ঝালকাঠি: মুড়ি ভেজে পাইকারদের হাতে তুলে দিতে রমজানের শুরুতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি মুড়ি পল্লী তিমির কাঠির বাসিন্দারা। এ গ্রামের প্রায় শতভাগ পরিবারেরই পেশা মুড়ি ভাজা ও তা বিক্রি করা। এ গ্রামের বাসিন্দারা তাদের আদি পেশা হিসেবে ধরে রেখেছেন এ পেশা। সারা বছরই এ কাজে তাদের সংসার চলে। রমজান মাস এলেই তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুন। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধা পর্যন্ত সকলেই এখন মুড়ি ভাজার কাজে ব্যস্ত।
রমজানের আগেই তারা মুড়ি ভেজে মজুদ রেখে তারা বাড়তি আয় করেন। চাহিদা এবং জনপ্রিয়তায় তাদের যাতে কোন সংকট না হয় এ জন্য তারা মুড়ি ভাজায় ব্যস্ত রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে. প্রত্যেকটি পরিবারই মুড়ি ভাজা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শোনা যায় মাটির হাড়ির টুং টাং শব্দ। হাজারো মানুষের কর্মকাজের মধ্য দিয়ে হাতে ভাজা এ মুড়ি দক্ষিনাঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশে রপ্তানি করে থাকে।
রমজান মাসে রোজাদারদের কাছে ইফতারীর প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যাবহার হচ্ছে অতি সু-স্বাদু ও মিষ্টি মোটা চালের মুড়ি। মুড়ি তৈরীর কারিগররা জানান, রমজান মাসের চাহিদা তো রয়েছেই তারপরও সারা বছর হাজার হাজার মন মুড়ি এ গ্রাম থেকে পাইকার ও আড়তদাররা সরবরাহ করেন। ইউরিয়া সারের ব্যাবহার বিহীন, হাতে ভাজা এ মুড়ি স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় দিন দিন মানুষের কাছে এ মুড়ি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মুড়ি আড়ৎদার মালিক মো. গিয়াসউদ্দিন খান জানান, এক সময়ে দেশের অণ্য ১০ টি গ্রামের মতই এ গ্রামের লোকেরা নিজেদের প্রয়োজনে মুড়ি ভাজতেন। ১৯৮৫ সালে পার্শ্ববর্তী গ্রাম জুরকাঠির বাসিন্দা আমজেদ মুড়ি ভেজে তা বাজারে বিক্রি শুরু করেন।
তা দেখে তিমিরকাঠির কয়েকটি পরিবার তাদের সংসারের আয় বাড়াতে মুড়ি ভেজে বিক্রি করতে শুরু করেন। গ্রামের বেশ কিছু পরিবার মুড়ি ভেজে তাদের সংসার চালানো শুরু করেন। আব্দুল হক নামের এক বিএসসি শিক্ষক বিভিন্ন স্থানের পাইকারদের মুড়ি ক্রয়ে উদ্ভুদ্ধ করে এ গ্রামে নিয়ে আসেন। এর পরই মুড়ির কদর বাড়তে থাকে। মুড়ি তৈরীর কারিগর দেলোয়ার ও খাদিজা জানান, এ এলাকায় মুড়ির জন্য উপযোগী মোটা নাখুচী ও সাদা মোটা নামের ৩ প্রজাতির ধান ভাল ফলে বলে মুড়ি উৎপাদন করতে ভাল হয়। বাণিজ্যিকভাবে মুড়ি ভাজার সঙ্গে ৩ যুগ ধরে জড়িত ভুইয়া বাড়ির ৪২ ঘরের সবাই মুড়ি ভাজার পেশায় নিয়োজিত। শুধু এ বাড়ি নয় এ গ্রামের প্রত্যেক ঘরের মানুষ এখন দিন রাত সমান ভাবে মুড়ি ভাজায় ব্যাস্ত। উনুনের (চুলা) জ্বালের কাজে থাকতে হয় বলে ২-৪ জন শ্রমিক পালা করে বিশ্রাম নিয়ে নিবিঘেœ চুলায় বারু ও তাপ দিয়ে মুড়ি তৈরী করেন। শ্রমিকরা বিশ্রাম নিলেও মুড়ির চুলার কোন বিশ্রাম নেই।
দৈনিক গড়ে ১শ’ কেজি মুড়ি ভাজতে পারলে খরচ বাদ দিয়ে ৭/৮শ’ টাকা লাভ হয়। তবে নিজেরা ধান কিনে সিদ্ধ করে শুকিয়ে মুড়ি ভেজে শহরে নিয়ে বিক্রি করলে দ্বি-গুন লাভ হয়। তাই স্বল্প পূজিঁর মানুষ রমজান মাসে কম পক্ষে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল মৃধা বলেন, আমার ইউনিয়নে এত বড় মুড়ির হস্ত শিল্প থাকায় আমি গর্বিত। আমাদের এখানকার মুড়ির চাহিদা অনেক বেশী। সরকারে সহযোগিতা পেলে এ শিল্পকে আরো এগিয়ে নেয়া যেত।---ডিনিউজ
খবর বিভাগঃ
ফিচার
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়