কুমিল্লা: কুমিল্লায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি এবং স্মৃতি চিহ্নগুলো শুধু হারিয়েই যাচ্ছে না। চরম অবহেলার ও শিকার হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি ভাবে সঠিক নেতৃত্বের অভাবেই কুমিল্লার নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলো সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিবছরই কবির জন্মবাষির্কী ও মৃত্যুবার্ষিকীতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করা হয়। এতে প্রচুর টাকা ও ব্যয় হয়। অথচ সে টাকার অংক থেকে সামান্য টাকা ব্যয় করলে তার স্মৃতি চিহ্নগুলো সংরক্ষণ করা সম্ভব। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর জীবন ও কর্মের মধ্যে কুমিল্লা এক তাৎপর্যপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। কবিতার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনগুলো কাটিয়েছেন এই কুমিল্লায়। ১৯২১ সালের এপ্রিল থেকে ১৯২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কবি ৫ বার কুমিল্লায় আসেন। এ ৫ বারে তিনি ১১ মাসের বেশি সময় কাটান কুমিল্লা শহর ও জেলার মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুরে। কবির প্রেম,বিয়ে, বিচ্ছেদ, গ্রেফতার, সমাবেশ, কাব্য, গান, গজল ও সংস্কৃতি র্চচার বহু ঘটনার নীরব স্বাক্ষী শহরের কান্দির পাড়ের প্রমীলাদের বাড়ি, ধর্মসাগরের পশ্চিমপাড়ে কবিতাও গান লেখার স্থান, ঝাউতলায় গ্রেফতার, রাজগঞ্জের মিছিল, বসন্ত মজুমদারের বৈঠক খানায় গান ওজলসায় অংশগ্রহন, নানুয়া দীঘির পাড়ের সুলতান মাহমুদ মজুমদারের বাড়ি, দারোগা বাড়ি, ইউসুফ স্কুল রোড, মহেশাঙ্গন, টাউন হল ময়দান, উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতঙ্গ কুমার শচীন দেব বর্মনের বাড়ি, নবাব বাড়ি, জানুমিয়ার বাড়ি, কান্দির পাড়, রানীর দীঘির পাড়ে রয়েছে অসংখ্য স্মৃতি। এছাড়া মুরাদনগরের দৌলতপুরের নার্গিস এর মামা আলী আকবর খাঁর বাড়ি নজরুলের স্মৃতি বহন করে। এ জায়গাগুলোর স্মৃতি রক্ষার্থে ১৯৮৩ সালে গঠন করা হয় নজরুল স্মৃতি রক্ষা পরিষদ। কুমিল্লা মুরাদনগরের দৌলতপুরে এ নিয়ে অনেকবার সভা ও হয়। ১৯৮৩ সালে নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলোতে টিনের তৈরি স্মৃতি ফলক দিয়ে চিহ্নত করা হয়। ১৯৮৫ সালে স্মৃতি রক্ষার্থে ৯টি সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা দীর্ঘ ২৮ বছরে ও তা কার্যকর হয়নি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক সৈয়দ আমিনুর রহমানের সহযোগিতায় এ কাজ করা হলে ও তিনি কুমিল্লা থেকে বদলী হবার পর এ সম্পর্কিত সকল র্কাযক্রম ঝিমিয়ে পড়ে। পরে ১৯৯২ সালে চিহ্নিত জায়গাগুলো সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করে পাথরের ফলক লাগানো হয়। এসব স্মৃতি ফলকে নজরুলের গান, কবিতা, বানী ও পরিচিতি লেখা হয়। এতে করে এ স্মৃতি ফলকগুলো নজরুল প্রেমীদের কাছে দর্শনীয় হয়ে ওঠে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে নজরুলের স্মৃতিচিহ্নগুলো এখন নিশ্চিহ্নের পথে। কুমিল্লা শহরের প্রাণ কেন্দ্র কান্দিরপাড় থেকে ধর্মপুর পর্যন্ত সড়কটির নামকরণ করা হয় নজরুল এভিনিউ। কান্দিরপাড় মোড়ে রাস্তাটি শুরু হবার মুখে রাস্তার ইট-সিমেন্টের নাম ফলকটি উল্টে পড়ে গেলেও দীর্ঘ দিনে তা উঠিয়ে বসানো হয়নি। এটির পাশে জমে আছে ময়লা আবর্জনা। কান্দিরপাড় এলাকায় নজরুল এভিনিউ নামের এ সড়কটির উত্তরপাশে বসন্ত স্মৃতি পাঠাগার সংলগ্ন স্থানে একটি নজরুল স্মৃতি ফলক রয়েছে। দুভার্গ্যজনক হলেও সত্যি যে এর পাশে তৈরি করা হয়েছে পৌর সভার বর্তমানে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিন। ভাঙ্গাচোরা এ ডাস্টবিনটির উপচে পড়া ময়লা আর্বজনা স্মৃতি ফলকটিকে এখন গিলে খাচ্ছে। ফলকটির লেখা পড়তে কেউ গেলে তাকে ময়লা দর্শন না করে উপায় নেই। প্রমীলাদের বাড়ির পাশের পুকুরে যেখানে নজরুল সাঁতার কাটতেন তা অনেক আগেই ভরাট হয়ে গেছে। এখন সেখানে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল বিশাল অট্টালিকা। তালপুকুর ও তালপুকুরপাড় নিয়ে তার সৃষ্টিশীল কবিতা এখনও নজরুল কে কুমিল্লাবাসীর মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু তার তালপুকুর একটি অনেক আগেই ভরাট হয়ে গেছে। প্রমীলার বাবার বাড়ি মালিকানা হাত বদল হয়েছে। এখানে এখন অন্য লোকের বহুতল ভবন। পুকুরপাড় আর রাস্তার পাশের স্মৃতি ফলক সরিয়ে বসানো হয়েছে অন্য স্থানে। রাজগঞ্জ বাজারের থানার মোড়ে যেখানে কবি গ্রেফতার হন, সে স্থানের স্মৃতি ফলকটি এখন আর সেখানে নেই।

রানীর দীঘির পশ্চিম-দক্ষিণ কোনে যেখানে কবি এলাকার ছেলেদের নিয়ে আড্ডা দিতেন কবিতা লিখতেন সেখানে একটি স্মৃতি ফলক থাকলেও প্রায় সময় সেখানে জঙ্গল হয়ে থাকে। কুমিল্লার মুরাদনগরের কবি তীর্থ দৌলতপুরে ও নজরুলের স্মৃতি চিহ্নগুলো পড়ে আছে অযতœ অবহেলায়। কুমিল্লা শহর এবং দৌলতপুরের বিভিন্ন স্থানের নজরুল স্মৃতি চিহ্ন সরকারি উদ্যোগে রক্ষণাবেক্ষণ করে দর্শকদের ও নতুন প্রজন্মদের জন্য দর্র্র্র্শনীয় স্থানে পরিণত করা ত্রিশালের পাশাপাশি কুমিল্লার জাতীয় পর্যায়ে নজরুল জন্ম বার্ষিকী পালিত ইউক বা দাবি জানিয়েছেন নজরুল গবেষক ও নজরুল প্রেমীরা।--ডিনিউজ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়