Friday, July 5

‘খালেদা জিয়ার সঙ্গে কখনও দেখা হয়নি’


মহিউদ্দীন জুয়েল, চট্টগ্রাম থেকে: অবশেষে মুখ খুললেন জুনায়েদ বাবুনগরী। জানালেন কি হয়েছিল রিমান্ডে। বললেন জিজ্ঞাসাবাদের নামে তার সঙ্গে যা করা হয়েছে তা কোন সুস্থ মানুষ করতে পারে না। ঘুমানোর জন্য অনেক সময় তাকে বালিশ  পর্যন্ত দেয়া হয়নি। ওষুধ পাননি। তিনি যা সত্য তা-ই বলার চেষ্টা করেছেন।
দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের একটি ক্লিনিক ছেড়ে বাড়ি চলে যান হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব। এই সময় তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। হাসপাতালে তার পাশে ছিলেন দুই জামাতা মাওলানা কুতুবুদ্দিন ও আবদুল্লাহ। ছিলেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ও নেতা ইলিয়াস ওসমানী। 
বাবুনগরী রিমান্ডে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকেন। এরপর তাকে গত মাসের ১১ তারিখ চট্টগ্রামের প্রবর্তক মোড়ের বেসরকারি সিএসসিআর ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়। সেখানে টানা ২৩ দিন থাকার পর গতকাল তাকে বাড়ি যাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা।
‘শাপলা চত্বরের ঘটনার পর আপনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর রিমান্ডে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে কি কথা হয়েছিল’-জানতে চাইলে কিছুক্ষণ চুপ থাকেন বাবুনগরী। এরপর ভেবে বলেন, ‘কথা বললে আসলে অনেক কথা বলতে হবে। রিমান্ডে ওরা যা করেছে তা আসলে কোন আইনের পর্যায়ে পড়ে কিনা তা জানি না। আমাকে বারবারই বলা হয়েছিল বিএনপি কত টাকা দিয়েছে। জামায়াতের নেতারা কত কোটি টাকা দিয়েছেন আল্লামা শফীকে। এসব প্রশ্ন শুনে আমি বারবারই বলেছি  হেফাজত কারও কাছে বিক্রি হয়নি। নাস্তিকদের তাড়াতে ঈমানি আন্দোলনে মাঠে নেমেছি আমরা। আমাদের নেতা-কর্মীরা আছে। থাকবে। ইসলামবিরোধী কোন ষড়যন্ত্র এদেশের জনগণ মেনে নেবে না।’
এই বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যতবারই রিমান্ডে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ততবারই এই প্রশ্নটা করেছে। আমি বলেছি বিএনপির নেতাকে আমি সামনাসামনি দেখিনি। খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোনদিন কথাও হয়নি। টাকা দেয়া তো দূরে থাক। এক গ্লাস পানি পর্যন্ত তিনি আমাকে খাওয়াননি। তাদের টাকা দেয়ার বিষয়টি হাস্যকর। আর জামায়াতের কথা তো বাদই দিলাম।’ 
কারাগারে কেমন ছিলেন আপনি? জবাবে বলেন, ‘পায়ের ব্যথায় খুব কাতরিয়েছি। কোন ওষুধপত্র পাইনি। দলের অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে। সবাই মিলে নামাজ আদায় করতাম। দোয়া করতাম দেশের জন্য।’
‘সেদিন শাপলা চত্বরে আসলে কি ঘটেছিল’-এমন প্রশ্নের জবাবে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল দেশের মানুষকে নাস্তিক, ব্লগারদের ইসলামবিদ্বেষী কর্মকাণ্ড জানানো। নবী, রাসুল প্রেমিকদের সচেতন করা। ইসলামী আন্দোলন জোরদার করা। ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়ানো। সে উপলক্ষে সারা দেশ থেকে শাপলা চত্বরে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেছিলো। আমরা চেয়েছিলাম আল্লামা শফী সাহেব এসে কিছু কথা বলবেন। এরপর সেখান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা হবে। সেই অনুযায়ী আন্দোলন চলবে।’ তিনি বলেন, ‘রাতে হঠাৎ করেই নিরীহ আলেমদের ওপর চড়াও হলো পুলিশ। অথচ দেখুন আমরা কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবেই সমাবেশ করছিলাম। কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা হয়নি। পুলিশ এসে কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই টিয়ারশেল, লাঠিচার্জ শুরু করলো। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এমন আচরণ দেখে আমরা হতবাক হয়ে যাই। একসময় দেখলাম মঞ্চকে লক্ষ্য করে আক্রমণ হচ্ছে। এই সময় লোকজনের ছুটাছুটিতে আমি কাত হয়ে পড়ে যাই। এরপর কত হাজার মানুষ আমার গায়ের ওপর দিয়ে গেছে তা জানি না। এতে হাঁটুতে ব্যথা পাই। উঠে দাঁড়াতে পারছিলাম না। তবে সবার কান্নার আওয়াজ আমি শুনেছি। পরদিন আমাকে ধরে গ্রেপ্তার দেখানো হলো। এরপরের কাহিনী তো সবাই জানেন। ২৯ দিন রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালিয়েছে।’ 
‘রিমান্ডে কি কথা হয়েছিল?’-বাবুনগরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথম দফায় রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল সাতদিন। এই সাতদিনে তাদের একটি মাত্র প্রশ্ন ছিল বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া আমাকে কত টাকা দিয়েছেন। জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে অর্থের বিষয়ে কি কি কথা হয়েছে। এসব প্রশ্নের উত্তর যখন আমি কিছুই দিতে পারিনি তখন ভাল ব্যবহার করতো না। পরের রিমান্ডে অবশ্য হুজুর বলতো।’
এই বিষয়ে হেফাজত মহাসচিব আরও বলেন, ‘রিমান্ডে পুলিশের এক কর্মকর্তা আমাকে বলেন- হুজুর কোন কিছু লুকিয়ে লাভ নেই। আপনাকে আরও বহুবার এখানে আসতে হবে। আপনি বোধহয় জানেন না ২৭টি মামলা হয়েছে আপনার নামে। আপনার কর্মীরা তো গাছ কেটে সাফ করে ফেলেছে। ৩০০’র বেশি গাছ কেটেছে। তারা নাই। আপনি মামলায় আছেন। সব বইলা ফালান। আমি অবাক হয়ে চেয়ে থাকি। কোন কথা বলতে পারি না।’
রিমান্ডে হুমকি-ধমকি দেয়া প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বাবুনগরী বলেন, ‘তাদের কথাবার্তা শুনে মনে হয়েছিল ঘটনার সময় হয়তো আমাকেই টার্গেট করেছে ওরা। তবে আমি তাদের বলেছি তোমরা যেসব প্রশ্নের জবাব জানতে চাইছো তার কিছুই আমি জানি না। তাছাড়া, আমি ছিলাম মূল জায়গায়। মতিঝিলের পাশে। মারামারির খবর আমাকে জিজ্ঞেস করে লাভ কি?’
জিজ্ঞাসাবাদে নিজের সম্পত্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল সম্পত্তির পরিমাণ কত। একাউন্টে কত টাকা আছে। বাড়ি কয়টা। আমি বলেছি ফটিকছড়িতে গিয়ে দেখেন সেখানে আমার বাড়িতে বড় গাড়ি তো দূরে থাক রিকশাও চলতে পারে না।’
বাবুনগরীর চিকিৎসক ইব্রাহিম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা তাকে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে দেখাশোনা করছি। তার আগের রিপোর্টগুলোও চেক করছি। যেহেতু বাবু সাহেবের শরীরে কিছু সমস্যা আছে আগে থেকেই, তাই ওষুধপত্র একটু বুঝেশুনে দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তিনি অনেকখানি সুস্থ আছেন। তার আত্মীয়স্বজনরা এখানে রয়েছেন। আশা করছি দ্রুত মানসিক ও শারীরিক দু’দিক থেকেই তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। এখন বাড়ি ফিরতে পারবেন।’
জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক রাত সাড়ে ৭টায় মানবজমিনকে বলেন, ‘বাবুনগরী হাসপাতাল ছেড়ে একটু পরে হাটহাজারী মাদরাসায় যাবেন। সেখানে তার জন্য শ’ শ’ নেতা-কর্মী অপেক্ষা করছেন। পরে সেখান থেকে রাতে ফটিকছড়িতে তার বাড়ি যাওয়ার কথা রয়েছে।’---মানবজমিন

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়