Wednesday, July 17

‘সব ঠিক আছে, ফাঁসি হয়নি’

ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে করা মামলার রায় পড়ার সময় ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়াতেই বসা ছিলেন গোলাম আযম। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে ২৪৩ পৃষ্ঠার রায়ের ৭৫ পৃষ্ঠা সারসংক্ষেপ পড়া হয়। এসময় নিশ্চুপ হুইল চেয়ারে বসে ছিলেন তিনি। রায় পড়া শেষে বাবার কাছে এগিয়ে গেলেন আযম পুত্র আব্দুল্লাহিল আমান আযমী। উৎকণ্ঠিত গোলাম আযমকে বুঝিয়ে বললেন, ‘সব ঠিক আছে, ফাঁসি হয়নি।’ এ সময় হাস্যজ্জ্বল ছিলেন আযমী।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গোলাম আযমের শাস্তি কি হতে পারে তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছিল গত কয়েক মাস ধরেই৷ গত সোমবার সে সবের অবসান হয়েছে৷ ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেছেন৷
 
প্রত্যক্ষদর্শী ‍সূত্রে জানা গেছে, রায়ের পড়া শেষ হলে উৎকণ্ঠায় ছিলেন গোলাম আযম। তার ফাঁসি হয়েছে কি-না তা বারবার জানতে চাচ্ছিলেন তিনি। এসময় তার চোখে মুখে ছিল হতাশার ছাপ। বাবাকে শান্ত করতে ছেলে আযমী হাসতে হাসতে বলছিলেন, সব ঠিক আছে। ফাঁসি হয়নি। জেল হয়েছে। ছেলে কথা শুনে পরে শান্ত হন গোলাম আযম।
 
এই রায় ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুক এবং বাংলা ব্লগে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকে৷ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমীর মন্তব্য আঘাত করেছে অনেককে৷ বাংলা ব্লগ আমরা বন্ধু ডটকম-এ এই বিষয়টি তুলে এনেছেন ব্লগার টুটুল৷
 
তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, ‘‘বিষয়টা আসলে কি নির্দেশ করে?'' টুটুল লিখেছেন, ‘‘যদি জামাতের সকল নেতার ফাঁসি ঘোষণা করা হয় তবুও যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের আপরাধের কাছে কিছুই নয়৷ গোলাম আযম ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের সর্বাধিনায়ক৷ তার নির্দেশেই সকল অপরাধ সংঘটিত হয়েছে৷''
 
গোলাম আযমকে কারাদণ্ড দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় সামহয়্যার ইন ব্লগে রেজা ঘটকের লেখার শিরোনাম, ‘‘৪২ বছরের ভুল রাজনীতি আর দুর্বল নেতৃত্বে বাংলাদেশ দিশেহারা৷'' বিস্তারিত নিবন্ধের একাংশে তিনি লিখেছেন, ‘‘গোলাম আযমের রায়ের সঙ্গে সঙ্গেই এখন আর দেশে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ বলে কিছু নেই৷ এখন নতুন প্রজন্মের উচিত হবে ১৭ কোটি মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন নিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক দর্শন ঠিক করা৷ নইলে বাংলাদেশ আবারো পেছনের দিকে হাঁটা শুরু করবে৷''
 
আমার ব্লগ ডটকমে এই বিষয়ে সাইদ জামানের লেখার শিরোনাম, ‘‘হায়রে কি শ্রদ্ধা!'' বয়স বিবেচনায় গোলাম আযমকে কারাদণ্ড দেওয়ার রায় মানতে পারেননি এই ব্লগার৷ তাঁর মনে হয়েছে, এভাবে গোলাম আযমের প্রতি ‘‘শ্রদ্ধা'' দেখানো হয়েছে৷ সাইদ জামান লিখেছেন, ‘‘আমার যে বোনটি মাত্র ১২ বছর বয়সে ধর্ষিত হয়েছিল তার প্রতি কোনো শ্রদ্ধা নেই৷ আমার যে অন্তঃসত্ত্বা মাকে বেয়োনেটের খোঁচায় প্রাণ দিতে হয়েছিল তার প্রতি কোনো শ্রদ্ধা নেই৷''
 
গোলাম আযমের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলনরত এক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির ছবির নীচে শওকত আরা লিখেছেন, ‘‘এই ছবিটা দেখে কাঁদছি৷ একজন বয়স্ক ভদ্রলোক – দেখে বোঝা যাচ্ছে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে৷ উনি হয়ত মুক্তিযোদ্ধা, হয়ত এই গোলাম আযমের বাহিনীর কারণে '৭১ হারিয়েছেন আপনজনদের৷ ৪২ বছর বুক বেঁধেছিলেন বিচারের আশায়৷ আজ আশা করার আর কিছু রইল না৷'--ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়