জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকারসহ ৯৩ সংসদ সদস্যের কাছে বকেয়া টেলিফোন বিল দাঁড়িয়েছে ১ কোটি টাকারও বেশি। বারবার তাগিদ দেওয়ার পরেও তারা বিল পরিশোধ করছেন না। বিল পরিশোধ করেননি এমন জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে রয়েছেন পার্টির সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী পর্যন্ত। বিল না পেয়ে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি (বিটিসিএল) শিগগির এ বিষয়ে তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে।
বকেয়া টেলিফোন বিলের তালিকার শীর্ষে রয়েছেন সপ্তম ও অষ্টম সংসদের সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা নাদিম মোস্তফা। তার ৩ টি টেলিফোন নম্বরের বিপরীতে বকেয়া রয়েছে ৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩৮৪ টাকা। তবে, বকেয়া বিল আদায়ে তার বিরুদ্ধে মামলার পরও তিনি একটি নম্বরের বিরুদ্ধে ৫৭ হাজার ৭০১ টাকা পরিশোধ করেছেন।
বিএনপির আরেক সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা খানের বকেয়া বিল দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭ হাজার ৬২ টাকা। সাবেক মন্ত্রী আ.স.ম. আব্দুর রবের কাছে এখনো বকেয়া রয়েছে ২১ হাজার ২২১ টাকা।
বর্তমানে সংসদ সদস্যরা প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা টেলিফোন বিল পেলেও আগে তারা পেতেন ৬ হাজার টাকা।
ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর কাছে বকেয়া বিল রয়েছে ৬ হাজার ৮৭৩ টাকা।
তবে তিনি এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের জানান, তার নম্বর অন্য কেউ ব্যবহার করার কারণে এ বিল উঠেছে। তবে তার নামে এ নম্বর এবং তিনি যে বিল দেননি তা স্বীকার করেছেন ডেপুটি স্পিকার।
তিনি বলেন,“বিটিসিএল বা সংসদ ভবনের সংশ্লিষ্ট কারো কাছ থেকে আমার কাছে বিল পরিশোধের কোনো তাগাদা আসেনি।”
অন্যদিকে, ৬ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত ও বর্তমান আওয়ামী লীগের দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বিল বকেয়া রেখেছেন ১৩ হাজার ৬০০ টাকা। এ বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বকেয়া সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।
বিস্ময়ের সাথে তিনি বলেন, “টেলিফোন বিল বকেয়া থাকলেতো আমার নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ না থাকার কথা।”
এর আগে ২০০৯ সালের জুলাই মাসে বিটিসিএল ১৯৯ জন সংসদ সদস্যকে টেলিফোন বিল পরিশোধের জন্যে চিঠি দেয়। ওই সময় তাদের কাছে বকেয়া বিলের পরিমাণ ২৬ কোটি ১৯ লাখ ৩ হাজার ৩১৯ টাকা থাকলেও আদায় করা সম্ভব হয় মাত্র ৪০ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। ওই বছরের আগস্ট মাসে যে সব সংসদ সদস্য মারা গেছেন তাদের কাছে পাওনা ১ কোটি ১০ লাখ ৩০ হাজার টাকা মওকুফ করে দেয়া হয়। এদের মধ্যে শুধু সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরীর ১ কোটি ১ লাখ টাকা বকেয়া মওকুফ করে দেয়া হয়।
আবার বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি ও সংসদ সদস্য বজলুল হুদার কাছে পাওনা থাকলেও তার নাম বাদ দেয়া হয়। সাবেক মন্ত্রী মীর শওকত আলী বীর উত্তমের কাছে বকেয়া ৮৩ হাজার ৯৯ টাকা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেন, “জাতির পিতাকে হত্যার সাথে জড়িত থাকায় বজলুল হুদার বকেয়া মওকুফ গ্রহণযোগ্য নয়। তবে মীর শওকত আলীর বিষয়টি আমার জানা নেই।”
মওকুফের তালিকায় ২০১৩ সালে আছেন ৮ সংসদ সদস্য। ২০১৩ সালের ২৭ মে সরকারের তরফ থেকে সাবেক ৮ সংসদ সদস্যের কাছে বকেয়া ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা মওকুফ করে দেয়া হয়। এদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য ইব্রাহিম বিন খলিলের কাছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৩৪৫ টাকা, মমতাজ ওয়াহাবের কাছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৪০৯ টাকা, শাখাওয়াত রহমানের কাছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৬৩০ টাকা, আব্দুল বকরের কাছে ১ লাখ ১০ হাজার ১৭০ টাকা ও শাহদাতুল রহমানের কাছে ৬৮ হাজার ৮৫৬ টাকা পাওনা ছিল।
এছাড়া পঞ্চম সংসদের সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেনের কাছে বকেয়া রয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫৯৫ টাকা, আব্দুল হক মোল্লার কাছে ৬৫ হাজার ৭৬৫ টাকা ও আব্দুল লতিফ মির্জার কাছে ৫৯ হাজার ৩৫৮ টাকা।
এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলী খান বলেন,“বকেয়া বিল পরিশোধ না করার পর কোনো সংসদ সদস্য মারা যাওয়ার পর তা মওকুফ করা ভাল উদাহরণ নয়। কোনো সাধারণ মানুষ বিল মওকুফের কোনো সুযোগ না পেলে সংসদ সদস্যদের এ সুযোগ দেয়া সঠিক নয়।”
তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেন, “মন্ত্রিসভা এ সিদ্ধান্ত নিলে আমার আর বলার কিছু থাকে না।”
বিটিসিএল’র এমডি এসওএম কালিমউল্লাহ জানান, প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব হওয়ায় আমাদের এ ব্যাপারে বলার কিছু নেই। এর আগে বিটিসিএল ৮১ জন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার পর মাত্র ৪ জন সংসদ সদস্য তাদের সমুদয় বকেয়া পরিশোধ করার তাদের মামলা খালাস হয়ে গেছে।--পরিবর্তন
খবর বিভাগঃ
বিশেষ খবর
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়