Friday, July 12

মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পে উৎপাদন বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা


ফুলবাড়ী (দিনাজপুর): উৎপাদন বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পে। মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানী লিঃ এর ভূগর্ব থেকে। খনির বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গত ২০০৭ সালে কোরিয়ান কোম্পানী কর্তৃক তৈরি করা ভূগর্বের সুড়ঙ্গ পথ থেকে পাথর উত্তোলন আগামী ২ মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এ সময়ের মধ্যে ভূগর্বে নতুন সুড়ঙ্গ পথ তৈরি না করলে আগামী ২ মাসের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে খনিটির ভুগর্ব থেকে পাথর উত্তোলন। এতে করে সরকারের লোকসান হবে ৫ হাজর কোটি টাকার উর্দ্ধে। জীবিকা হারাবে খনিটির উপর পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল কয়েক হাজার পরিবার। চাকুরী হারাবে খনিতে কর্মরত ৭৫০ জন কর্মকর্তা কর্মচারী ও শ্রমিক। 
খনি সূত্রে জানা গেছে, গত ২০০৬ সালে খনিটি ভূগর্ব থেকে পাথর উত্তোলনের জন্য ভূগর্বে সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করে উত্তোলন কোরিয়া মাইনিং কোম্পানী। সে পথ থেকে পাথর উত্তোলন শেষ হয়ে গেছে। এখন নতুন পথ সৃষ্টি না করলে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাবে। 
অপর দিকে দীর্ঘদিন খনির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীগণের অব্যবস্থাপনায় আজও লাভের মুখ দেখিনি মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানীটি। কোম্পানীর শুরু থেকে একটি মাত্র শিফটে পাথর উত্তোলন করে আসছিল। এতে প্রথম অবস্থায় ২ হাজার মেট্রিক টন পাথর উৎপাদন হলেও এখন উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৮০০ থেকে ৯০০ মেট্রিক টন। 
এদিকে দিন দিন বেড়েই চলেছে পাথরের চাহিদা। প্রতিদিনই ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার মেট্রিক টন পাথরের চাহিদা থাকলেও উৎপাদন না হওয়ায় তা সরবরাহ করতে পারছেন না কোম্পানীটির মার্কেটিং বিভাগ। গত ১১ জুলাই বৃস্পতিবার এক পাথর গ্রাহক ৫ হাজার মেট্রিক টন পাথর কেনার জন্য কোম্পানী বরাবর টাকা জমা দিয়েছে। অপর এক গ্রাহক আরও ৫ হাজার মেট্রিক টন পাথর কেনার জন্য আবেদন করেছেন। অথচ ঐ দিন ভূগর্ব থেকে পাথর উত্তোলন হয়েছে মাত্র ৮৪০ মেট্রিক টন। অর্থাৎ উৎপাদনের ৫ থেকে ১০গুণ চাহিদা রয়েছে পাথরের। কোম্পানীর হিসাব শাখা থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত কোম্পানীটির ম্যানেজম্যান্ট ও এডিবি কর্তৃক ঋণের কিস্তি বাবদ খরচ হয়েছে ৩৫৫ কোটি টাকা। খনির উত্তোলিত পাথর বিক্রি করে আয় হয়েছে ২৩৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ উৎপাদনের সাড়ে ৬ বছরে কোম্পানীটিকে লোকসান গুণতে হয়েছে ১২০ কোটি টাকা প্রায়। তার মধ্যে গত ২০১২-১৩ অর্থ বছরে পাথর বিক্রি করা হয়েছে ৪০৭২১ দশমিক ৩১ লাখ টাকা। চাহিদা অনুযায়ী পাথর উত্তোলন হলে বিক্রি দাড়াতো এর ৫গুণ বেশি। অর্থাৎ ৩ শিফটে পাথর উত্তোলন শুরু হলে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করা সম্ভব। এতে এই খনিটি রাতারাতি লোকসান থেকে ব্যাপক লাভের দিকে এগিয়ে যাবে। মার্কেটিং বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ০-৫-২০ মি.মি. পাথর টন প্রতি  ২৬ দশমিক ৯ মার্কিন ডলার ২০-৪০ সাইজের পাথর ২৩ দশমিক ৯ মার্কিন ডলার, ৪০-৬০ মি.মি. সাইজের পাথর ২২ দশমিক ৯ মার্কিন ডলার, ৬০-৮০ মি.মি. সাইজের পাথর ও বোল্টার সাইজের পাথর ২০ দশমিক ৯ মার্কিন ডলার দরে প্রতি টন বিক্রি হচ্ছে। খনিটি পুনরায় কোন বিশেষজ্ঞ মাইনিং কোম্পানীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নতুন ফেইস তৈরি করে ৩ শিফটে পাথর উত্তোলন করা হলেই খনিটি দেশের একটি লাভজনক খনি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে ঐ এলাকার আত্ম সামাজিক উন্নয়নসহ সরকারের শত শত কোটি টাকা আয়ের মাধ্যম হয়ে দাড়াবে। 
এ বিষয়ে খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন আহম্মেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ডেনিস ভিত্তিক একটি বিশেষজ্ঞ মাইনিং কোম্পানীর সঙ্গে চুক্তি করার সম্ভবনা রয়েছে। এতে ঐ কোম্পানীটি আগামী ২ মাসের মধ্যে মধ্যপাড়া খনিটির ভূগর্বের সুগঙ্গ পথের উন্নয়নমূলক কাজ করে ৩ শিফটে পাথর উত্তোলন করার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী ২ মাসের মধ্যেই চুক্তি সম্পাদনসহ খনির আন্ডারগ্রাইন্ডের কাজ শুরু হবে।  --ডিনিউজ


শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়