Wednesday, August 14

‘ম্যাডাম চাইলে প্রার্থী হবো’

:: এম ইদ্রিস আলী ::
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ (ওসমানীনগর-বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ) আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদির লুনা।
‘ম্যাডাম চাইলে প্রার্থী হবো’
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার তাহসিনা রুশদির লুনা একান্ত সাক্ষাৎকারে পরিবর্তন ডটকমকে বলেছেন,“নমিনেশন দাখিলের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত স্বামীর ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকবো। যদি তিনি না আসেন এবং ম্যাডাম (বেগম খালেদা জিয়া) যদি চান তাহলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (যদি অনুষ্ঠিত হয়) অংশ নিতে আমার আপত্তি নেই।”
নির্বাচনে প্রার্থী হলে তার চাকরি সে ক্ষেত্রে কোনো বাধা হবে না বলেও দাবি করেন লুনা। নির্বাচনে প্রার্থী হলে চাকরি কোন বাধা হবে কী না তাহসিনা রুশদির লুনা বলেন,“প্রতিষ্ঠানটি একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। উক্ত প্রতিষ্ঠানের আইন অনুযায়ী নমিনেশন দাখিলের এক দিন পূর্বে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে নমিনেশন দাখিল করতে আইনি জটিলতা নেই।”
বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার চ্যানেল আই-লন্ডনের স্ট্রেট ডায়ালগ অনুষ্ঠানের লাইভ প্রোগ্রামে ইলিয়াস আলীর ছোট ভাই দাবি করেছিলেন, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী এখনো জীবিত আছেন। কলকাতার দমদমের কাছাকাছি কোনো এক কারাগারে বন্দি আছেন তিনি।
এ খবর প্রচারিত হওয়াতে সিলেটে ইলিয়াস অনুসারীরা নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ আসন থেকে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনার প্রার্থী হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা নিয়েও সরগরম পুরো সিলেট।
তাহসিনা রুশদির লুনা পরিবর্তন ডটকমকে বলেন,“যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় তাহলে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি ইলিয়াস আলীর অপেক্ষা করবেন। এতে কোন কারণে যদি ইলিয়াস না ফিরেন তাহলে নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যদি আমাকে নমিনেশন দাখিলের অনুমতি দেন তাহলে আমি নমিনেশন দাখিল করবো। যদি বিএনপি কিংবা বিএনপির সাথে অন্য কোন দলে জোট হয় তাহলে এই আসন থেকে ইলিয়াস আলীর পরিবারের কাউকে নমিনেশন দেয়া হবে কীনা এমন প্রশ্নের জবাবে লুনা বলেন,“জোটের শরীক অন্য কেউ এ আসন থেকে নমিনেশন পাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।”
প্রবল আত্নবিশ্বাসী লুনা বারবারই বলেন "ইলিয়াস আমাদের মাঝে আবারও বীরের বেশে ফিরে আসবে। লাখ লাখ মানুষের আশীর্বাদ ও ভালোবাসা বিফলে যাবে না।"
লুনা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী দলকে সু-সংগঠিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন,“আপনারা মনোবল হারাবেন না, ধৈর্য ও শৃঙ্খলার সাথে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করে যান। আজ নয় কাল একদিন আপনাদের প্রিয় নেতা সকলের মাঝে আবারও ফিরবেন।”
কখন ছেলে ফিরে আসবে এখনও পথ চেয়ে আছে নিখোঁজ ইলিয়াসের গর্ভধারিনী মা সূর্যবান বিবি। তিনি প্রায়ই স্বপ্নে দেখেন তার মানিককে। তার অগাধ বিশ্বাস প্রিয় ছেলে ইলিয়াস না ফিরা পর্যন্ত তার মৃত্যু হবেনা।
অন্যদিকে বাবা ইলিয়াসকে অক্ষত অবস্থায় ফিরত চেয়ে  ছোট্ট শিশু সাইয়ারা নাওয়াল। বাবাকে ফেরত চেয়ে  প্রথমেই সে  চিঠি লিখেছিল বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পরাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের কাছে, হিলারি ক্লিনটন তার বাবাকে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানালেও সেই হিলারি ক্লিনটনের অনুরোধ আজও উপেক্ষিত। এরপর নিজের জন্মদিনে বাবাকে উপহার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীরও কছে সাইয়ারা নাওয়াল একটি চিঠি দিয়েছিল।
খুদে এ  শিশুটির পিতাকে  ফিরিয়ে দিতে উভয়ই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন,কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, আজও অবধি এ শিশুটির বাবাকে ফিরিয়ে দিয়ে নিজেদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা  করতে পারেননি।
অবশেষে সাইয়ারা নাওয়াল একটি চিঠি দেশের ১৬ কোটি মানুষের কাছে। এর পরও পায়নি তার প্রিয় বাবাকে। তাই সাইয়্যারা নাওয়াল এখন আর চিঠি লিখে না। লোকজন আসলে সকলের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
এলাকাবাসী মনে করে, তাদের প্রিয় নেতা ইলিয়াস আলী জীবিত আছেন। তারা আশা করছেন, ইলিয়াস আলী অক্ষত অবস্থায় তাদের মাঝে আবার ফিরে আসবেন। আবার ইলিয়াস আলীর শূন্যতা পূরণে তার স্ত্রী আগামীতে রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তা তাদের জন্য আশাপ্রদ খবরও বটে।
ওসমানীনগর থানা বিএনপির সভাপতি সভাপতি সৈয়দ মোতাহির আলী, বিশ্বনাথ থানা বিএনপির সভাপতি কবির হোসেন দলা মিয়া ও বালাগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদা জায়গীরদার পরিবর্তন ডটকমকে বলেন,"ইলিয়াস আলী যেন আমাদের মাঝে ফিরে আসেন আমরা মহান আল্লাহর কাছে সেই দোয়াই করছি।" বেগম ইলিয়াসের প্রার্থিতার বিষয়টি বিশ্বনাথ বালাগঞ্জ তথা সিলেটের রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল  গাড়িচালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ইলিয়াস আলী। তাকে ছাড়াই তিনটি বিষন্ন  ঈদ গেছে সন্তান, স্ত্রী আর তার মা-ভাইয়ের। এই প্রতীক্ষা কবে শেষ হবে কেউ জানে না। নিরানন্দ ঈদ কেটেছে তাদের প্রিয় মানুষটি ছাড়াই। এখনো ছেলের জন্য মা সূর্যবান বিবি ও স্বামীর জন্য তাহসিনা রুশদির লুনা প্রতীক্ষার প্রহর গুণছেন।--পরিবর্তন


শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়