Wednesday, July 24

শাহবাগ ও মতিঝিল নিয়ে মুখ খুললেন শফী

সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী এক ওয়াজ মাহফিলে নারীকে 'তেতুলে'র সাথে তুলনা করেছিলেন। তার এমন বক্তব্যের পরই আবার আলোচনায় আসেন হাটহাজারী মাদ্রাসার এই আলেম। সর্বশেষ এক ভিডিও ক্লিপে শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ ও মতিঝিলে যৌথ বাহিনীর অভিযান নিয়ে মুখ খুলেছেন তিনি।
ওই ভিডিও ক্লিপে আল্লামা শফীকে বলতে শোনা যায়, তিনি বলছেন, “নাস্তিকবাদীরা ৪/৫ মাস পর্যন্ত, ৩/৪ মাস পর্যন্ত উলঙ্গ হয়ে মহিলা-পুরুষ, রাস্তার ওপর, রাস্তা দখল করে যে কাজ করেছে তা সবাই জানেন। অথচ আমাদেরকে ৫ মে শাপলা চত্বরে আরো দু-তিন ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়নি।”
‘দ্বিতীয় আলো’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপের দাবি, আল্লামা শফী তাদেরকে এই সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন। এতে শফী গত ৫ মে রাতে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধের সময় তার কর্মীদের ওপর আক্রমন বা হামলার বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।
সাক্ষাতকারে শফীকে বলতে শোনা যায়, তিনি বলছেন, ''আমাদের এ আন্দোলন শুধু দ্বীন ও ঈমানের হেফাজতের আন্দোলন। আজকে যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি না দিতাম, তাহলে এই নাস্তিকেরা বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে সবাইকে নাস্তিক বানাবার জন্য চেষ্টা করতো। আস্তিক বানানোর জন্য তো তাদের চেষ্টা নাই, তারা আল্লাহকে স্বীকার করে না, সব নাস্তিকবাদী হয়ে যেতো।''
হেফাজতের আন্দোলন সারা বিশ্বে প্রভাব রাখতে সক্ষম হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শফী বলেন, ''আল্লাহর ফজলে এই আন্দোলন শুধু বাংলাদেশ না, আমেরিকা বলেন, কানাডা বলেন, লন্ডন বলেন; ছড়িয়ে পড়েছে। সবার একটাই কথা, আমাদের আন্দোলন কোনো গদি দখলের আন্দোলন না। কাউকে গদিতে বসাবো, কাউকে নামাবো এই আন্দোলন না। সেজন্য এই আন্দোলনে বাচ্চা, জওয়ান, বৃদ্ধ সবাই শরিক হয়েছেন। ৮০-৯০ বছরের মানুষ তারাও বলছে, আমরা এই ধরণের জমায়েত দেখি নাই আমাদের এই জীবনে।''
আল্লামা শফী শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “চ্যালেঞ্জ করছি, টাকা খরচ করেও তারা এতবড় জমায়েত করতে পারবে না। সেজন্য আল্লাহ যাদের ‘সমঝ’ দান করেছেন, তারা সবাই বলছে, এই ধরণের আন্দোলন যদি না হতো তাহলে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে সব (মানুষ) আজকে নাস্তিক হয়ে যেতো।”
৫ মে হেফাজত কর্মীদের উপর বর্বর আক্রমণ চালানো হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “আল্লাহ পাকের রহমত, গায়েবী মদদ, আমাদের ওপর যে আক্রমন করা হয়েছে রাত্রে, ঘুমন্ত অবস্থায়, জিকির আসগর করা অবস্থায় তাদের ওপর এ ধরণের আক্রমন করা হয়েছে। এটা আপনারা সবাই জানেন।”
শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের সমালোচনা করে শফী বলেন, “নাস্তিকবাদীরা ৪/৫ মাস পর্যন্ত, ৩/৪ মাস পর্যন্ত উলঙ্গ হয়ে মহিলা-পুরুষ, রাস্তার ওপর, রাস্তা দখল করে যে কাজ করে তা সবাই জানেন। তাদেরকে গুলি করা হয় নাই কয়েকমাস পর্যন্ত, কিন্তু ৫ মে আমাদেরকে আরো দু’ঘণ্টা-তিন ঘণ্টা বেশি সময় দেওয়া হয়নি। আমি ফজরে যেয়ে বলে দিতাম, যাও, এখন তোমরা নিজ নিজ গ্রামে চলে যাও। এ দু-তিন ঘণ্টা সময় আমাদের দেওয়া হয়নি। এ ধরণের হামলা, বর্বরতা আমাদের ওপর করা হয়েছে। আল্লাহ শোকর, আমরা না-কাম না।”
হেফাজত তাদের লক্ষে ‘বিজয়ী’ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নবী আলাইহি সাল্লামের সামনে ৭০ জন সাহাবাকে, বড় বড় সাহাবা, হুজুরের চাচাও ছিলো, তাদেরকে হত্যা করেছে কাফেরেরা। তারপর বিজয় লাভ করেছে ইনশাআল্লাহ। আমাদের এটাও ইনশাআল্লাহ, ও ধরণের বিজয় অর্জন করবে। দিন জিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালাকে বাত। সেজন্য আমি সবার জন্য দোয়া করছি। যারা শহীদ হয়ে গিয়েছে তাদের আব্বা আম্মার জন্যও দোয়া করছি। আল্লাহ তায়ালা তাদের শাহাদাতকে কবুল করেন।”
প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান শফী।
হেফাজতের আমির প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “যারা কিনা আজকে তাদের জন্য জান-মাল কোরবার করছে তাদের জন্যও দোয়া করছি। আশা করি সামনে আপনারা যদি এ ধরণের ঈমানের ডাক শোনেন, তাহলে আগের চেয়েও বেশি করে ঝাঁপিয়ে পড়বেন।”
হেফাজতের পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে তিনি বলেন, “আমার কাছে প্রত্যেকদিন পাঁচ গাড়ি, সাত গাড়ি, আট গাড়ি মানুষ আসতেছে আর আসতেছে। তারা বলছে, হুজুর কর্মসূচি দেন, কর্মসূচি দেন। একজন মানুষ আমার কাছে বলেছে, হুজুর আমার যদি আরো ছেলে থাকতো আর তারা শহীদ হতো তবে আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতাম। ঈদের পরে আমাদের কর্মসূচি দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ। এখন পবিত্র রমজান মাসে আপনারা ইফতার মাহফিল করে দোয়া করবেন। ১৩ দফার ব্যাখ্যা আপনারা জানিয়ে দিবেন।”
মানুষ ১৩ দফার ‘ব্যাখ্যা’ বোঝে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
হেফাজতের আমির এ প্রসঙ্গে বলেন, “তারা বুঝেও বোঝে না, কেন তারা বোঝে না। এটা তো না বোঝার কোনো কথা নেই। কি করবো আমরা। কিন্তু আমাদের দায়িত্ব আমাদের পালন করে যেতে হবে। যে কোনো বাতেল ফেরকা দেখা দেবে, যতক্ষণ আমাদের জান আছে তার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করে করে যাবো, ইনশাআল্লাহ।”---পরিবর্তন

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়