Saturday, July 6

রাজশাহীতে ছয় মাসে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৫০৩ জনের সাজা

রাজশাহী: রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায়ে মাদকসেবী, মাদক বিক্রেতা ও যৌন হয়েরানির অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযুক্তদের কারা দন্ড ও আর্থিক জরিমানা করছেন। এনিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও স্থানীয়ে প্রশাসনের লোকজন এভাবে দন্ড দেয়োকে ইতিবাচক ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সহায়েতা করছে বলে দাবি করছেন। গত ৬ মাসে জেলার ৯টি উপজেলায়ে ৫০৩ জনকে বিভিন্ন মেয়োদে কারা দন্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে।
বাঘায় বিভিন্ন অপরাধে গত ছয়ে মাসে ৩০ জনকে সাজা দিয়েছেন উপজেলা ভ্রাম্যমাণ আদালত।  দন্ড পাওয়োদের মধ্যে ২৯ জন মাদক সেবনকারী ও একজন যৌন হয়েরানির আসামি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুস সোবহান বিভিন্ন মেয়োদে এসব অপরাধীকে সাজা দেন। একই সঙ্গে জরিমানা করেন ৪৫ জনকে। যার পরিমাণ ১ লাখ ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া পুলিশ কার্যবিধি আইনের ৩৪ ধারায়ে বাঘা থানা পুলিশ আদালতে সোপর্দ করেছে ২৫ জনকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, বাঘা সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়োয়ে এ এলাকায়ে মাদক সেবনের প্রবণতা অনেক বেশি। মাদক সেবনের অপরাধে প্রায়ে পুলিশের হাতে অনেকে ধরা পড়ছে। এদের মধ্যে উপজেলা ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায়ে প্রথমবার অপরাধ করায়ে অনেকে জরিমানা দিয়ে বেরিয়েছেন। আবার একাধিকবার মাদক সেবন করে ধরা পড়ার কারণে অনেকের সাজা হয়েছে।
চারঘাটে গত ৬ মাসে ৬০ জন মাদকসেবীকে বিভিন্ন মেয়োদে কারা দন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদের মধ্যে অধিকাংশ হেরোইন ও ফেন্সিডিল সেবনকারী। এছাড়া নগদ অর্থ  দন্ড করা হয়েছে প্রায়ে ৩০ হাজার টাকা। চারঘাট মডেল থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ মাসে চারঘাট মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুর রাজ্জাক খানের নেতৃত্বে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়ে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ৬০ জন মাদকসেবীকে গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে হাজির করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক মুন্সি মো. মনিরুজ্জামান তাদের কারা দন্ড ও নগদ অর্থ জরিমানা করেন।
গত জানুয়োরি মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়ে অভিযান চালিয়ে ১৭ জন মাদকসেবীকে আটক করা হয়ে। এসময়ে আটককৃতদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হলে ১০ জনকে ৬ মাস এবং ৭ জনকে তিন মাস, ফেব্রুয়োরি মাসে ১৩ জনকে আটক করা হলে ৮ জনকে ৬ মাস ও ২ জনকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অন্য ৩ জনকে তিন মাস, মার্চ মাসে ৯ জনকে আটক করা হলে প্রত্যেককে ৩ মাস করে, এপ্রিল মাসে ১১ জনকে আটক করা হলে তাদের প্রত্যেককে তিন মাস করে, মে মাসে ৪ জনকে আটক করা হলে দুইজনকে ৬ মাস ও অপর দুইজনকে তিন মাস এবং জুন মাসে ৬ জনকে আটক করে ৪ জনকে ছয়ে মাস এবং দুইজনকে তিন মাস করে কারা দন্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
চারঘাট মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুর রাজ্জাক খান জানান, চারঘাটকে মাদকমুক্ত করার লক্ষ্যে প্রতিদিনই মাদকসেবীসহ মাদক ব্যবসায়েীদের ধরতে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে। এরই ধারাবাহিকতায়ে গত ৬ মাসে মাদকসেবীদের আটক করে জেল-জরিমানা করা হয়েছে।
মোহনপুরে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের পরিমাণ যেমনটি বেড়েছে তেমনি দেয়ো হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা। থানায়ে নিয়েমিত মামলার পরও ভ্রাম্যমাণ আদালতের কারাদন্ডে ব্যবস্থায়ে গত ৬ মাসে ৬৪টি কারা দন্ড দেয়ো হয়েছে। পুলিশ সূত্র জানায়ে, মোহনপুর উপজেলায়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের তুলনায়ে মাদক অপরাধ বেশি সংঘটিত হয়েছে। থানায়ে বিভিন্ন ধরনের নিয়েমিত মামলা দায়েরের পরও ভ্রাম্যমাণ আদালতে চলতি বছরের ৬ মাসে ৬৪ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়ো হয়েছে। মাদক তৈরি, মাদক পরিবহন, মাদক সেবন, মাদক ব্যবসার দায়ে ৬১ জন, যৌন হয়েরানির দায়ে ২ জন ও প্রকাশ্যে জুয়ো খেলানোর জন্য ১ জনকে বিভিন্ন মেয়োদে কারা দন্ড ও অর্থ  দন্ড প্রদান করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের আবদুর রশিদ বলেন, ‘থানার মামলায়ে হয়েরানি ও নির্যাতন বাড়ে। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজায়ে এ ধরনের সমস্যা কাটাতে হয়ে না। এ ব্যবস্থা আমার কাছে ভালো বলে মনে হয়ে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শামীম আহম্মেদ বলেন, ‘অপরাধের ধারা অনুযায়েী আইনানুগভাবে অপরাধী প্রমাণিত হলে বিভিন্ন মেয়োদে কারা দন্ড ও অর্থ দন্ড দেয়ো হয়ে থাকে।
পুঠিয়ায় এবছরের ৬ মাসে ৪৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১০২ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়োদে সাজা ও জরিমানা আদায়ে করা হয়েছে। এর মধ্যে মাদকদ্রব্য বিক্রি ও সেবনকারী বেশি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফর রহমান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহিন আকতার সুমির অধীনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়ে। এতে চলতি বছরের জানুয়োরি মাসে ৫টি, ফেব্রুয়োরি মাসে ৩টি, মার্চ মাসে ৮টি, এপ্রিল মাসে ৭টি, মে মাসে ৩টি ও জুন মাসে ২১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়ে। এর মধ্যে ১টি যৌন হয়েরানি মামলা রয়েছে। এছাড়া মোটরযান অধ্যাদেশে রয়েছে ১৬টি। বাকি মামলাগুলো মাদকদ্রব্য সেবন ও বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
গোদাগাড়ীতে গত ৬ মাসে ৬১টি মামলার মাধ্যমে মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়েী ও খাদ্যে ভেজাল মেশোনোর অভিযোগে শতাধিক ব্যক্তিকে বিভিন্ন মেয়োদে কারা দন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে ৩৯টি মাদক সংক্রান্ত মামলা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম তুহিনুর আলম বলেন, ‘প্রতিমাসেই ১০-১২টি মাদকবিরোধী অভিযানসহ ভেজালবিরোধী অভিযান চালিয়ে থাকে ভ্রাম্যমাণ আদালত।’
গোদাগাড়ী থানা পুলিশ সূত্র জানায়ে, খুচরা মাদক ব্যবসায়েী ও মাদক সেবনকারীদের আটক করার পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে সোপর্দ করা হয়ে। ভ্রাম্যমাণ আদালত সর্বনিম্ন ৩ মাস ও সর্বোচ্চ ২ বছর কারা দন্ডসহ আর্থিক জরিমানা করেন।
মাদকদ্রব্য বিক্রি, সেবন ও ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বিক্রির অভিযোগে বাগমারায়ে গত ৬ মাসে ১৩ জনকে জেল-জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদের মধ্যে বেশিরভাগই মাদকের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এবর্ছ উপজেলায়ে মাদকদ্রব্য বিক্রি, সেবন, প্রকাশ্যে ধূমপানসহ বিভিন্ন অপরাধে ভবানীগঞ্জ পৌরসভার সাদ্দাম হোসেন, চাম্পাকুড়ির শাহীন আহমেদ, মচমইলের আবদুল মতিন মিঠু, দুর্গাপুর উপজেলার আলিয়োবাদ গ্রামের জাহিদ হাসান, বাগমারার তাহির একডালা গ্রামের আবদুল হাকিম, মোহাম্মদপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম, রনসিবাড়ীর রিপন, নামকানের খোকন, ভবানীগঞ্জের বাবু, দেউলিয়োর মোমিন, হাসানপুরের মুনির, পাহাড়পুরের রকেট, জগদ্বীশ চন্দ্র প্রামাণিককে বিভিন্ন মেয়োদে কারা দন্ড প্রদান ও জরিমানা করেন। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়েন্ত্রণ আইন, মাদকদ্রব্য নিয়েন্ত্রণ আইনসহ বিভিন্ন ধারায়ে ওইসব অপরাধীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল-জরিমানা প্রদান করা হয়েছে।
বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল হামিদ জানান, পুলিশি তৎপরতা ও ভ্রাম্যমাণ আদালত অব্যাহত থাকায়ে মাদক ব্যবসায়েীদের দৌরত্ম্য প্রশাসনের নিয়েন্ত্রণে আছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদেকুল ইসলাম জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের তৎপরতার কারণে উপজেলায়ে মাদকদ্রব্য নিয়েন্ত্রণসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকা- নিয়েন্ত্রণে আছে।
দুর্গাপুর উপজেলায়ে মাদকদ্রব্য, খাদ্য নিয়েন্ত্রন, মোটরযান, ওজন কারচুপি, শিশুশ্রম সড়ক দখল করে ব্যবসাসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত ছয়ে মাসে ৫৩ জন মাদকসেবীকে বিভিন্ন মেয়োদে কারা দন্ড ও অর্থ দন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদের মধ্যে বেশিরভাগ মাদক ব্যবসায়েী ও মাদক সেবনকারী।
দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১ জানুয়োরি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দুর্গাপুর থানা এলাকায়ে মাদকবিরোধী, খাদ্য নিয়েন্ত্রণ, মোটরযান, শিশুশ্রম, সড়ক দখল করে ব্যবসার অভিযান পরিচালনা করে ৪৯ জন অপরাধীকে গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারা দন্ড ও অর্থ দন্ড দেয়ো হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এনামুল হক এ  দন্ড দেন। গত জানুয়োরি মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়ে অভিযান চালিয়ে দুইজন মাদকসেবীকে ৬ মাস করে সশ্রম কারা দন্ড, রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল চালানোর অপরাধে ১০ জনের প্রত্যেককে ৫০০ টাকা করে জরিমানা, ওজন কারচুপির জন্য ৪ জনকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেন। ফ্রেব্রুয়োরি মাসে ১ জন মাদকসেবীকে গ্রেফতার করে ৬ মাসের সশ্রম কারা দন্ড প্রদান করেন। মার্চ মাসে ১ জন মাদকসেবীকে আটক করে ১ বছর সশ্রম কারা দন্ড প্রদান করেন। এপ্রিল মাসে এক নারী মাদক ব্যবসায়েীসহ ৩ জন মাদকসেবীকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ। এর মধ্যে একজনকে ১ হাজার টাকা জরিমানা ও ২ মাসের বিনাশ্রম কারা দন্ড, নারী মাদক ব্যবসায়েীকে দুই হাজার টাকা অর্থ দন্ড, অপর মাদকসেবীকে ৬ মাসের কারা দন্ড প্রদান করেন। মে মাসে দুই নারী মাদক ব্যবসায়েীসহ ৬ জনকে ৭ দিনে বিনাশ্রম কারা দন্ড, রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি চালানোর অপরাধে মোটরযান আইনে ১ জনকে ২০০ টাকা জরিমানা, খাদ্য নিয়েন্ত্রণ আইনে ৩ জনকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করেন। জুন মাসে রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি চালানোর অপরাধে মোটরযান আইনে ৭ জনকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা, শিশুশ্রমের অপরাধে ১ দোকান মালিককে ৫০০ টাকা জরিমানা ও সড়ক দখল ব্যবসা করার অপরাধে ২ জনকে ১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা ও রাস্তায়ে যানজট সৃষ্টির অপরাধে মোটরযানের চালককে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ এনামুল হক।
তানোরে গত ৬ মাসে ১৫ জনকে বিভিন্ন মেয়োদে কারা দন্ড ও ৫ জনকে অর্থ দন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এবছরের ১ জানুয়োরি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ২০ জনকে গ্রেফতার করে কারা দন্ড ও অর্থ দন্ড দিয়েছেন।
পবা উপজেলায়ে গত ৬ মাসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৬১ জনকে বিভিন্ন মেয়োদে কারা দন্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া আড়াই লাখ টাকার বেশি জরিমানা আদায়ে করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজ্জাকুল ইসলাম জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে তাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।--ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়