পাকিস্তানের ফাঁস হয়ে যাওয়া সরকারি নথিতে উঠে এলো আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের কথা। সেইসাথে বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও সরগরম হয়ে উঠলো। নথিতে বলা হচ্ছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির সুযোগেই দীর্ঘ নয় বছর দেশটিতে লুকিয়ে ছিলেন লাদেন।
আল-জাজিরার অনুসন্ধানী দল সোমবার এই স্পর্শকাতর নথি সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওসামা বিন লাদেনকে ধরার অভিযানবিষয়ক অ্যাবোটাবাদ কমিশনের প্রতিবেদনে প্রচুর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরায় প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্দেশে লাদেনকে হত্যা করাকে ‘হত্যার মত অপরাধ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।
ওসামা-বিন-লাদেন ২০০১ সালে আফগানিস্তান থেকে পালানোর পর কোথায়, কিভাবে ছিলেন সেটার বর্ণনাও রয়েছে ফাঁসকৃত নথিপত্রে। লাদেন ২০১১ সালের মে মাসে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন নেভি সিল সদস্যদের অভিযানে নিহত হন।
মার্কিন এই অভিযান সরাসরি পাকিস্তান সরকার বা সেনাবাহিনীকে অবহিত না করেই সংগঠিত হয়েছিলো। পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে তিনঘণ্টাব্যাপী মার্কিন অভিযানের বৈধতা। পাশাপাশি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার আন্তর্জাতিক ফেরার সম্পর্কে অসচেতনতা। এই দু’টো বিষয় পরীক্ষার জন্যই মূলত এই অ্যাবটাবাদ কমিশন গঠিত হয়।
অ্যাবোটাবাদ কমিশন ২০১১ সালের জুন মাসে এই প্রতিবেদন দাখিল করে। যেখানে মার্কিন বাহিনীর এই শীর্ষ আল-কায়েদা নেতাকে হত্যা অভিযানের সমস্ত রকম পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। ২০০ প্রত্যক্ষদর্শী, লাদেনের পরিবার, পাকিস্তানের গুপ্তচর প্রধান, সরকার দলের জেষ্ঠ্য মন্ত্রী, সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ আরও অনেকের সাক্ষ্য সম্বলিত এই প্রতিবেদন এতদিন গোপনভাবে সংরক্ষিত ছিল।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতার মূলে প্রতিষ্ঠাগুলোর দক্ষতা বা উদাসীনতা দায়ী কি না। সেটা বের করতে অ্যাবটাবাদ কমিশনকে তদন্ত ক্ষমতাও দেয়া হয়।
কমিশনের ৩৩৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে উঠে আসে সরকারি নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর অযোগ্যতা। সেনাবাহিনীর ‘স্থূল দক্ষতা’ কেই ‘সম্মিলিত ব্যর্থতা’র কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। লাদেনের মত ব্যক্তিত্বের পাকিস্তানে লুকিয়ে থাকা ও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টিতে এই উদাসীনতাকে দায়ী করা হয়।
ডিসেম্বর ২০১১ সালের আফগানিস্তানের তোরাবোরা পর্বতমালার যুদ্ধের পর ওসামা বিন লাদেন ২০০২ সালের মাঝামাঝি সময় পাকিস্তানে পালিয়ে আসেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে লাদেন উত্তর সোয়াত উপত্যকায় যাওয়ার আগে দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের উপজাতি অধ্যুষিত এলাকা বাজাউরে ছিলেন।
সোয়াতে থাকাকালীন সময় লাদেন দেখা করেন খালিদ শাইখ মোহাম্মদের সাথে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার পরিকল্পনা করা হয় ২০০৩-এর প্রথমদিকে। পরিকল্পনার একমাস পরই শাইখ রাওয়ালপিন্ডিতে পাক-মার্কিন যৌথ বাহিনীর হাতে আটক হন। লাদেন এরপরই সোয়াত থেকে পালিয়ে যান।
ওসামা বিন লাদেন উত্তর পাকিস্তানের হরিপুর শহরে বাড়ি ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন। বছর দুয়েক তিনি সেখানে তার দুই স্ত্রী ও সন্তানসন্ততি নাতিদের নিয়ে ছিলেন।
২০০৫ সালের আগস্ট মাসে সবকিছু নিয়ে অ্যাবোটাবাদে চলে যান লাদেন। রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরের অ্যাবোটাবাদে ছয়বছর ছিলেন লাদেন। নিহত হবার আগে পর্যন্ত অ্যাবোটাবাদেই ছিলেন লাদেন।
অ্যাবোটাবাদের বাড়ির তিনটি অংশ ছিল, ‘একটি ছিল খোলা চত্বর। একটি সংযুক্ত অংশ, সেখানে কুয়েতি(লাদেনের প্রধান বার্তাবাহক) ও তার পরিবার থাকতো। আর অবশিষ্টটি ছিল তিনতলা বিশিষ্ট প্রধান ভবন। সেখানে ওপরের দুটি তলায় ওসামা ও তার পরিবার থাকতো। ওসামার ছোট স্ত্রী দ্বিতীয় তলায়, আর বড় দুই স্ত্রী শরিফা ও খায়রা নিচ তলায় থাকতেন। আর ইবরার ও তার স্ত্রী গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকতেন।
লাদেনের পরিবার, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এবং তার কুয়েতির স্ত্রীর সাক্ষ্য অনুযায়ী কমিশন এই আল-কায়েদা নেতার জীবনের পুরো চিত্র অনুধাবনে সক্ষম হয়।(পরিবর্তন)
লাদেনের পরিবার, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এবং তার কুয়েতির স্ত্রীর সাক্ষ্য অনুযায়ী কমিশন এই আল-কায়েদা নেতার জীবনের পুরো চিত্র অনুধাবনে সক্ষম হয়।(পরিবর্তন)
খবর বিভাগঃ
বিশেষ খবর
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়