Thursday, August 15

বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার ঘোষক

যদি এ বাংলার মাটিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হত,তাহলে বাংলাদেশ নামের স্বাধীন ভূখন্ড কল্পনা করা যেত না। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ইতিহাসের পঠভূমিকায় যে নামটি চীর স্মরণীয় ও উজ্জ্বল নত্রের মতো চির ভাস্বর হয়ে আছে তা হল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতি যখন পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর কবলে পড়ে তখনী তিনি জাতিকে শুনালেন মুক্তির অগ্নি বাণী। আগুন ঝরা ভাষন আপসহীন দৃঢ় মনোভাবের কারনে তিনি পরিনত হলেন বাংলার অবিসাংবাদিত নেতা। সাড়ে সাত কোটি বাঙালির হৃদয়ের মনিকৌঠায় স্থান করে নিয়ে তিনি হয়ে উঠলেন বঙ্গবন্ধু। আবহমান কাল ধরে বাঙালির স্বপ্নে লালিত স্বাধীন সার্বভৌম দেশ প্রতিষ্ঠা করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চির অম্লান হয়ে আছেন বাংলার ইতিহাসের স্বর্ণারে বাঙালী জাতির হৃদয়ে। ১৯২০ সালের ২৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামের ছায়া সুনিবিড় এক পরিবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর পিতার নাম- শেখ লুৎফুর রহমান, মাতার নাম- সায়রা খাতুন। তাঁর ডাক নাম ছিল খোঁকা। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় পাশ করে পিতার কর্মস্থল গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হন। ১৯৪২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে আসনে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। ছাত্র জীবনেই শেখ মুজিবুর রহমান সকল আন্দোলন সংগ্রামে, রাজনীতিতে বীরত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দাবী আদায়ের আন্দোলন করার জন্য তাঁকে জরিমানা করা হয়। জরিমানা প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে তাঁর ছাত্রত্ব খারিজ করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ছাত্র রাজনীতিক জীবনের শুরুতে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, শহীদ সোহারাওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষাণী নেতৃবৃন্দের অনুপ্রেরণা লাভ করেন। ১৯৫৯ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে শেখ মুজিবুর রহমান নবগঠিত আ’লীগ মুসলিমলীগ এর যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহন করেন। দেশের জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য বহুবার কারাবরণ করেছেন। ১৯৫২ সালে ভাষা সৈনিকদের উপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে কারাগারে অনশন চালিয়ে যান। ১৯৬৬সালে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে বাঙালী জাতির সঠিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে ৬দফা কর্মসূচী ঘোষণা করেন। আর এই ৬দফাকে বলা হয় ‘বাঙালী মুক্তির সনদ’। ১৯৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আ’লীগ নিংঙ্কুশ জয়লাভ করে। ১৬৯টি আসনের মধ্যে আ’লীগ পায় ১৬৭টি আসন। কিন্তু শাসক গোষ্ঠী বাঙালীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বিভিন্ন চক্রান্তে মেতে উঠে। এই চক্রান্তকারী পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর কাছ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে শেখ মুজিবুর রহমান শুনালেন বাংলার মুক্তির বাণী। ৭ই মার্চ ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার সমাবেশে তিনি বজ্র কন্ঠে ঘোষণা করেন
আপনাদের যা কিছু আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে
“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, 
এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম”
এ ভাষণের মাধ্যমে বাঙালী জাতি পায় বাংলাদেশ স্বাধীন করার মরণ পন বার্তা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া অব্যাহত রাখেন। ২৫শে মার্চ কাল রাতে বাঙালীদের উপর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়। গ্রেফতার করা হয় বাঙালীর প্রাণের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
গ্রেফতারের পূর্বে মধ্যরাতে অর্থ্যাৎ ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। পরে এ ঘোষণা পত্রই ২৭শে মার্চ যথাক্রমে চট্টগ্রাম আ’লীগ নেতা এম.এ.হান্নান ও মেজর জিয়া চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। এতে পরিস্কার প্রতীয়মান যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষক। এই স্বাধীন বাংলার একমাত্র স্বপ্নদ্রষ্ট্রাই হলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট সেনাবাহিনীর কিছু বিপদঘামী ঘাতক বাঙালির প্রাণের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই দিনটিকে ইতিহাসের কালো দিন বলে রচয়িতা করা হয়। ঘাতকের বুলেটের আঘাতে নিভে যায় বাংলার প্রাণ পুরুষের জীবন প্রদীপ। রক্তে ঝরে যায় বাংলার এই মাটি। ২০০৯ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তথ্য বের করে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণা করা হয় “জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষক”। বিভিন্ন দূরদর্শী চক্রান্তে দীর্ঘ ২১ বৎসর আওয়ামীলীগকে ক্ষমতাহীন অবস্থায় রাখা হয়। বিএনপি, জোট-জামায়াতের শাসনামলে রক্তে ঝরা আমাদের এই ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে বিকৃত করে ফেলে। এমন কী স্কুলের পাঠ্য বইয়ের প্রবন্ধে দেওয়া হয় স্বাধীনতার ঘোষক মেজর জিয়া। কোন টিভি মিডিয়াতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বলা হত না। আমরা নতুন প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাস বিকৃতকারীদের আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই। ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধে সংগঠন হিসেবে ভূমিকা রাখে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগ। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী -মুসলিমলীগ সংগঠনের জন্ম। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক পরে সুবিধাভোগী বিএনপি, জামায়তসহ আরো অনেক রাজনৈতিক সংগঠন জন্ম নেয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে বিএনপি, জামায়াতের কোন অবদান নেই। স্বাধীনতা ঘোষণার বিষয়ে নতুন প্রজন্ম ও জাতির কাছে আমার একটি প্রশ্ন- 
বিএনপি’র দাবী যদি হয় স্বাধীনতার ঘোষক মেজর জিয়া, তাহলে কেন? ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়। চট্টগ্রাম আওয়ামীলীগ নেতা এম.এ.হান্নান ও মেজর জিয়া বঙ্গবন্ধুর পে ২৭ শে মার্চ বেতার কেন্দ্রে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছেন। তাহলে ২৭ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস হলো না কেন?। এম.এ হান্নান সাহেবকে কেউ স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে দাবী করেনা কেন? আমার যতটুকু জানার মধ্যে বিএনপি (তাদের নেতা মেজর জিয়া) শাসক থাকা অবস্থায় স্বাধীনতার ঘোষক বলে নিজেকে দাবী করেন নাই। ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসে লিখা আছে অর্থাৎ “২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন”। এ জন্য ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে স্মরণ করা হয় মুক্তিযোদ্ধাদের। তাই সু-স্পষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষক। আ’লীগ নেতা এম.এ.হান্নান ও মেজর জিয়া শুধু স্বাধীনতা ঘোষণা পত্রের পাঠক ছিলেন। স্বাধীনতার ঘোষক শেখ মুজিবুর রহমান মেজর জিয়া নয়। উস্কাপিন্ডের মতো ক্ষণস্থায়ী নয় ধূমকেতুর হঠাৎ আর্বিভাব নয় বাংলার রাজনৈতিক গগণে ধ্রুব নক্ষত্রের মতোই কাল পরিক্রমায় বঙ্গবন্ধু চিরস্থায়ী আসন লাভ করেন। বাংলাদেশ মুক্তির সংগ্রামের বীজ বপণ করে বহু পরিচর্চার মাধ্যমে তাঁকে বৃ রূপান্তর করে সোনার ফসল ফলানো একমাত্র বঙ্গবন্ধুর ধারাই সম্ভব হয়েছিল। তাইতো বঙ্গবন্ধু সম্বন্ধে কবির অকুন্ঠ বাণী:
“আমরা বাঙালী যতদিন বেঁচে রইবো এ বাংলায়,
স্বাধীন বাংলা ডাকবে মুজিব আয় ঘরে ফিরে আয়”।
রুমান আহমদ
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক : কানাইঘাট লেখক ফোরাম
facebook/ ruman ahmed


শেয়ার করুন

1 comment:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়