Saturday, July 13

বিদ্যালয়ে যায় না ভাসমান বেঁদে পল্লির শিশুরা

চুয়াডাঙ্গা: প্রান্ত, ইরান্ত, কুকুলা, যুবরাজ, আরবি ও পটা এরা সবাই বেঁদেপল্লির শিশু। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি পল্লিকে ঘিরে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাঘুরিই এদের প্রধান কাজ। অধিকাংশ সময় পিতা-মাতা ঠিকমত এদের খোঁজ রাখেন না। 

শুরু থেকেই অবহেলা আর অনাদরে বেড়ে ওঠা বেঁদেপল্লীর এসব শিশুরা অভিভাবকরা জানেন না সরকার শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে বিপুল অর্থ ব্যয় করে গড়ে তুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অসংখ্য শিক্ষক। 

মাস শেষে বেতন তুলতে শিক্ষকগণ ভুল না করলেও এসব পল্লির শিশুদের স্কুলগামী করতে তাদের রয়েছে অনীহাসহ দায়িত্বহীনতা। বেঁদেপল্লির শিশুদের এ চিত্রটি চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলা শহরের ব্রিজের নিচে আশ্রয় নেয়া একদল বেঁদে পরিবারের। 

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা হলেও এরা দু-তিন সপ্তার জন্য এ এলাকার অস্থায়ী বাসিন্দা। পলিথিনে ছাওয়ায় ছোট ছোট ঘর এদের রাত যাপনের ঠিকানা। 

এ পল্লির নারী-পুরুষেরা জীবিকার তাগিদে সকালে বের হয় বানর খেলা ও তাবিজ-কবচ বিক্রি এবং ঝাঁড়ফুঁকের মাধ্যমে চিকিৎসা করার কাজে। কাজের সময় তারা রেখে যায় এ সকল শিশুকে।

নতুন দিনের অতিথি আগামী দিনের সমাজ নেতা এসব শিশু সারাদিন দৌঁড়ঝাপ আর ধুলোমাটি মাখামাখি করে ব্যস্ত সময় পার করে। অবুঝ শিশুরা জানে না ভবিষ্যতে তারা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। এ পল্লির বয়োবৃদ্ধ আব্দুস সাত্তারের সাথে শনিবার সকালে আলাপকালে তিনি  বলেন, ‘বাবাগো মোগর পুলাদের লিকাপড়া শিকিয়ে কী করুম? লিকাপড়া শিকিয়ে চাকরিবাকরি পেতি হুলে অনেক ট্যাকা লাগে। মোরা অতো ট্যাকা কনে পামু?’ 

জহুরুল বলেন, ‘বাপ-দাদার আদত পেশা আঁকড়ে ধরে জীবনযুদ্ধে আমরা এখনও বেঁচে আছি। আমাদের পোলারাও এমনিভাবে বেঁচে থাকবে। 

এদেরকে এখন থেকেই সেইভাবে তৈরি করা হচ্ছে। শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত এসব শিশু বড় হয়ে হয়তো একদিন পৈতৃক পেশাকেই বেছে নেবে নতুবা ভালো পরিবেশের অভাবে সমাজের বোঝা হয়ে ছড়িয়ে পড়বে সমাজের নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। 

আধুনিক জনগোষ্ঠী এসব বেদে নর-নারীর কুসংস্কার বিশ্বাস না করলেও কিছু মানুষ ঝাঁড়ফুঁকের সনাতন পদ্ধতিকে টিকিয়ে রাখার ফলে এরা এখনও ছুটে যায় তাদের কাছে। আর এ ধারায় বিশ্বাসী বেঁদে অভিভাবকরা সন্তানদের তাদের মতো করে গড়ে তুলতে এখনও বদ্ধপরিকর। দিন বদলের হাওয়ায় অনেক জনগোষ্ঠীর উন্নতি চোখে পড়লেও বেঁদেপল্লিীর এ অবস্থা কবে দূর হবে তা অনেকের কাছেই অজানা।---ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়