Saturday, July 20

কুকুরের আক্রমণের শিকার হলেন সাবেক সেনা প্রধান মঈন উ আহমেদ


ঢাকা: জেনারেল (অব:) মঈন উ আহমেদ কুকুরের আক্রমণের শিকার হয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, নিউ ইয়র্কে জেনারেল মঈন তার পাশের বাড়ির মালিকের কুকুরের দ্বারা আক্রমণের শিকার হন। তিনি বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এই সময়ে কুকুর তার ওপর আক্রমণ চালায়। কুকুরের আক্রমণে তিনি মাটিতে পরে গেলে তার নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়। তবে পরে তাকে আর হাসপাতালে নেওয়ার দরকার হয়নি। কারণ তার মামী শাশুড়ি সিস্টারই প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠন। আক্রমণের শিকার হওয়ার পর সবাই ভয় পেয়ে যান। কিন্তু প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে উঠার পর তাকে বিশ্রামে রাখা হয়।

এদিকে কুকুরের আক্রমণে আহত হলেও তার শরীরের অন্য সব রোগের অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছে তার ঘনিষ্টরা। তারা জানান দীর্ঘ চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে উঠতে শুরু করেছেন। এখন তার শরীরের উন্নতি হওয়া ছাড়াও তার ওজনও কিছুটা বাড়ছে। তবে চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন তাকে কেমো নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে। তাকে প্রতিমাসে একটি করে কেমো নিতে হচ্ছে।

তবে তিনি অর্থ সংকটে রয়েছেন আর এই অর্থ সংকটের কারণেই তাকে নিউ ইয়র্কেই থাকতে হচ্ছে। কারন এখানে চিকিৎহা খরচে তিনি কিছুটা ছাড়ও পেয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যকোনো রাষ্ট্রে থাকলে এটা পাওয়া সম্ভব নয় বলেও তিনি অনেক কষ্ট করেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটিতে তার মামী শাশুড়ির বাড়িতে থাকছেন। তিনি যে ঘরে থাকেন তা আলো বাতাসের ব্যবস্থাও নেই। যখন তিনি অস্থির হয়ে উঠেন তখন মাঝে মাঝে তার ছেলের কাছে ফ্লোরিডাতে যান। এরপর আবার চলে আসেন। কারণ তাকে কেমো নিতে হচ্ছে।

তার পরিবারের সূত্র জানায়, এখন তিনি যেই বাসাতে থাকছেন সেটি ছোট। এক সময়ে জেনারেল মঈন অনেক বড় বাসায় থেকেই তার অভ্যাস। আর এই অভ্যাসের কারণেই তিনি অনেক কষ্ট করছেন। মাঝে মাঝেই তিনি রাতের বেলা বাসায় ঢুকতে গিয়ে সিঁড়ি থেকেও পরে গেছেন। সিঁড়ি থেকে পরার কারণে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নেন। এতে তার শরীরেরও ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে মে মাসে নানা হয়েছেন জেনারেল মঈন। তার মেয়ে সাবরিনা বিয়ের আট বছর পর সন্তানের মা হয়েছেন। তার একটি ছেলে সন্তান হয়েছে নিউ ইয়র্কে। সাবরিনা তার বাবা-মায়ের কাছে গিয়েছিলেন। সেখানেই রয়েছেন। কয়েকদিনের মধ্যেই ফিরে আসার কথা রয়েছে। তিনি দেশে একটি বিদেশি সংস্থায় চাকরি করেন। সেখান থেকে ছুটি নিয়ে গেছেন। নাতিকে পেয়ে খুশি জেনারেল মঈন ও নাজনীন মঈন। এই প্রথম বারের মতো তারা নানা হন।

এদিকে জেনারেল মঈনের ছেলে ফ্লোরিডাতে আছেন। সেখানে তিনি এ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন। তবে পাস করার পর এখনও ভালো চাকরি পাননি। এই কারণে অড জব করছেন। এই ব্যাপারে তার আত্মীয় জানান, ও এতো মেধাবী ছাত্র ছিল। সে খুব ভালো ফলাফল করেছে। ফলাফল করার পরও ভালে চাকরি পাচ্ছে না। এর কারণ হচ্ছে সে মুসলিম। এই কারণে এখন চাকরি না পাওয়ার কারণে তার সাবজেক্ট পছন্দ করাও ঠিক হয়নি বলে কেউ কেউ বলছেন।

এদিকে জেনারেল মঈন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ কষ্টে রয়েছেন বলে সূত্র জানায়। সেখানে তিনি ও তার স্ত্রী কোনো কাজ করছেন না। নিউ ইয়র্কে থাকার খরচ বেশি। এই কারণে এককভাবে বাসা নিয়ে থাকতে পারছেন না। সেটি থাকতে হলে বেশি টাকা লাগবে। চলার জন্য গাড়ি লাগবে। জেনারেল মঈনের স্ত্রী নাজনীন মঈন গাড়ি ড্রাইভ করতে পারেন না। জেনারেল মঈনেরও শরীরের অবস্থা এমন যে তিনিও গাড়ি চালাতে পারবেন না। তার শরীর একটু উন্নতি হলেও পুরোপুরি সুস্থ নন। তবে হাঁটা চলাফেরা করতে পারছেন। তা হলেও সার্বক্ষণিকভাবে নজরদারীতে আছেন। আর এই কারণেই তারা নিউ ইয়র্কের মামীর বাসায় থাকেন।

এদিকে জেনারেল মঈনের জন্য ঢাকা থেকে তা বাসার ভাড়া সেখানে পাঠানো হয়। সেই অর্থে তার পুরো খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এই কারণে তার ভাইয়েরা যখন বিদেশে যান তখন তার জন্য খরচের টাকা দেন। তবে তা বেশি নয়। এই ব্যাপারে একটি সূত্র জানায়, ভাইয়েরাও এখন আর বেশি টাকা দিতে চাইছেন না। তাদেরও হিসাবের টাকা। তিনি বলেন, অনেকেই আমার ভাইদের সম্পর্কে বলেন তারা নাকি অনেক টাকা আয় করেছেন। কিন্তু আসলে এটা সত্য নয়। এতোদিন ধরে তারা ব্যবসা করছেন। টাকাতো থাকতেই পারে। তাই বলে ২০০৭-২০০৯ সালের মধ্যে কোটিপতি বনে গেছেন বলে যেসব কথা বলা হচ্ছে তা ঠিক নয়।

উল্লেখ, জেনারেল মঈন উ আহমেদ ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর বিদেশ যান। বিদেশে যাওয়ার পর তিনি প্রথমে ফ্লোরিডাতে যান। সেখানে ছেলের কনভোকেশন অনুষ্ঠানেও যোগ দেন। পরে সেখানে অবস্থানকালে হঠাৎ করেই অসুস্থ হন। পরে তার শরীরে ক্যান্সার রোগ ধরা পড়ে। তাকে নিয়ে আসা হয় তার মামী শাশুড়ির বাসায় নিউ ইয়র্কে। সেখানে একটি হাসপাকালে চিকিৎসা করা হয়। অবস্থার উন্নতি হলে তার দেহে সফল অস্ত্রোপচার হয়। পরে তার বোন মেরুতেও সমস্যা দেখা দেয়। হঠাৎ তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তার বোনমেরোতেও সমস্যাটি মারাত্মক আকার ধারণ করে সেটি তার মাথার নিচের অংশ থেকে উৎপত্তিস্থল বলেই অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। এই কারণে চিকিৎসক বলেছেন তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন তাকে ততোদিনই কেমো দিয়ে রাখতে হবে।

তার পরিবারের সূত্র জানায়, এই কারণেই জেনারেল মঈন আপাতত দেশে ফিরছেন না। সেখানেই থাকবেন। তার স্ত্রীও সেখানেই আছেন। তিনিও ফিরছেন না কারণ তারও শরীরের অবস্থা ভালো নয়। তিনি ডায়াবেটিসের রোগী। এছাড়াও কয়েকদিন আগে পায়েও সমস্যা হয়েছে। এক সময়ে যে জেনারেল মঈনের নাম অনেকের কাছেই আতঙ্ক ছিল। এখন তিনি নিজেই প্রতিনিয়ত অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করছেন।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়