রংপুর: উত্তরের জনপদ পীরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় প্রাচীনকালে অনেক পীর আউলিয়া ও রাজা বাদশা ছিলেন। কথিত আছে এসব পীর আউলিয়ার কারণে এ উপজেলার নামকরণ করা হয়েছিল পীরগঞ্জ। তাদের কীর্তি-কাহিনী আজও এ অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে। সেইসব প্রতাপশালী রাজাদের অন্যতম ছিলেন রাজা নীলাম্বর সেন। নীলাম্বর রাজার কয়েকটি রাজধানীর মধ্যে পীরগঞ্জের চতরার রাজধানীটি ছিল অন্যতম। রাজধানীটির চারিদিক বিশাল জলাধার দ্বারা বেষ্টিত ছিল। বর্তমানে এটি নীল দরিয়া নামে পরিচিত।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে উত্তর জনপদের সেই রাজার রাজধানী এ নীল দরিয়া দেখতে শতশত লোকের আগমন ঘটে। ১২’শ শতাব্দীতে বাংলায় যখন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতাপ ছিল তখন পাক-ভারতের রাজধানী ছিল গৌড়ে। লক্ষণ সেন ছিলেন গৌড়ের অধিপতি। সে যুগে হিন্দু রাজা বাদশারা নিরীহ প্রজাদের উপর নানা ধরনের নির্যাতন চালাতো। তাদের অত্যাচারের মাত্রা এতই প্রখর ছিল যে, রাজার হুকুম ছাড়া প্রজারা কন্যা পর্যন্ত পাত্রস্থ করতে পারতো না। দিনের পর দিন রাজাদের অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেলে গৌড়াধিপতির বশ্যতা স্বীকারে অস্বীকৃতি প্রকাশের কারনে পীরগঞ্জের কিংবদন্তীর রাজা নীলাম্বর সেন কে শায়েস্তা করতে বাহিনী প্রেরণ করেন লক্ষণ সেন। যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন শাহ ঈসমাইল গাজী (রহঃ)।
এদিকে ১৭ জন আউলিয়ার আবির্ভাব হয় পাক-ভারতে। এই আউলিয়াগণ বিভিন্ন স্থানে আস্তানা গড়ে তোলেন এবং ইসলাম র্ধর্মর কথা প্রচার করতে থাকেন। লোকজন শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হতে থাকে। দিনের পর দিন সাধারণ মানুষ দলে দলে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হতে থাকেন। এ আউলিয়াদের নেতৃত্বে ছিলেন শাহ্ ঈসমাইল গাজী (রহঃ)। তিনি বড় দরগাঁয় আস্তানা গড়েন। এখান থেকে কর আদায়ের জন্য লোক পাঠান চতরায় হিন্দু রাজা নীলাম্বর সেনের কাছে। রাজা নীলাম্বর সেন মুসলমানদের কর দিতে অস্বীকার করলে শাহ্ ঈসমাইল গাজী (রহঃ) যুদ্ধ ঘোষণা করেন। শত্রুপক্ষের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য রাজা নীলাম্বর ৫৬ একরের রাজপ্রাসাদের চারপাশে ৪০ গজ প্রস্থ গভীর, ৫৬ একর জমিতে একটি পরিখা খনন করেন। এরপর পরিখার মাটি দিয়ে রাজধানীর চারপাশে উঁচু করে ইট সুরকির সুরক্ষিত প্রাচীর নির্মাণ করেন। প্রাচীরের দক্ষিণ দিকে একটি মাত্র সদর দরজা রাখা হয়। এই দরজা বন্ধ করলে রাজধানীর ভিতরে প্রবেশ করার কোন উপায় ছিল না। রাজধানী রক্ষার কাজ সমাপ্ত করে রাজা নীলাম্বরের সৈন্যরা রাজধানী থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত অসংখ্য বেড় (গড়) তৈরি করেন। সেই গড়ে হাতী পর্যন্ত লুকিয়ে থাকতে পারতো। এখনও কালের সাক্ষী হিসাবে গড়গুলো বিদ্যমান। রাজধানীর সর্বশেষ গড়টি ছিল উপজেলা সদর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে গাড়াবেড় পর্যন্ত । তখন থেকেই নামকরণ হয় আজকের গাড়াবেড় মৌজার। রাজা নীলাম্বরের সৈন্যরও এগিয়ে ছিল এই গাড়াবেড় পর্যন্ত। রাজধানী আক্রমণ করতে যাতে শত্রুপক্ষের সময় লাগে এবং এখানে লুকিয়ে থেকে শত্রুপক্ষের উপর আঘাত হানা যায় এ জন্য গড়গুলো তৈরি করা হয়েছিল। শাহ্ ঈসমাইল গাজী (রহঃ) এর মুসলমান সৈন্যদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ দীর্ঘ সময় ধরে চলে। এতে মুসলমান সৈন্যদের সাহস ও যুদ্ধের কৌশলের কারণে নীলাম্বরের সৈন্যরা পিছু হটে রাজধানীতে গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। রাজধানীতে পিছুহটে মুসলমান সৈন্যদের রাজধানী অভিমুখে যাত্রা অগ্রসর হবার খবর দিলে রাজা সমস্ত সৈন্য ও প্রচুর খাদ্য সামগ্রী নিয়ে রাজধানীর ভিতরে প্রাচীর দরজা বন্ধ করে অবস্থান করেন। এদিকে মুসলমান সৈনিকরা রাজধানী ঘিরে ফেলেন এবং টানা অবরোধ সৃষ্টি করেন। যাতে নীলাম্বরের কোন সৈন্য বাহিরে গিয়ে খাবার সংগ্রহ করতে না পারে। এভাবে কিছুদিন থাকার পর নীলাম্বরের খাদ্য সামগ্রী নিঃশেষ হয়ে যায়। শুধু পানি পান করে সৈন্যরা দিন কাটাচ্ছিল। ফলে শারীরিক ও মানষিক দিক থেকে সৈন্যরা দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সুযোগে মুসলমান সৈন্যরা রাজধানীর সদর দরজা ভেঙ্গে একযোগে আক্রমণ করে এবং একে একে
সমস্ত শত্র“ সৈন্য হত্যা করে রাজা নীলাম্বর সেন কে বন্দি করে গৌড়ে পাঠিয়ে দেন। এরপর নীলাম্বরের কি পরিণতি হয়েছে শেষ পর্যন্ত তা আর জানা যায়নি। নীলাম্বর রাজার রাজধানী এক সময়কালেরআবর্তে মাটির নিচে দেবে গিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ১২শ শতাব্দীতে সৃষ্ট ভূমিকম্পে পরিখার উত্তর-পূর্ব এলাকা ভরাট হয়ে যায়। অবশিষ্ট তিনপাশে আজও গভীর জলাশয় রয়েছে। রাজধানীরচারপাশঘিরেনির্মিতসুরক্ষিত প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ আজও আছে। সেই প্রাচীরের অংশ বিশেষ আজও নীলাম্বর সেনকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। এটি খনন করা হলে মাটির নীচে রাজপ্রাসাদের অস্তিত্ব এবং আবিষ্কৃত হবে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এছাড়াও উদ্ধার হতে পারে রাজা নীলাম্বর সেনের গচ্ছিত মূল্যবান সম্পদ। মূল্যবান সম্পদের আশায় এলাকার মানুষ দিনের পর দিন খুড়ে-খুড়ে নষ্ট করে দিচ্ছে প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন। এলাকাবাসীর আশাসরকার এটিকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে নীল দরিয়ার হারানো গৌরব ফিরে আনবে এবং দেশের মানুষের কাছে এটিকে পরিচিত করে তুলবে।----আর,আর, শিল্পী(ডিনিউজ)
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে উত্তর জনপদের সেই রাজার রাজধানী এ নীল দরিয়া দেখতে শতশত লোকের আগমন ঘটে। ১২’শ শতাব্দীতে বাংলায় যখন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতাপ ছিল তখন পাক-ভারতের রাজধানী ছিল গৌড়ে। লক্ষণ সেন ছিলেন গৌড়ের অধিপতি। সে যুগে হিন্দু রাজা বাদশারা নিরীহ প্রজাদের উপর নানা ধরনের নির্যাতন চালাতো। তাদের অত্যাচারের মাত্রা এতই প্রখর ছিল যে, রাজার হুকুম ছাড়া প্রজারা কন্যা পর্যন্ত পাত্রস্থ করতে পারতো না। দিনের পর দিন রাজাদের অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেলে গৌড়াধিপতির বশ্যতা স্বীকারে অস্বীকৃতি প্রকাশের কারনে পীরগঞ্জের কিংবদন্তীর রাজা নীলাম্বর সেন কে শায়েস্তা করতে বাহিনী প্রেরণ করেন লক্ষণ সেন। যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন শাহ ঈসমাইল গাজী (রহঃ)।
এদিকে ১৭ জন আউলিয়ার আবির্ভাব হয় পাক-ভারতে। এই আউলিয়াগণ বিভিন্ন স্থানে আস্তানা গড়ে তোলেন এবং ইসলাম র্ধর্মর কথা প্রচার করতে থাকেন। লোকজন শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হতে থাকে। দিনের পর দিন সাধারণ মানুষ দলে দলে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হতে থাকেন। এ আউলিয়াদের নেতৃত্বে ছিলেন শাহ্ ঈসমাইল গাজী (রহঃ)। তিনি বড় দরগাঁয় আস্তানা গড়েন। এখান থেকে কর আদায়ের জন্য লোক পাঠান চতরায় হিন্দু রাজা নীলাম্বর সেনের কাছে। রাজা নীলাম্বর সেন মুসলমানদের কর দিতে অস্বীকার করলে শাহ্ ঈসমাইল গাজী (রহঃ) যুদ্ধ ঘোষণা করেন। শত্রুপক্ষের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য রাজা নীলাম্বর ৫৬ একরের রাজপ্রাসাদের চারপাশে ৪০ গজ প্রস্থ গভীর, ৫৬ একর জমিতে একটি পরিখা খনন করেন। এরপর পরিখার মাটি দিয়ে রাজধানীর চারপাশে উঁচু করে ইট সুরকির সুরক্ষিত প্রাচীর নির্মাণ করেন। প্রাচীরের দক্ষিণ দিকে একটি মাত্র সদর দরজা রাখা হয়। এই দরজা বন্ধ করলে রাজধানীর ভিতরে প্রবেশ করার কোন উপায় ছিল না। রাজধানী রক্ষার কাজ সমাপ্ত করে রাজা নীলাম্বরের সৈন্যরা রাজধানী থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত অসংখ্য বেড় (গড়) তৈরি করেন। সেই গড়ে হাতী পর্যন্ত লুকিয়ে থাকতে পারতো। এখনও কালের সাক্ষী হিসাবে গড়গুলো বিদ্যমান। রাজধানীর সর্বশেষ গড়টি ছিল উপজেলা সদর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে গাড়াবেড় পর্যন্ত । তখন থেকেই নামকরণ হয় আজকের গাড়াবেড় মৌজার। রাজা নীলাম্বরের সৈন্যরও এগিয়ে ছিল এই গাড়াবেড় পর্যন্ত। রাজধানী আক্রমণ করতে যাতে শত্রুপক্ষের সময় লাগে এবং এখানে লুকিয়ে থেকে শত্রুপক্ষের উপর আঘাত হানা যায় এ জন্য গড়গুলো তৈরি করা হয়েছিল। শাহ্ ঈসমাইল গাজী (রহঃ) এর মুসলমান সৈন্যদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ দীর্ঘ সময় ধরে চলে। এতে মুসলমান সৈন্যদের সাহস ও যুদ্ধের কৌশলের কারণে নীলাম্বরের সৈন্যরা পিছু হটে রাজধানীতে গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। রাজধানীতে পিছুহটে মুসলমান সৈন্যদের রাজধানী অভিমুখে যাত্রা অগ্রসর হবার খবর দিলে রাজা সমস্ত সৈন্য ও প্রচুর খাদ্য সামগ্রী নিয়ে রাজধানীর ভিতরে প্রাচীর দরজা বন্ধ করে অবস্থান করেন। এদিকে মুসলমান সৈনিকরা রাজধানী ঘিরে ফেলেন এবং টানা অবরোধ সৃষ্টি করেন। যাতে নীলাম্বরের কোন সৈন্য বাহিরে গিয়ে খাবার সংগ্রহ করতে না পারে। এভাবে কিছুদিন থাকার পর নীলাম্বরের খাদ্য সামগ্রী নিঃশেষ হয়ে যায়। শুধু পানি পান করে সৈন্যরা দিন কাটাচ্ছিল। ফলে শারীরিক ও মানষিক দিক থেকে সৈন্যরা দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সুযোগে মুসলমান সৈন্যরা রাজধানীর সদর দরজা ভেঙ্গে একযোগে আক্রমণ করে এবং একে একে
সমস্ত শত্র“ সৈন্য হত্যা করে রাজা নীলাম্বর সেন কে বন্দি করে গৌড়ে পাঠিয়ে দেন। এরপর নীলাম্বরের কি পরিণতি হয়েছে শেষ পর্যন্ত তা আর জানা যায়নি। নীলাম্বর রাজার রাজধানী এক সময়কালেরআবর্তে মাটির নিচে দেবে গিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ১২শ শতাব্দীতে সৃষ্ট ভূমিকম্পে পরিখার উত্তর-পূর্ব এলাকা ভরাট হয়ে যায়। অবশিষ্ট তিনপাশে আজও গভীর জলাশয় রয়েছে। রাজধানীরচারপাশঘিরেনির্মিতসুরক্ষিত প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ আজও আছে। সেই প্রাচীরের অংশ বিশেষ আজও নীলাম্বর সেনকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। এটি খনন করা হলে মাটির নীচে রাজপ্রাসাদের অস্তিত্ব এবং আবিষ্কৃত হবে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এছাড়াও উদ্ধার হতে পারে রাজা নীলাম্বর সেনের গচ্ছিত মূল্যবান সম্পদ। মূল্যবান সম্পদের আশায় এলাকার মানুষ দিনের পর দিন খুড়ে-খুড়ে নষ্ট করে দিচ্ছে প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন। এলাকাবাসীর আশাসরকার এটিকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে নীল দরিয়ার হারানো গৌরব ফিরে আনবে এবং দেশের মানুষের কাছে এটিকে পরিচিত করে তুলবে।----আর,আর, শিল্পী(ডিনিউজ)
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়