Friday, July 5

অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার হিজড়া জনগোষ্ঠী


ঝালকাঠি: সমাজে কোনো স্থান পাচ্ছে না হিজড়া জনগোষ্ঠী। পরিবারে ঠাঁই হচ্ছে না তাদের। হাসপাতালে তাদের জন্য চিকিৎসা নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে গিয়েও বিড়ম্বনার মুখে বিতাড়িত হচ্ছে তারা। কর্মসংস্থান না পেয়ে জীবনের তাগিদে অপকর্মে জড়াচ্ছে। পথচারীদের মধ্যে ও দোকানপাটে হানা দেয়া থেকে শুরু করে বাধ্য হয়ে যৌনকর্মেও লিপ্ত হয় তারা। অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের কারণে এ সম্প্রদায় এইচআইভি/এইডসসহ নানা যৌন সমস্যার মুখোমুখি। রাষ্ট্রীয়ভাবে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য না থাকলেও ঝালকাঠিতে মাত্র ৭/৮ জন হিজড়া রয়েছে। 
সূত্র মতে, সর্বশেষ আদমশুমারিতে তৃতীয় লিঙ্গের অপশন না থাকায় হিজড়াদের গণনা করা সম্ভব হয়নি। তবে এদের অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে। অনেক বাসায় হরমোন জনিত সমস্যায় সন্তান থাকলেও সমাজচ্যুত হওয়ার আশংকায় অনেক হিজড়া লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করে না। ২০০৪ সালে সরকারিভাবে একটি পরিসংখ্যান করা হলেও গত ৯ বছরে আর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। হিজড়ারা পেটের তাগিদে অথবা স্বার্থান্বেষীরা যৌনকর্মী হিসেবে কাজে লাগানোয় তাদের মাধ্যমে এইচআইভি ছড়ানোর আশংকা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে হিজড়াদের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় কিছু সেবা দান কর্মসূচী এবং  নিজস্ব সংগঠনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবাসহ অন্যান্য সেবা দেয়ার সুযোগ থাকলেও ঝালকাঠিতে এর কোন কিছুই নেই। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে হিজড়াদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও তাদের কর্মসংস্থানের জন্য সম্প্রতি কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সেলাই কাজ, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও বিউটি পার্লারের কাজসহ কর্মমুখী আরও কয়েকটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। গত ১৪ মে ‘হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে সরকারের পরিকল্পনা সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তারা তুলে ধরলেও ঝালকাঠিতে এর আদৌ কোন ছোয়া লাগবে কি না তা নিয়ে চিন্তিত ঝালকাঠির হিজড়ারা। ঝালকাঠির হিজড়ারাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষালাভের সুযোগও হিজড়ারা পাচ্ছে না। অথচ নাগরিক হিসেবে এটা তাদের অধিকার। হিজড়া নদী জানান, তিনি কষ্টেসৃষ্টে ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন। এরপর পরিস্থিতির কারণে আর এগোনো সম্ভব হয়নি। ঝালকাঠির হিজড়ারাদের সরদার হিজড়া চিনি জানান, প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে তার পক্ষে স্কুলের আঙিনায় পা রাখাই সম্ভব হয়নি। এমনকি বাসা ভাড়া নিতে গেলেও তাদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে হিজড়াদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। এতে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। জাতীয় পরিচয়পত্র করার সময় যেসব হিজড়া পুরুষ সেজে থাকেন তাদের পুরুষ এবং যারা নারী সেজে থাকেন তাদের নারী হিসেবে ভোটার করা হয়েছে। এবিষয়ে ঝালকাঠি-২(সদর-নলছিটি) আসনের এমপি আলহাজ্ব আমির হোসেন আমু বলেন, বর্তমান সরকারের কর্মপরিকল্পনায় দেশের কয়েকটি জেলায় কাউন্সিলিং এর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ঝালকাঠিতে হিজড়াদের সংখ্যা কমহওয়ায় পর্যায়ক্রমে সেলাই কাজ, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও বিউটি পার্লারের কাজসহ কর্মমুখী আরও কয়েকটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।---ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়