Sunday, July 28

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের হরিজন সম্প্রদায়ের সুখ-দুখ


কালীগঞ্জ, (ঝিনাইদহ): রাতের শেষ প্রহর, একটু একটু করে চারিদিকে আঁধার কাটছে। মুসল্লিরা ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদের দিকে যাচ্ছে। ঠিক এমন সময়ই কিছু মানুষ ছোট ছোট দলে হাতে ঝাড়– নিয়ে শহরের রস্তায় নেমে পড়ে। অতঃপর রাস্তায় জমানো ময়লা- আবর্জনা পরিস্কার করে। এছাড়া শহর, বন্দর, গ্রামে -গঞ্জে আর্বজনা পরিস্কার, মলমূত্র নিষ্কাশন, ড্রেনেজ-টয়লেট পরিস্কার করাই ওদের কাজ। এসব কাজ যারা করে সে সকল মেথর, ধাঙ্গড়, ভূইমালি বা ঝাড়–দারকে হরিজন বলা হয়। 
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের রয়েছে নানা দুঃখ-কষ্টে। শহরের ওপর তলার মানুষের ঘুম ভাঙ্গার আগেই শহরকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে চলাচলের উপযোগী করে  রাখে যারা তাদের খোজ রাখেনা অনেকেই। অথচ ওদের কল্যানে পরিছন্ন ঝলমলে শহরে ফুরফুরে মেজাজে নিজ নিজ কজে ব্যস্ত থাকে সবাই। প্রতিযোগিতামূলক আজকের বিশ্বে টিকে থাকার সংগ্রামে মানুষ ছুটছে দিগি¦দিক। জ্ঞান বিঞ্জানের ছোয়াঁয় পরিবর্তন এসেছে সকলক্ষেত্রে। সেখানে  এই হরিজন সম্প্রদায়ে ভাগ্যের চাকা থেমে আছে পূর্বের যায়গায়। তথ্য অনুসন্ধ্যানে দেখা গেছে, উপজেলার  বেশ কয়েকটি স্থানে হরিজন সম্প্রদায় বসবাস  করে। এর মধ্যে পৌর এলাকার রেলস্টেশন , নদীপাড়া, বেজপাড়া, চিনিকল এলাকায় এ সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করে। পৌরসভার এ কয়েকটি এলাকায় ৫৫/৬০ টি পরিবারের ২৫০/৩০০ জনের মতো লোক বসবাস করে। 
হরিজন সম্প্রদায়ের শিশুরা মেথরের ছেলেমেয়ে হিসাবে অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত। এদের অনেকেই পড়ালেখার জীবনে প্রবেশ করতে পারে না । ফলে কচি বয়সেই এরা বড়দের সাথে ময়লা-আবর্জনা পরিস্কারের কাজে লেগে যায়। কালীগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা হরিজন আনন্দ বিশ্বাস, উজ্জ্বল দাস, হাজু দাস, রেনু, মেনুকা রানী জানান, মুলত অভাব অনঠনের কারণেই তারা  সন্তানদের লেখাপড়া  করাতে পারেনা। সন্তানদের শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে রাখতে ওদের খুব কষ্ট হয়  কিন্তু কিই বা করার আছে তাদের এমনটিই জানালেন জমাদ্দার হরেন দাস।  একসময় ছিলো হরিজনরা ছিলো নিগৃহীত অস্পৃশ্য জাতি হিসেবে। তবে বর্তমানে এমনটি না থাকলেও তাদের উন্নয়নে সরকারী বা বেসরকারীভাবে এগিয়ে আসেনি কেউ এমন অভিযোগ  কালীগঞ্জ পৌরসভার জমাদ্দার হরেন দাস ও সচীন্দ্রনাথের। তারা  জানান, কালীগঞ্জ পৌরসভার মোট ৯ টি ওয়ার্ডে ৩৫ জন সুইপার কাজ করে। এছাড়া পাবলিক-প্রাইভেট সেক্টরে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসাবে অনেকে নিয়োজিত। আবর্জনা, ড্রেনেজ পরিস্কার সহ ৩-৪ ধরনের কাজ করেন তারা। শহরকে ঝকঝকে পরিস্কার করে রাখা এই নিবেদিত মানুষগুলোর বেতন বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির এই বাজারে খুবই লজ্জাকর। বর্তমানে পৌর সভায় কর্মরত এদের পুরুষকর্মীদের মাসিক ভাতা  ১৮’শ টাকা এবং মহিলাদের ১ হাজার২’শ টাকা । এদিকে তাদের চাকরিও স্থায়ী নয়, মাস্টার রোলে কাজ করতে হয় তাদেরকে। মেডিকেল ভাতা, মাতৃকালীন ছুটি, উৎসব ভাতা সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নেই তাদের। কালীগঞ্জ পৌর সভায় কর্মরত হরিজনরা সামান্য বেতনে কাজ করে, যা দিয়ে সংসার চালাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হয় তাদের। তাই আয় বৃদ্ধির জন্য  নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি করার কথা বলছেন তারা।  এদিকে হরিজন সম্প্রদায়ের নেতা হরেন দাস ও সচীন্দ্রনাথ  জানান, তারা পৌর মেয়রের কাছে বেতন বৃদ্ধিসহ তাদের আলাদা বাসস্থানের দাবী জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। হরিজন নেতারা জানান, মেয়র তাদের আলাদা আবাস স্থল নির্মানের আশ্বাস দিয়েছেন। 
এদিকে কালীগঞ্জের হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের অভাব অনটনের কথা উল্লে¬খ করে পৌর মেয়র            মোস্তাফিজুর রহমান বিজু জানান, তারা মৌলিক অধিকার থেকে যেন বঞ্চিত না হয় সে দিকে তার  খেয়াল রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ওদের দাবীর কথা তার বিবেচনায় আছে। অর্থপ্রাপ্তি সাপেক্ষে ভবিষ্যতে হরিজনদের জন্য আলাদা কলোনি তৈরী ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। --ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়