ভোলা: জোয়ারের পানিতে প্লাবিত ভোলার পাঁচ উপজেলার ৭০ গ্রামে এখনও ত্রাণ পৌঁছেনি। বৃষ্টি আর জোয়ারের পানির কারণে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেয়া মানুষগুলো চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
রোববার ভোরে এসব গ্রামে পানি প্রবেশ করে বিস্তীর্ণ জনপদ ছাড়াও ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, পুকুর, ঘের, ফসলি জমি, স্কুল-কলেজ মাদরাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা তলিয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২শ টন চাল ও নগদ পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও দুর্গত এলকায় এখনও তা বিতরণ শুরু হয়নি। ফলে সেখানে খাদ্য ও পানির জন্য হাকাকার চলছে। ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, ছয়দিন ধরে জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে সদরের ইলিশা, কাচিয়া, ধনিয়া, বোরহানউদ্দিনের বড় মানিকা, পক্ষিয়া, হাসাননগর, দৌলতখানের সৈয়দপুর, তজুমদ্দিনের চাঁদপুর, সম্ভুপুর, চাচড়া, মনপুরার সাকুচিয়া, মনপুরা ও চরফ্যাশনের ঢালচর, কুকরি-মুকরি ইউনিয়নের ৭০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
বিশুদ্ধ পানির অভাবে ছড়িয়ে পড়েছে রোগ-বালাই। জোয়ারের পানির চাপে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় বাস্তহারা মানুষগুলো অসহায় হয়ে পড়ছে। আর্থিক সচ্ছল পরিবারগুলোও নতুন ঠিকানার খোঁজে চলে গেলেও অসচ্ছল পরিবারগুলো যেন দিশেহারা। পানির কারণে দিন মজুররা কাজে যেতেও পারছে না।
মানিকা গ্রামের ছিদ্দিক ও সোহেল বলেন, ‘গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। যাদের টাকা আছে তারা অন্যস্থানে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু যাদের টাকা নেই তারা পানির মধ্যেই বসবাস করছেন। এ কষ্ট দেখার কেউ নেই।’
পক্ষিয়া ইউনিয়নের গৃহবধূ খালেদা আক্তার বলেন, ‘বার বার শুনি বেড়ি দিব, ব্লক দিব। কিন্তু বেড়িও দিচ্ছে না ব্লকও দিচ্ছে না। ঘরের চুলো জ্বলছে না। বাধ্য হয়েই মাতৃভূমি ছেড়ে চরফ্যাশন চলে যাচ্ছি।’
বোরহানউদ্দিন পৌর ৫নং ওয়ার্ডের গৃহবধূ সালমা ও শারমিন বলেন, ‘আমাগো ছবি তুইল্যা কোনো লাভ নাই। সরকার আমাগো কষ্ট দেহে না। কোনো সাহায্য দেয় না। এই রোজার মধ্যেও পানিবন্দি হয়ে আমরা কষ্টে আছি।’
এদিকে টানা ৬ দিন ধরে নদীর পানি বিপদ সীমার ৪০/৫০ সেন্টিমিটার উচ্চতায় উঠা-নামা করায় নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এছাড়াও জোয়ারের পানিতে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের ইলিশা ফেরিঘাট তলিয়ে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান বলেন, ‘পানির চাপ কমে গেলে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হবে।’
জেলা প্রশাসক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রথম দফায় ২শ টন চাল ও নগদ পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২য় দফায় আরও বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই বরাদ্দ এসে যাবে।’
বরাদ্দ দেয়া হলেও দুর্গত এলাকায় এখনও ত্রাণ পৌঁছায়নি এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তালিকা তৈরির কাজ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব বিতরণ শুরু হবে।
বাংলামেইল২৪ডটকম
খবর বিভাগঃ
অন্য জেলা
সর্বশেষ সংবাদ
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়