Tuesday, September 3

দখল ও দূষণের কবলে মিরসরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী করের হাট বাজার

মিরসরাই(চট্টগ্রাম): মিরসরাইয়ের অন্যতম করেরহাট বাজার তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। অবৈধ স্থাপনা, অব্যবস্থাপনা, দখল, দুষণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে আগের সেই জৌলুস নেই করেরহাট বাজারে। একসময় এ বাজারের অনেক সুনাম থাকলেও এখন আর তা নেই। দীর্ঘদিন ধরে বাজার কমিটি না থাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগছেনা প্রায় দুইশত বছরের পুরনো এ বাজারে। বর্তমানে অভিভাবকহীন এ বাজারের বেহাল অবস্থা দেখার কেউ নেই।
জানা গেছে, মিরসরাইয়ের উত্তরাঞ্চলের মানুষ ছাড়াও পার্শবর্তী ফেনী, ছাগলনাইয়া, রামগড়, ফটিকছড়ি, কয়লা, হেঁয়াকো, বালুটিলা, সাবনের খীলসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন এ বাজারে বাজার করতে আসেন। সপ্তাহের রবিবার ও বুধবার বাজার বসে করেরহাটে।
করেরহাট বাজারের ব্যবসায়ী শেখ সেলিম ও রেজাউল করিম নোমান বলেন, করেরহাট বাজারে প্রায় চার শতাধিক ছোট-বড় ব্যবসায়ী রয়েছে। প্রতিবছর বাজার ইজারা দেয়া হলেও ন্যুনতম উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। যেখানে-সেখানে ময়লা আর্বজনার স্তুপ, নিয়ম-নিতির তোয়াক্কা না করে যেখানে-সেখানে বাজার বসা, যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে পরিবেশ দূষণ, ড্রেনগুলো ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নিস্কাশনের সুবিধা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এছাড়া সড়ক ঘেঁষে সওজের জায়গা দখল করে অবৈধ দোকানপাট নির্মানের কারনে প্রতিদিন করেরহাট-রামগড় সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে স্কুলের শিক্ষার্থীদের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে বাজারের কোন কমিটি না থাকায় প্রায় সময় চুরির ঘটনা ঘটছে। গত দেড় মাসে চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চুরি হয়েছে। তারা বলেন, বাজারের পশ্চিম পাশে একটি সরকারী খাস পুকুর রয়েছে। পুকুরটি ভরাট করে মাছ বাজার, কাঁচা তরকারীসহ কয়েকটি বাজার ওই স্থানে নেয় হয় তাহলে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হবেনা।
সরেজমিনে করেরহাট বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, যত্রতত্র দোকানপাট, সড়ক দখল করে সিএনজি ষ্ট্যান্ড, সড়কে কাঠের স্তুপসহ বিভিন্ন কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন দোকানের বাহিরে ফুটপাতে গড়ে উঠছে অসংখ্য টিনের দোকান। সবজি দোকানগুলো অনেকটা রাস্তার উপর।
এদিকে অবৈধ দখল উচ্ছেদের ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা আসলেও অজ্ঞাত কারণে এ সংক্রান্ত কোন কমিটি বা কার্যক্রম এখনও গৃহিত হয়নি।করেরহাট বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, কতিপয় প্রভাবশালীরা সরকারি খাস জায়গা দখল করে ঘর তুলে ভাড়া আদায় করছে। বাজারের দক্ষিণ দিক থেকে প্রবেশ পথ, রামগড় রোড সহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তার দু’পাশে যত্র তত্র ভাবে ট্রাক ,পিক আপ, সি.এন.জি দাঁড়িয়ে থাকে, ফলে একদিকে যেমন যানজট বাডছে তেমনি স্কুল, মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রীদের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মিরসরাইয়ের প্রাচীন বাজার হলেও বাজারে নেই কোন স্বাস্থ্য সম্মত গণশৌচাগার ব্যবস্থা। বাজারের বিভিন্ন স্পটে জমজমাট মাদক বিক্রি হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০০১ সালে সর্বশেষ বাজার কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দুই বছর মেয়াদী এ কমিটির মেয়াদ উর্ত্তীন্ন হওয়ার দীর্ঘ সময় পর তিন মাসের জন্য একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আহবায়ক কমিটির মেয়াদ প্রায় এক বছর শেষ হয়েছে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আহবায়ক কমিটির উদাসীনতার কারণে বাজার কমিটির নির্বাচন না হওয়ার অন্যতম কারণ বলছেন ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের জন্য ১১ লাখ টাকা দিয়ে বাজার ইজারা নেয় আবুল কালাম আজাদ মামুন নামের এক ব্যবসায়ী। তিনিও বাজার অব্যবস্থাপনার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে দুইবার বাজার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করি। কিন্তু কিছুদিন পর আবার সেই পুরোনা চেহারায় ফিরে পায় বাজারের অবস্থা।
বাজার পরিচালনা কমিটির আহবায়ক জানে আলম বলেন, আমি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের অনুরোধে বাজারের আহবায়কের দায়িত্ব নিয়েছি। তিন মাসের জন্য আহবায়ক কমিটির মেয়াদ এক বছরের বেশি সময হলেও কমিটি গঠন করা হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কমিটি গঠন করার ব্যাপারে চেয়ারম্যানকে একাধিকবার বলেছি। তিনি করবেন করছেন বলে এখনো কমিটি গঠন করেননি।
এ বিষয়ে করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বাজারে বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার কথা স্বীকার করে বলেন, করেরহাট বাজার ছোট হওয়াতে জায়গার সংকট রয়েছে। সে তুলনায় অনেক জিনিসের বাজার বসে এখানে। তবে খুব শীঘ্রই নির্বাচন দিয়ে বাজার কমিটির মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করা হবে।---ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়