Friday, July 19

নিজামী-মুজাহিদ-সাঈদীর আসনে এবার বিএনপির প্রার্থী

ঢাকা: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির দণ্ডাদেশ দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ তিন নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও কামারুজ্জামানকে।মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত হলে আর নির্বাচনে অংশ নেওয়া যাবেনা, এভাবেই নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করছে। উচ্চ আদালতে আপিলের কারণে আগামী নির্বাচনের আগে সাঈদী-মুজাহিদ ও কামারুজ্জামানের ফাঁসি যদি কার্যকরে দেরিও হয় তবু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোন সুযোগ থাকছে না তাদের। অন্যদিকে দলটির আমির মাওলানা মতিউর রহমানের বিরুদ্ধেও যে কোনদিন মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় হবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, নিজামীরও কঠিন শাস্তির দণ্ড হতে চলেছে। সেক্ষেত্রে সাবেক এই কৃষি ও শিল্প মন্ত্রীও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অযোগ্য হবেন।
 
জামায়াত নেতাদের কপাল পুড়লেও আশায় বুক বাঁধছেন সংশ্লিষ্ট আসনগুলোর বিএনপি নেতারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দণ্ডপ্রাপ্ত এসব জামায়াত নেতারা দলে,বিশেষত নির্বাচনী এলাকায় কোন বিকল্প তৈরি হতে দেননি।ফলে তাদের অবর্তমানে যে জামায়াতের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নেবেন সেই পরিস্থিতি নেই। এই অবস্থায় দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতাদের নির্বাচনী আসনে বিএনপির প্রার্থীরা জোরেশোরে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার  প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
 
জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নির্বাচনী আসন ছিল পিরোজপুর-১। আসন  পুনর্বিন্যাসের কারণে এ আসনের সীমানায় পরিবর্তন এসেছে। সাঈদীর নিজ এলাকা জিয়ানগর উপজেলা চলে গেছে পিরোজপুর-২ এর মধ্যে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনাল তাকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দিয়েছেন। তাই আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ থাকছে না।
 
জানা গেছে, পিরোজপুর জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন পিরোজপুর-২ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন। বিএনপির নির্বাহী কমিটির এই সদস্য এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে দিয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
 
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে অধ্যাপক আলমগীর হোসেন বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর অবস্থা আর ভাল নেই। দলের চেয়ারপারসন যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন তবে আমি আগামী সংসদ নির্বাচনে পুনর্গঠিত পিরোজপুর-২ আসন থেকে প্রার্থী হব। আশা করি এলাকাবাসীর সমর্থন আমার সঙ্গে থাকবে।
 
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ চারটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রতিবারই বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছেন। সবশেষ নির্বাচনে তিনি চারদলের প্রার্থী হিসেবে ফরিদপুর-৩ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে তখন স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন ও দ্বিতীয় হন। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনাল মুজাহিদকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দিয়েছেন। তাই আগামী নির্বাচনে আর অংশ নেয়া হচ্ছে না আলবদর বাহিনীর কমান্ডারের। সূত্র জানায়, এবার চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ওই আসনে দল ও জোটের প্রার্থী হচ্ছেন।
 
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মাদ কামারুজ্জামান গত দুটি সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও এবার আর প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই তার। তার আসন শেরপুর-১ থেকে এবার মনোনয়ন চাইবেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার হায়দার আলী।
 
জানা গেছে, সাবেক সচিব হায়দার আলী আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে এখন থেকেই জোর চেষ্টা চালচ্ছেন। দল থেকেও না-কি সবুজ সংকেত পেয়েছেন তিনি। কামারুজ্জামানের অনুগামীদের সঙ্গে বরাবরই হায়দার আলী ও বিএনপির একাংশের সম্পর্ক ভাল না। কামারুজ্জামানের লোকেরা একাধিকবার হায়দার আলীর গাড়িতে হামলাও করেছিল। সব মিলিয়ে তিনি ও তার সমর্থকরা জামায়াতের ওপর নাখোশ। এবার আর সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননা সাবেক এই আমলা।
 
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন আছেন জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী। চারদলীয় সরকারের সময় প্রথমে কৃষি এবং পরবর্তীতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক এই নেতা। নিজামী পাবনা-১ আসন থেকে চার দলীয় জোট আমলে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
 
সূত্র জানায়, নিজামী দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তার আসন থেকে বিএনপি নেতা মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তিনি এরশাদের আমলে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। স্থানীয় ভাবে জনপ্রিয় এই নেতাকে এবার নিজামীর পরিবর্তে এই আসন থেকে মনোনয়ন দিতে পারে বিএনপি।গতবার তিনি সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে অল্প ভোটে প্রানিসম্পদ মন্ত্রী লতিফ বিশ্বাসের কাছে হেরে যান।
সূত্র জানায়, জামায়াত নেতাদের দণ্ডের কারণে শূ্ন্য আসন থেকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বিএনপির নেতাদের প্রস্তুতি নিতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দিয়েছে। এলক্ষ্যে স্থানীয় নেতারাও প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। তাই সব সময়ই নির্বাচনের ব্যাপারে প্রস্তুত থাকেন। তাই সবখানেই নেতাকর্মীদের নির্বাচনের ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনও ঈদের পর বেশ কয়েকটি জেলায় সফর করবেন। তার এই সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা।
 
নির্বাচন কমিশন কী বলছে:
সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্রাইব্যুনাল থেকে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিতদের নির্বাচনের অযোগ্য করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী দু-চার দিনের মধ্যে কমিশনের সুপারিশ আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে যুদ্ধাপরাধীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য করা হলেও মানবতাবিরোধীদের বিষয়টির উল্লেখ নেই। বিষয়টি আরও স্পষ্ট করার জন্য আইন সংশোধনের সুপারিশ করা হচ্ছে।
সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা সম্পর্কে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২ ধারায় বলা আছে, কেউ জাতীয় বা আন্তর্জাতিক আদালত অথবা ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দণ্ডিত হলে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য হবেন।
 
এ বিষয়ে কমিশন সচিবালয়ের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ‘যুদ্ধাপরাধ’ শব্দটি দ্বারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সব অপরাধকে বুঝানো হয় না বিধায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২(ও) ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করা হচ্ছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কেউ জাতীয় বা আন্তর্জাতিক আদালত অথবা ট্রাইব্যুনালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩-এর আওতাধীন যেকোনো অপরাধে দণ্ডিত হলে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য হবেন।


সূত্র ঢাকা টাইমস

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়