ঢাকা : তারেক রহমানের পর সজীব ওয়াজেদ জয় প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসায় সন্তানমুখী রাজনীতি নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। জিয়াউর রহমান-বেগম জিয়ার পুত্র বলে তারেক রহমান কেন বিএনপির নিয়ন্তা হবেন? আর শেখ হাসিনার পুত্র বলে জয়ই বা কেন আওয়ামী লীগের অলিখিত নীতিনির্ধারকের ভূমিকায় থাকবেন? দুই দলের প্রভাবশালী নেতারা ড্রইংরুমে এনিয়ে ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে নানা প্রশ্ন তুলছেন। সুশীল সমাজের অনেকেও আকারে ইঙ্গিতে বিষয়টিকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন। কিন্তু বিস্ময়কর হলো, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সন্তানমুখী রাজনীতি প্রবলভাবেই বিরাজমান। আর যারা তারেক রহমান-সজীব ওয়াজেদ জয়ের রাজনীতিতে আসাকে ভেতরে ভেতরে নিরুৎসাহিত করতে চাইছেন তাদের অনেকেও সচেতনভাবে নিজের ছেলে মেয়েদের রাজনীতিতে সামনের কাতারে নিয়ে এসেছেন।
অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর শূন্য হওয়া আসনে বিএনপির মনোনয়ন পান পুত্র মাহী বি চৌধুরী। মনোনয়ন প্রত্যাশী সক্রিয় অনেক নেতার পরিবর্তে রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক না থাকা মাহী বি চৌধুরীর মনোনয়ন পাওয়ার পেছনে মূল কারণই ছিল পিতা বি চৌধুরী। পরে বি চৌধুরী বিকল্পধারা গঠন করলে মাহী বি চৌধুরী দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব হন। কার্যত তিনিই দলটির অন্যতম নীতিনির্ধারক।
পিতা নাজিউর রহমান মঞ্জুর পরিচয়েই রাজনীতিতে জায়গা করে নিয়েছেন ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ। নাজিউর রহমান মঞ্জুর মৃত্যুর পর রাতারাতি দলের চেয়ারম্যানের পদ পান পার্থ। জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতার কারণে ভোলা-১ আসনে বিএনপি আসনটি পার্থকে ছেড়ে দিতে বাধ্যও হয়। দলের প্রবীণ নেতা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন শাজাহানকে এজন্য মনোনয়ন বঞ্চিত হতে হয়। ভোলা-২ আসনে তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ¦ী ছিলেন আশিকুর রহমান শান্ত। শান্ত নাজিউর রহমান মঞ্জুর ছোট ছেলে। কখনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। শুধুমাত্র বাবার পরিচয়ের কারণেই শান্তকে আসন ছেড়ে দিয়েছিল বিএনপি। অথচ বিএনপির সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিম ওই আসনে শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন। ১/১১’র কারণে কারাগারে থাকা হাফিজ ইব্রাহিম তাঁর স্ত্রী মাফরুজা সুলতানাকে প্রার্থী করতে চাইলেও বিএনপি তা বাতিল করে দেয় নাজিউর রহমান মঞ্জুর ছেলের কারণে।
সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হারুনার রশিদ খান মুন্নুর মেয়ে আফরোজা খান রিতা এখন মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি। বাবার পরিচয়েই মূলত রাজনীতিতে আসেন তিনি। গত নির্বাচনে বিএনপির হয়ে মানিকগঞ্জ সদর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেন। বিএনপির সাবেক শিল্প মন্ত্রী শামসুল ইসলাম খানের ছেলে মাঈনুল ইসলাম খান শান্ত এখন মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। বিগত বিএনপি শাসনামলের শেষ দিকে সাংসদ পিতার প্রয়াণের পর উপ-নির্বাচনে কিছুদিনের জন্য এমপিও হয়েছিলেন। পিতার কিছু কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া ছাড়া শান্তও কখনো রাজনীতিতে ছিলেন না।
নির্বাচনী এলাকায় বরাবরই অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। সারাজীবন মাঠের রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু তারা ছেলেকে কখনো রাজনীতির মাঠে দেখা যায়নি। কিন্তু রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর কিশোরগঞ্জে আবদুল হামিদের শূন্য আসনে ঠিকই মনোনয়ন দেওয়া হয় তাঁর ছেলে রেজোয়ান আহমেদ তৌফিককে। আর এর প্রতিবাদে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা বিদ্রোহী প্রার্থীও হয়েছিলেন।
সিরাজগঞ্জের কাজীপাড়া থেকে বরাবরই নির্বাচনে অংশ নেন আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। কিন্তু ঠিকই তাঁর ছেলে তানভির শাকিল জয়কে মনোনয়ন দিতে বাধ্য হয়েছিল দল। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে একাধিকবার আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করেছেন প্রয়াত আবুল হাসনাত। সর্বশেষ নির্বাচনে ওই আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হন তাঁর ছেলে কায়সার হাসনাত। আবুল হাসনাতের ছেলেকে মনোনয়ন দেওয়ায় বঞ্চিত হন জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক জেলা চেয়ারম্যান বাহাউল হক।
গাইবান্ধার একটি আসন থেকে ২০০১ সালে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন সাবেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মোত্তালিব আকন্দ। মেয়াদপূর্তির আগে হঠাৎ মৃত্যু হয় তাঁর। উপ-নির্বাচনে বিএনপি মনোনয়ন দেয় মোত্তালিব আকন্দের ছেলে শামীম কায়সার লিংকনকে। বঞ্চিত হয় দলের অনেক পুরনো নেতা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দীন সরকারের ছেলে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য। কখনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃত্ত না থাকলেও তাঁর এই পদ লাভ মূলত পিতার কারণেই বলে বিএনপিতে আলোচনা আছে। ২০০১ সালে পিতা এম সাইফুর রহমানের ছেড়ে দেওয়া আসনে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় এমন নাসের রহমানের। তিনি এখন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। রংপুর-১ আসনে সাবেক সাংসদ মশিউর রহমান রাঙ্গা গতবার মনোনয়ন বঞ্চিত হন হোসেন মকবুল শাহরিয়ারের কারণে। তিনি জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের ভাতিজা। রংপুর-৫ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ এইচ এন আশিকুর রহমানের ছেলে রেশাদ রহমান আগামী নির্বাচনে ওই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বিএনপির সাবেক সাংসদ আব্দুল আলীমের ছেলে ফয়সাল আলীম জয়পুরহাট-২ আসন থেকে নির্বচন করতে চান। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি ও সাবেক সাংসদ তবিবর রহমান সরদারের ছেলে মুজিবউদ্দৌলা কনক যশোর-১ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। টাঙ্গাইল-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ খন্দকার আসাদুজ্জামানের ছেলেকে এম জামান রোমেলও আগামীতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন। টাঙ্গাইল-৬ আসনে গতবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করেন সাবেক সাংসদ হাজী মকবুল হোসেনের ছেলে আহসানুল ইসলাম টিটু। আগামীতে নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে তাঁর। জামালপুর-৪ আসনের আওয়ামী লীগ সাংসদ মো. মুরাদ হাসানও রাজনীতিতে এসেছেন পিতার পরিচয়ে। তার বাবা এক সময় আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। শেরপুর-৩ আসনের সাবেক বিএনপি সাংসদ মাহমুদুল হক রুবেলও আচমকা রাজনীতিতে আসেন বাবার মৃত্যুর পরে। ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাও) আসনের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আলতাব হোসেন গোলন্দাজের ছেলে ও গফরগাঁও উপজেলা চেয়ারম্যান বাবেলও আগামীতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রয়াত পিতার পরিচয়েই তিনি গত উপজেলা নির্বাচনে ভাল ফল করেন বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়।
কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের বর্তমান সাংসদ নাজমুল হাসান পাপনের রাজনীতিতে অভিষেক হয় মনোনয়ন পাওয়ার মধ্য দিয়ে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের ছেড়ে দেওয়া আসনে তিনি নির্বাচিত হন। মানিকগঞ্জ-৩ আওয়ামী লীগ সাংসদ জাহিদ মালেক স্বপনের পিতা কর্নেল (অব.) আবদুল মালেক এরশাদের মন্ত্রী ও ঢাকার মেয়র ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনও করেছিলেন। ঢাকা -৬ সাংসদ মিজানুর রহমান খান দীপুর পিতা প্রয়াত নজরুল ইসলাম খান বাদল মুন্সীগঞ্জে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে একাধিকবার নির্বাচন করেছেন। দীপু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে এই পরিচয়ই মুখ্য ছিল বলে জানা গেছে। ঢাকা-১৯ আসনের সাংসদ তৌহিদ জং মুরাদের বাবা আনোয়ার জং ওই আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ ছিলেন। প্রয়াত পিতার পরিচয়ে মুরাদ জং ২০০১ সালে প্রথম মনোনয়ন পান। গাজীপুর-২ আসনের সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেলও আচমকা রাজনীতিতে আসেন পিতা আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ডের পরে।
ফরিদপুর-২ কে এম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে শামা ওবায়েদ পিতার মৃত্যুর পরে রাজনীতিতে আসেন এবং বিএনপির মনোনয়ন পান। চট্টগ্রাম-১২ আসনে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর মৃত্যুর পরে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় তার ছেলে সাইফুজ্জামান জাভেদের। প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে নাহিন রাজ্জাকও রাজনীতিতে এসেছেন দলের মনোনয়ন নিয়ে। সাবেক সাংসদ প্রয়াত মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মাহফুজুর রহমান মিতাও চট্টগ্রাম-১৬ আসলে আগামীতে দলের মনোনয়ন প্রার্থী।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জাকারিয়া তাহের সুমনের রাজনীতিতে হাতেখড়ি উপ-নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। তাঁর পিতা শিল্পপতি আবু তাহের সাংসদ থাকা অবস্থায় মারা যান। এরপর কুমিল্লা-৮ আসন থেকে সুমন উপ-নির্বাচন করে জয়ী হন। গত নির্বাচনে পরাজিত হন।
এভাবে আওয়ামী লীগ, বিএনপিতে সন্তানমুখী রাজনীতি যেন অনিবার্য হয়ে উঠেছে।-ঢাকা টাইমস
অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর শূন্য হওয়া আসনে বিএনপির মনোনয়ন পান পুত্র মাহী বি চৌধুরী। মনোনয়ন প্রত্যাশী সক্রিয় অনেক নেতার পরিবর্তে রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক না থাকা মাহী বি চৌধুরীর মনোনয়ন পাওয়ার পেছনে মূল কারণই ছিল পিতা বি চৌধুরী। পরে বি চৌধুরী বিকল্পধারা গঠন করলে মাহী বি চৌধুরী দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব হন। কার্যত তিনিই দলটির অন্যতম নীতিনির্ধারক।
পিতা নাজিউর রহমান মঞ্জুর পরিচয়েই রাজনীতিতে জায়গা করে নিয়েছেন ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ। নাজিউর রহমান মঞ্জুর মৃত্যুর পর রাতারাতি দলের চেয়ারম্যানের পদ পান পার্থ। জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতার কারণে ভোলা-১ আসনে বিএনপি আসনটি পার্থকে ছেড়ে দিতে বাধ্যও হয়। দলের প্রবীণ নেতা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন শাজাহানকে এজন্য মনোনয়ন বঞ্চিত হতে হয়। ভোলা-২ আসনে তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ¦ী ছিলেন আশিকুর রহমান শান্ত। শান্ত নাজিউর রহমান মঞ্জুর ছোট ছেলে। কখনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। শুধুমাত্র বাবার পরিচয়ের কারণেই শান্তকে আসন ছেড়ে দিয়েছিল বিএনপি। অথচ বিএনপির সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিম ওই আসনে শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন। ১/১১’র কারণে কারাগারে থাকা হাফিজ ইব্রাহিম তাঁর স্ত্রী মাফরুজা সুলতানাকে প্রার্থী করতে চাইলেও বিএনপি তা বাতিল করে দেয় নাজিউর রহমান মঞ্জুর ছেলের কারণে।
সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হারুনার রশিদ খান মুন্নুর মেয়ে আফরোজা খান রিতা এখন মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি। বাবার পরিচয়েই মূলত রাজনীতিতে আসেন তিনি। গত নির্বাচনে বিএনপির হয়ে মানিকগঞ্জ সদর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেন। বিএনপির সাবেক শিল্প মন্ত্রী শামসুল ইসলাম খানের ছেলে মাঈনুল ইসলাম খান শান্ত এখন মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। বিগত বিএনপি শাসনামলের শেষ দিকে সাংসদ পিতার প্রয়াণের পর উপ-নির্বাচনে কিছুদিনের জন্য এমপিও হয়েছিলেন। পিতার কিছু কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া ছাড়া শান্তও কখনো রাজনীতিতে ছিলেন না।
নির্বাচনী এলাকায় বরাবরই অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। সারাজীবন মাঠের রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু তারা ছেলেকে কখনো রাজনীতির মাঠে দেখা যায়নি। কিন্তু রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর কিশোরগঞ্জে আবদুল হামিদের শূন্য আসনে ঠিকই মনোনয়ন দেওয়া হয় তাঁর ছেলে রেজোয়ান আহমেদ তৌফিককে। আর এর প্রতিবাদে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা বিদ্রোহী প্রার্থীও হয়েছিলেন।
সিরাজগঞ্জের কাজীপাড়া থেকে বরাবরই নির্বাচনে অংশ নেন আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। কিন্তু ঠিকই তাঁর ছেলে তানভির শাকিল জয়কে মনোনয়ন দিতে বাধ্য হয়েছিল দল। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে একাধিকবার আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করেছেন প্রয়াত আবুল হাসনাত। সর্বশেষ নির্বাচনে ওই আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হন তাঁর ছেলে কায়সার হাসনাত। আবুল হাসনাতের ছেলেকে মনোনয়ন দেওয়ায় বঞ্চিত হন জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক জেলা চেয়ারম্যান বাহাউল হক।
গাইবান্ধার একটি আসন থেকে ২০০১ সালে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন সাবেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মোত্তালিব আকন্দ। মেয়াদপূর্তির আগে হঠাৎ মৃত্যু হয় তাঁর। উপ-নির্বাচনে বিএনপি মনোনয়ন দেয় মোত্তালিব আকন্দের ছেলে শামীম কায়সার লিংকনকে। বঞ্চিত হয় দলের অনেক পুরনো নেতা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দীন সরকারের ছেলে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য। কখনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃত্ত না থাকলেও তাঁর এই পদ লাভ মূলত পিতার কারণেই বলে বিএনপিতে আলোচনা আছে। ২০০১ সালে পিতা এম সাইফুর রহমানের ছেড়ে দেওয়া আসনে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় এমন নাসের রহমানের। তিনি এখন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। রংপুর-১ আসনে সাবেক সাংসদ মশিউর রহমান রাঙ্গা গতবার মনোনয়ন বঞ্চিত হন হোসেন মকবুল শাহরিয়ারের কারণে। তিনি জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের ভাতিজা। রংপুর-৫ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ এইচ এন আশিকুর রহমানের ছেলে রেশাদ রহমান আগামী নির্বাচনে ওই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বিএনপির সাবেক সাংসদ আব্দুল আলীমের ছেলে ফয়সাল আলীম জয়পুরহাট-২ আসন থেকে নির্বচন করতে চান। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি ও সাবেক সাংসদ তবিবর রহমান সরদারের ছেলে মুজিবউদ্দৌলা কনক যশোর-১ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। টাঙ্গাইল-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ খন্দকার আসাদুজ্জামানের ছেলেকে এম জামান রোমেলও আগামীতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন। টাঙ্গাইল-৬ আসনে গতবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করেন সাবেক সাংসদ হাজী মকবুল হোসেনের ছেলে আহসানুল ইসলাম টিটু। আগামীতে নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে তাঁর। জামালপুর-৪ আসনের আওয়ামী লীগ সাংসদ মো. মুরাদ হাসানও রাজনীতিতে এসেছেন পিতার পরিচয়ে। তার বাবা এক সময় আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। শেরপুর-৩ আসনের সাবেক বিএনপি সাংসদ মাহমুদুল হক রুবেলও আচমকা রাজনীতিতে আসেন বাবার মৃত্যুর পরে। ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাও) আসনের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আলতাব হোসেন গোলন্দাজের ছেলে ও গফরগাঁও উপজেলা চেয়ারম্যান বাবেলও আগামীতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রয়াত পিতার পরিচয়েই তিনি গত উপজেলা নির্বাচনে ভাল ফল করেন বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়।
কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের বর্তমান সাংসদ নাজমুল হাসান পাপনের রাজনীতিতে অভিষেক হয় মনোনয়ন পাওয়ার মধ্য দিয়ে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের ছেড়ে দেওয়া আসনে তিনি নির্বাচিত হন। মানিকগঞ্জ-৩ আওয়ামী লীগ সাংসদ জাহিদ মালেক স্বপনের পিতা কর্নেল (অব.) আবদুল মালেক এরশাদের মন্ত্রী ও ঢাকার মেয়র ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনও করেছিলেন। ঢাকা -৬ সাংসদ মিজানুর রহমান খান দীপুর পিতা প্রয়াত নজরুল ইসলাম খান বাদল মুন্সীগঞ্জে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে একাধিকবার নির্বাচন করেছেন। দীপু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে এই পরিচয়ই মুখ্য ছিল বলে জানা গেছে। ঢাকা-১৯ আসনের সাংসদ তৌহিদ জং মুরাদের বাবা আনোয়ার জং ওই আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ ছিলেন। প্রয়াত পিতার পরিচয়ে মুরাদ জং ২০০১ সালে প্রথম মনোনয়ন পান। গাজীপুর-২ আসনের সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেলও আচমকা রাজনীতিতে আসেন পিতা আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ডের পরে।
ফরিদপুর-২ কে এম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে শামা ওবায়েদ পিতার মৃত্যুর পরে রাজনীতিতে আসেন এবং বিএনপির মনোনয়ন পান। চট্টগ্রাম-১২ আসনে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর মৃত্যুর পরে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় তার ছেলে সাইফুজ্জামান জাভেদের। প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে নাহিন রাজ্জাকও রাজনীতিতে এসেছেন দলের মনোনয়ন নিয়ে। সাবেক সাংসদ প্রয়াত মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মাহফুজুর রহমান মিতাও চট্টগ্রাম-১৬ আসলে আগামীতে দলের মনোনয়ন প্রার্থী।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জাকারিয়া তাহের সুমনের রাজনীতিতে হাতেখড়ি উপ-নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। তাঁর পিতা শিল্পপতি আবু তাহের সাংসদ থাকা অবস্থায় মারা যান। এরপর কুমিল্লা-৮ আসন থেকে সুমন উপ-নির্বাচন করে জয়ী হন। গত নির্বাচনে পরাজিত হন।
এভাবে আওয়ামী লীগ, বিএনপিতে সন্তানমুখী রাজনীতি যেন অনিবার্য হয়ে উঠেছে।-ঢাকা টাইমস
খবর বিভাগঃ
রাজনীতি
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়