Tuesday, August 27

ঐহীর যত কষ্ট...

ঢাকা : চোখে-মুখে মায়াবি ছাপের ছোট্ট শিশু ঐহীর বয়স ৮ বছরও পেরোয়নি। সেই ছোট্ট শিশুটি এখন পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় শিশুদের একজন। জীবনের কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে এখন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। গত ১৬ আগস্ট নিজেদের বাসায় বাবা-মায়ের লাশ ধরে চিৎকার করে কেঁদেছে ঐহী। বলেছে, আব্বু-আম্মু তোমরা কথা বল। কিন্তু তার বাবা-মা আর কথা বলেনি। আগের মতো তাকে আদর করেনি জড়িয়ে ধরে।

চঞ্চল প্রকৃতির ঐহী ছিল এসবি পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমানের বড় আদরের সন্তান। দুরন্ত শিশুটি ফ্ল্যাটের আশপাশের বাচ্চাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব, খেলাধুলায় মুগ্ধ থাকত। ১৭ আগস্ট সকালে ঘুম থেকে উঠেই ঘাতক বোন ঐশীর সঙ্গে বেরিয়ে গেল ঐহী। মা-বাবার চলে যাওয়া আর 'ঘাতক' বোনের নিষ্ঠুরতায় ঐহীর ঝকঝকে আকাশ যেন ঢেকে গেছে কালো মেঘে। বাবা-মার আদর-স্নেহ আর কোনোদিন তার ভাগ্যে জুটবে না। ঐহীর বাকি জীবন নিয়েও চিন্তিত তার স্বজনরা। তারা বলেছেন, চঞ্চল ঐহী এখন নির্বাক। বাবা-মা নেই। নেই তার আদরের বোনটিও। যে বোনটি তার বাবা-মায়ের ঘাতক হয়ে এখন কারাগারে বন্দী। বাবা-মাকে হারিয়ে ঐহী এখন তার খালা সুবর্ণার উত্তরার বাসায় রয়েছে।

ঐহীর মামা রবিউল আলম জানান, প্রতিদিনই বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুমাত ছোট ঐহী। বাবা-মা পরম আদর-স্নেহে তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে গল্প বলে ঘুম পাড়াত। শিশু ঐহীর ছোটবেলা থেকেই তার একমাত্র খালা সুবর্ণা তার দেখভাল করত। গত বুধবার সন্ধ্যায় স্বপ্না তাকে নিয়ে ঘুরেও এসেছিল। রাত ১১টার দিকে বাবা মাহফুজুর রহমান অফিস শেষে যখন বাসায় ফিরে রাতের খাওয়া শেষে ঘুমন্ত ঐহীর মাথায় হাত বুলিয়ে তিনিও তার রুমে ঘুমিয়ে পড়েন। ঐহীর শূন্যতা পূরণের জন্য তার খালার কাছে তাকে রাখা হতে পারে বলে কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে। সকালে বোন ঐশীকে বাবা-মার কথা জিজ্ঞাস করলে সে জানায়, মা-বাবার সঙ্গে রাগ করে রাজশাহী চলে গেছে। আর বাবা-মাকে আনতে গিয়েছেন। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে ঐহীকে নিয়ে বোন ঐশী খালার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। সারা দিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে রাতে একটি রিকশায় করে বাসায় পাঠিয়ে দেয় ঐশী। ঐহীর মামা রায়হান জানান, বাবা-মাকে হারিয়ে সারাক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ঐহী। কারও সঙ্গে কোনো কথা বলছে না। মায়াবী শিশুটির মুখের দিকে তাকিয়ে অনেকের চোখেই পানি ঝরছে। আত্দীয়স্বজনসহ বিভিন্ন লোকজন তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করছে। কিন্তু সারাক্ষণই যেন বাবা-মাকে খুঁজে ফিরছে ঐহী। সে সবার কাছে জানতে চাচ্ছে আসলে কী ঘটেছে। কিন্তু তার প্রশ্নের জবাব দিতে পারছে না কেউই।---ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়