Friday, July 5

তত্বাবধায়ক সিস্টেম গণতন্ত্রের জন্যে সম্মানজনক নয়: প্রধানমন্ত্রী

লন্ডন থেকে: বাংলাদেশে আগামীতে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বৃটিশ ফরেন মিনিস্টার উইলিয়াম হেগ। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় বৃটেন সব সময় পাশে থাকবে বলেও তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করেছেন। 

লন্ডন সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সেন্ট্রাল লন্ডনের অজিভাত এলাকা পার্কলেনের হিলটন হোটেলে বৈঠক করতে এসে উইলিয়াম হেগ এসব কথা বলেন।

বৃটিশ ফরেন মিনিস্টার বলেন, উন্নয়ন সহযোগী দেশ হিসেবে বৃটেন সব সময় বাংলাদেশে শান্তি সমৃদ্ধি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কামনা করে। পারস্পরিক সংলাপের মাধ্যমে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের জন্য গ্রহণযোগ্য একটি পথ বের হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। উইলিয়াম হেগ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শেখ হাসিনা সরকারের নানা সফলতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। বৈঠকে দ্বি-পাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার ইস্যুর পাশাপাশি বৃটিশ বাংলাদেশীদের নানা সমস্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি সাংবাদিকদের এ বিষয়ে অবহিত করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি জানান, বাংলাদেশের রাজনীতিকে  পার্লামেন্ট কেন্দ্রিক করার চেষ্টা ও ওয়েস্ট মিনিস্টারের মতো সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চার কথা উইলিয়াম হেগকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃটেনের মতো সিস্টেম চালু করে নির্দিষ্ট মেয়াদের পর সরকার পরিবর্তনে আওয়ামী জোটের ইচ্ছার কথাও বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি গণতন্ত্রের ঝুঁকিপূর্ণ ও অসম্মানজনক, এটি সবাইকে বুঝতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে বাংলাদেশের ইতিহাসে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নির্বাচন কমিশনই পারে জাতিকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে  জানান, সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনসহ বর্তমান সরকারের অধীনে প্রায় ৬ হাজার সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রায় ৪০ মিনিটব্যাপী এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহযোগিতার জন্য বৃটেন সরকারকে  ধন্যবাদ জানান। উইলিয়াম হেগ জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু ও কাউন্টার টেরোরিজম বিষয়ে ভূমিকার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। এ বিষয়ে বৃটিশ সরকার বাংলাদেশের সাথে একযোগে কাজ করবে বলেও জানান। তিনি রানা প্লাজা দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, গার্মেন্ট শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে তাই এ শিল্পে কর্মরতদের নিরাপদ কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি ও এই শিল্পের বিভিন্ন ঘাটতি পূরণ করতে হবে।

 বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, এ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ জিয়া উদ্দিন আহমদ, লন্ডনস্থ বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস ও প্রধানমন্ত্রীর  প্রেস  সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ আর বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগের সাথে ছিলেন মিনিষ্টার অব স্টেট ও বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ব্যারোনেস সাঈদা ওয়ার্সি। এর আগে গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ দিনের ব্যাক্তিগত সফরে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছলে সেখানে তাকে স্বাগত জানান লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস, শেখ রেহানা, রেজওয়ান সিদ্দিক ববি, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুক, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জালাল উদ্দিন, মিঠু হাসান প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রীর সফর একান্ত ব্যক্তিগত হলেও তাকে বৃটিশ সরকারের পক্ষ থেকে পূর্ণ প্রটোকল দেয়া হচ্ছে বলে জানান দীপু মনি।  আজ  স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা) তিনি বৃটিশ পার্লামেন্টের অলপার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ এবং সন্ধ্যা ৭টায়  যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগসহ বাংলাদেশী কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তার হোটেল স্যুটে বৈঠকে মিলিত হবেন। ৬ই জুলাই তিনি শারীরিক চেকআপ করাবেন। ৭ই জুলাই রোববার শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিবাহোত্তর অভ্যর্থনায় যোগ দেবেন এবং ৮ই জুলাই বিকেলে শেখ হাসিনা বেলারুশের উদ্দেশ্যে লন্ডন ত্যাগ করবেন। এদিকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট শেখ হাসিনার লন্ডন সফরের প্রতিবাদে ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারে দাবিতে পার্ক লেনের হিলটন হোটেলের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও কালো পতাকা প্রদর্শন করেছে। পাশাপাশি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতেও ছিল সরব। এক পর্যায়ে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে।---ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়