ঢাকা: প্রতি বছর হত্যা করা হয় কমপক্ষে ৩০ হাজার হাতি৷ অথচ হাতিহত্যা নিষিদ্ধ৷ দাঁতের বিনিময়ে টাকা পাওয়ার লোভে হাতিনিধন ঠেকাতে ও ব্যর্থ আইনকে শক্তি জোগাতে এবার দারুণ উপায় উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা৷ মৃত হাতিই রক্ষা করবে জীবিতদের!
‘হাতি মরলেও লাখ টাকা' – এ শুধু কথার কথা নয়৷ স্থলের সবচেয়ে বড় এ প্রাণীর দেহের কোন কোন অংশ কী কী কাজে লাগে সে বর্ণনায় না গিয়ে শুধু এটুকু বলা যেতেই পারে যে, হাতির দাঁতের যা দাম তার তুলনায় অন্য কোনো প্রাণীর সারা দেহও তুচ্ছ৷ এই প্রলোভনে সেই কবে থেকেই বিশ্বজুড়ে চলছে হাতিহত্যা৷ তা রোধে সবগুলো দেশ হাতিহত্যা এবং অবৈধভাবে হাতির দাঁতের ব্যবসা নিষিদ্ধ করতে সম্মত হয়েছিল অনেক আগে৷ এশিয়া মহাদেশে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় ১৯৭৫ সালে৷ আর যে মহাদেশে সবচেয়ে বেশি হাতি আছে, সেই আফ্রিকায় এ আইন কার্যকর হয় ১৯৮৯ সালে৷ কিন্তু তারপরও খুব একটা লাভ হয়নি৷ কমতে কমতে আফ্রিকায় এখন হাতি আছে মাত্র ৪ লক্ষ ২৩ হাজারটি৷
শিকারিদের নিরস্ত করতে ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় কারণ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে ‘অবৈধ দাঁত' চিহ্নিত করতে সক্ষম যন্ত্র বা উপায় না থাকা৷ যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের দাবি, তাঁরা এবার এমন এক উপায় উদ্ভাবন করতে পেরেছেন যা কিনা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এ অসহায়ত্ব দূর করে দেবে সহজেই৷ সেটা কীভাবে সম্ভব? আনবিক পরীক্ষায় ব্যবহৃত এবং সে কারণে বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়া কার্বন – ১৪কে কাজে লাগিয়ে!
যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স-এর সাম্প্রতিক এক গবেষণার ফল সেই ভরসাই দিচ্ছে৷ গত শতাব্দীর ৫০-এর দশকে সাইবেরিয়ায় আণবিক পরীক্ষা চালিয়ে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-১৪ ছড়িয়ে দিয়েছিল রাশিয়া (তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়ন)৷ ৬০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রও একই কাজ করে নেভাদায়৷ আণবিক পরীক্ষার খারাপ দিকের তো শেষ নেই, এবার ভালোর সুবিধাটা নাকি পাবে হাতিরা!
যেখানে যার কাছেই হাতির দাঁত পাওয়া যাবে তা পরীক্ষা করে দেখা হবে তাতে কার্বন-১৪ কতটুকু আছে৷ ফলাফলই বলে দেবে হাতিটি কবে মারা হয়েছিল৷ ১৯৮৯ সালের পর থেকে যেহেতু যেকোনো হাতিমারাই নিষিদ্ধ, তাই হত্যাকাণ্ডটি তার বা ১৯৭৫-এর আগে হয়েছিল কিনা সেটা জানা যাবে৷ তারপর আর অর্থলোভী অবৈধ ব্যবসায়ীদের শাস্তি দিতে কী লাগে!
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স-এর গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক কেভিন উনো নিশ্চিত, এ পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যা দেখা গেছে যে তাতে হাতিনিধন রোধের একটা কার্যকর ব্যবস্থা হবেই৷ এ পর্যন্ত ২৯টি প্রাণী এবং গাছপালার কোষ নিয়ে কাজ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এ উপায়ে প্রাণী বা উদ্ভিদটির কবে জীবনাবসান হয়েছিল তা জানা সম্ভব৷ এভাবে অপরাধ প্রমাণ করতে খরচ হবে মাত্র ৫০০ ডলার, যা কিনা হাতির দাঁতের দামের তুলনায় খুবই নগণ্য৷
মৃত হাতির দাঁত পরীক্ষা করে জীবিতদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করা আর ঠেকায় কে!
সুত্র: ডি ডাব্লিউ নিউজ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়