লিবিয়ার সাবেক নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত সরকার বিরোধীদের লাশ সংরক্ষণকারী একটি হিমাগারের সন্ধান পাওয়া গেছে। ওই হিমাগারে ১৯৮০’র দশকে নিখোঁজ লেবাননের বিশিষ্ট আলেম ইমাম মুসা সাদরের লাশ রয়েছে কি-না তা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বিকৃত হয়ে যাওয়া লাশগুলোর একটির সঙ্গে সাদরের চেহারার দূরাগত মিল থাকায় এ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
ইরানের আরবি স্যাটেলাইট নিউজ চ্যানেল আল-আলম জানিয়েছে, সম্প্রতি রাজধানী ত্রিপোলির কেন্দ্রীয় হাসপাতালের হিমাগারে ১৯৮০’র দশকে নিহত ১৮ ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়। কিন্তু নিহতদের শরীরে প্রচণ্ড নির্যাতনের চিহ্ন থাকার পাশাপাশি প্রায় তিন দশক সময় পার হয়ে যাওয়ার কারণে এসব লাশ সনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ কারণে লাশগুলো সনাক্ত করার জন্য ডিএনএ টেস্ট করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত তিনজনের মরদেহ সনাক্ত করা গেছে এবং তাদের লাশ ত্রিপোলির শহীদ স্কয়ারে দাফন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওই তিন ব্যক্তি হলেন মোহাম্মাদ সাঈদ আত-তামজিনি, খলিফা ইব্রাহিম আল-হামাসি এবং জামাল মুহাম্মদ আল-মিসরাতি। ১৯৮৪ সালে গাদ্দাফির বাসভবন বাব আল-আজিজিয়ায় হামলা করার দায়ে এই তিন ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছিল।
এদিকে কোনো কোনো সূত্র জানিয়েছে, ১৯৮০’র দশকে লিবিয়া সফরে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া আলেম ইমাম মুসা সাদর ও তার দুই সঙ্গীর লাশ ওই হিমাগারে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্পর্কে বিশিষ্ট আরব বিশ্লেষক নাসের আদ-দায়িসি বলেছেন, গাদ্দাফির পতনের পর তার দফতর প্রধান আহমাদ রমজান জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, ইমাম মুসা সাদরকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তার লাশ কোথায় আছে তা রমজান জানাতে পারেননি। তবে ইমাম সাদরের লাশ সংরক্ষণ করার সম্ভাবনা কম।
গাদ্দাফি কেনো ৩০ বছর ধরে নিহত সরকার বিরোধীদের লাশ সংরক্ষণ করেছিলেন সে সম্পর্কে লিবিয়ার দৈনিক আল-মিসার পত্রিকার সম্পাদক বশির জাবিয়া বলেছেন, “গাদ্দাফির বহু কর্মকাণ্ড ছিল অস্বাভাবিক। এ কারণে এ কাজটি তিনি কেনো করেছিলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। কোনো মনস্তত্ত্ববিদ হয়তো এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন যে, তিনি কেনো নিহত কিছু বিরোধীর লাশ সংরক্ষণ করেছিলেন।”
ইমাম মুসা সাদর ও তার দুই সঙ্গীর লাশ ওই হিমাগারে থাকতে পারে কি-না সে সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে লিবিয়ার ওই সাংবাদিক বলেন, “আমার মনে হয় না তাঁর লাশ ওখানে ছিল। গাদ্দাফি এ কাজটি করবেন না। আমার মনে হয়, শহীদ মুসা সাদরের লাশ মাটিতে পুতে ফেলা হয়েছে।”
ইরানি বংশোদ্ভূত মুসা সাদর ছিলেন লেবাননের খুবই প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় নেতা। আমাল মুভমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা মুসা সাদর ১৯৭৮ সালের ৩১ আগস্ট লিবিয়া সফরের সময় রহস্যজনকভাবে অপহরণ ও নিখোঁজ হন।সফরের সময় তার সঙ্গে মোহাম্মাদ ইয়াকুব ও আব্বাস বদরুদ্দিন নামে দুই সঙ্গী ছিলেন এবং গাদ্দাফি সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের সাক্ষাতের কথা ছিল। নিখোঁজ হওয়ার পর লিবিয়া সরকার ঘোষণা করে যে, ইমাম মুসা সাদর ও তার সঙ্গীরা বিমান উঠে ইতালির রাজধানী রোমে গেছেন। কিন্তু, ইতালি সরকার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছিল-ওই বিমানে মুসা সাদর ও তার সঙ্গীদের খুঁজেই পাওয়া যায়নি।
সূত্র : রেডিও তেহরান
খবর বিভাগঃ
দেশের বাইরে
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়