উজানে যাচ্ছে। জীবীকার তাগিদে এখনো তারা বাপ-দাদার এ পেশাকে আগলে রেখেছেন।---এস আর এ হান্নান(ডিনিউজ)

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়