Sunday, August 4

আওয়ামী লীগকে জয়ী করতেই এসেছি: জয়

ঢাকা: আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জয়ী করতেই দেশে এসেছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে দলের হয়ে কাজ করতেই দেশে এসেছি। আমার চিন্তা এখন একটাই দলকে জেতাতে হবে। যদিও নির্বাচনের আগে ছয় মাস রয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের জন্য ছয় মাসই যথেষ্ঠ।’ বৃহস্পতিবার দেশের বেসরকারি একটি টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। রাজনীতিতে আসছেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে সজীব ওয়াজেদ হেসে দিয়ে বলেন, ‘সামনে নির্বাচন। আমি দলের হয়ে নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের জন্য দেশে এসেছি। তবে রাজনীতিতে আসার ইচ্ছে নেই। আসলে তো আরো আগেই আসতে পারতাম।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তরুণদের মধ্যে দলের হয়ে প্রচার-প্রচারণার জন্য আমি চেষ্টা করছি।’ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে গ্রেনেড হামলার কথা উল্লেখ করে জয় বলেন, ‘ওই ঘটনার পর আমার জেদ উঠেছিল আমি আমার দলকে রক্ষা করব। আমার দেশকে রক্ষা করব। এখন আমার চিন্তা হল আমার দলকে নির্বাচনে জেতাতে হবে। দলের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার সেটা মোকাবেলার জন্য এসেছি। আশা করি এটা আমি পারব। নির্বাচনে আগে ছয় মাস আছে। আমি মনে করি যথেষ্ঠ সময়।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণায় আমি বিশেষ ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছি। দল যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামে তবে আওয়ামী লীগকে হারানো সহজ হবে না।’ আগামীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তার ব্যাখ্যা দিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে চালানো দুটি জরিপের ভিত্তিতেই আমি বলেছি আগামীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা আসবে। জরিপগুলো বৈজ্ঞানিক নিয়মেই করা হয়েছে। বাইরের কোম্পানি দিয়ে করিয়েছি। জরিপে বেশির ভাগ জায়গায় বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়ে আছে। কিন্তু বিরোধীদল আমার বক্তব্যকে ঘোরানোর চেষ্টা করছে।’ তারেক রহমানের সঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জয়ের তুলনার বিষয়ে জানতে চাইলে জয় বলেন, ‘সেটার প্রমাণ তো আপনারা পেয়ে গেছেন। গত সাড়ে চার বছরে আমি কী করেছি। আর তারেক রহমানের মা খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে তারেক রহমান কী করেছে। হাওয়া ভবন খুলেছে। খাম্বা লিমিটেড নিয়ে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু আমি কী এরকম কিছু করেছি? বাংলাদেশের কোনো ব্যবসায়ী বলতে পারবে না জয় কারো কাছে চাঁদা চেয়েছে। আমরা সব সময় শিক্ষা নিয়ে ছিলাম। দেশের মানুষের টাকা লুটপাট করে খাওয়ার কোনো প্রয়োজন আমাদের নেই।’ বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সময়ে গত সাড়ে চার বছরে যত নির্বাচন হয়েছে সবগুলো নিরপেক্ষ হয়েছে। এখানে কেউ কোনো কথা তুলতে পারেনি। আওয়ামী লীগ কোনোদিন নির্বাচনে কারচুপি করেনি। আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে কাজ করে।’ তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বলা হয়েছে জাতীয় ইস্যু কাজ করেছে। হ্যাঁ, কিছুটা প্রভাব হয়তো পড়েছে। কিন্তুআমি মনে করি স্থানীয় বিষয়গুলো নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে। তবে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন বেশি। নৌকার মার্কার আলাদা একটি ইমেজ আছে।’ আগামী নির্বাচনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীপুত্র বলেন, ‘নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। কোনো সরকারের অধীনে নয়। বিষয়টি হল ওই সময় দেশ কে চালাবে। আমরা বিরোধীদলকে প্রস্তাব করেছিলাম আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করি কোন ধরনের সরকার চান। কিন্তু তারা আলোচনায় আসেননি। অনির্বাচিত সরকারে অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। আমরা দেখেছি কী ঘটেছে। ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক থাকা অবস্থায় কী সুন্দর নির্বাচন হতে চলছিল। ২০০৬ সালে সাংবিধানিক ছয়টি ধাপ পেরিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টা হয়েছিলেন। এক কোটি চল্লিশ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করে নির্বাচন দিতে চেয়েছিল। ওই সুযোগ সামরিক সরকার ক্ষমতায় এসেছিল।’ সেই সময় ওই সরকারকে প্রাথমিকভাবে সমর্থন দিয়েছিলেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম তারা নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে পারবে।’ বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সমঝোতার কথা বলা হচ্ছে। আসলে এ ধরনের কিছু হচ্ছে কি না? নাকি দুদলই অনঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে?-জবাবে জয় বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নয় বিএনপি অনঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারা সরকারের সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। বিএনপি রাজপথে নেমে বিশৃঙ্খলা করতে চাই। যে প্রস্তাবই দেয়া হোক না কেন তারা তা মানবে না।’ বিএনপি মানুষের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চায় উল্লেখ করে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘বিএনপি প্রথম দিকে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কথা বললেও তারা কিন্তু সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।’ বিএনপি বলছে ক্ষমতায় গেলে নতুন ধারার সরকার ব্যবস্থা চালু করবে বলে বলা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের কোনো স্লোগান ঠিক হয়েছে কি না? জবাবে জয় বলেন, ‘আমাদের স্লোগান এখনও ফাইনাল হয়নি। আমাদের মেইন থিম হচ্ছে আমরা এগিয়ে থাকতে চাই। পিছিয়ে থাকতে চাই না। সাবেক বিএনপি সরকারের সময়ে যে পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে, দশ ট্রাক অস্ত্র আটক, বিরোধীদলীয় নেত্রীর ছেলে আমার মায়ের ওপর যে হামলা চালিয়ে ছিল এগুলো সবই মানুষ দেখেছে। তবে আমরা অনেক দূর এসেছি। তুলনা করেন কোথায় থেকে কোথায় এসেছি। দেশকে আরও উন্নয়নের দিকে এগোতে সময় লাগবে। তবে গত পাঁচ বছরে আমরা অনেক কিছু করেছি।’ বাংলাদেশের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী বলে মনে করছেন? জয় বলেন, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দারিদ্রতা। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় যখন গিয়েছিল তখন সাড়ে চার কোটি মানুষ দারিদ্র ছিল। এখন আমরা সেটা তিন কোটিতে নিয়ে এসেছে। মানুষের আয় যখন বাড়বে তখন মানুষের দারিদ্রতা কমবে। এ টাকাটা বিনিয়োগ হবে আমাদের অর্থনীতিতে। এখন যে গতিতে এগোচ্ছে তার চেয়ে বেশি বাড়বে। দেশ আরও এগিয়ে যাবে।’ হেফাজতে ইসলাম এবং মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের কথা বলা হচ্ছে সরকারের মেয়াদে রায় কার্যকর করা যাবে না। আওয়ামী লীগের জন্য আপনি এটিকে কতটুকু চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন? জবাবে জয় বলেন, ‘বাস্তব হচ্ছে ধর্ম নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধ যেসব অপপ্রচার হচ্ছে এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এদেশের বেশিরভাগ মানুষ মুসলমান। তাই বলে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কাউকে বাদ দেয়া যাবে না। সবাইকে নিয়েই কাজ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরোধীরাই অপপ্রচার করছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এই সেই হয়ে যাবে বলে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’ মা শেখ হাসিনার উদাহরণ টেনে বলেন, ‘আমার মা অত্যন্ত ধার্মিক মানুষ। তিনি প্রত্যেক দিন সকালে ওঠেন নামাজ পড়েন। চা খান। কোরআন শরীফ পড়েন। কিন্তু বিরোধী দলের নেতাকে যখন ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছিল তখন মানুষ সব দেখেছে। তাই কারা নাস্তিক সেটা জনগণই বিচার করবে।’ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিষয়ে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘বিচার যাতে কোনো সন্দেহ না থাকে তাই একটু সময় নেয়া হয়েছে। আমাদের ইচ্ছে সম্পন্ন করার ইচ্ছে আমাদের আছে। বিদেশের কোনো দেশই রায় নিয়ে কথা বলতে পারেনি। তারা সবাই সন্তুষ্ট। কিন্তু দুঃখজনক বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের হাতে হাত রেখে বিদেশে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে। লবিস্ট নিয়োগ করেছে। যারা আমাদের দেশের বিরোধিতা করে তাদের সঙ্গে দাঁড়ালে কী দাঁড়ায়? তারা তো রাষ্ট্রের বিরোধিতা করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারই বিচার করছে। বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের পতাকা দিয়ে মন্ত্রী বানিয়েছে।’ সরকারের দুর্নীতির কথা বলে অপপ্রচার করা হচ্ছে দাবি করে জয় বলেন, ‘হলমার্ক, ডেসটিনি, পদ্মাসেতু নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে। সরকার তো দুর্নীতি করেনি। দুর্নীতি থামিয়েছে। ডেসটিনিতে বিএনপি সরকারের আমল থেকে দুর্নীতি চলছিল। আওয়ামী লীগ এসে থামিয়েছে।’ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে কেন মামলা করা হয়নি-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। ওনার বিরুদ্ধে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই মামলা করা হয়নি। বলা হয়েছে, ডায়েরিতে নাম আছে। তথ্য আছে। কিন্ত কার ডায়েরি, আদৌ ডায়েরি আছে কি না তা কিন্তু এখনও দেখা যাচ্ছে না।’ ৫ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে পুলিশের অভিযানের বিষয়ে জয় বলেন, ‘সেদিন রাতের অপারেশনে সব মিডিয়াকে সঙ্গে রাখা হয়েছে। মানুষ যখন ভিডিও তে বারবার ওই রাতের ঘটনা দেখবে তখন বিশ্বাস করবে।’ বিরোধী দলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বিরোধীদলে থাকলে তো কোনো কাজ থাকে না। তাই তারা অপপ্রচার করছে।’--ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়