Monday, July 8

গাঙ্গে ইলিশ নাই প্যাডের ভাত জোডাইতে পারিনা

বরগুনা:  ‘সিজন শুরু অইছে জইস্টো মাসে। বউ-পোলা মাইয়্যার জ্বালায় জাল-খুডা লইয়া এই বয়সেও গাঙ্গে নামছি। জইষ্টো শ্যাষ অইয়া আষাঢ় শুরু অইছে। তয় বাবা ইলিশ পাইনাই একটাও’। ফকিরহাটের আমখোলা এলাকার ছোট ঝুপড়ির মত ঘরে বসে দুপুরের ভাত খাচ্ছিলেন রাজা মিয়া।
দেখে মনে হবে বয়সের ভার তার দেহকে দমাতে পারেনি। একটু আগে পাঁচ/ছয় বছর বয়সের একটি মেয়ে গামছার পুটলিতে থালার ওপর থালা দিয়ে ঢাকা ভাত, কয়েকটি পোড়া মরিচ ও একটি বিচি কলা বেঁেধ বাবার জন্য নিয়ে এসেছে। তরকারি নেই? এই দিয়ে খাওয়া হবে?। কিছুটা আর্শ্চান্বিত হয়ে তাকালেন রাজা  মিয়া। দীর্ঘশ্বাসের পর গাঙ্গে ইলিশ নাই, ভাত ই জোডাইতে পারিনা, মাছ-মাংস পামু কই। খুপরি ঘরের মাচায় আরও ৭/৮জন জেলে ঘুমাচ্ছে।
পাশেই নদীতে স্যালো নৌকা বাধা। ভাটির টান শুরু হলেই এসব জেলেরা নৌকায় করে জাল তুলতে যাবেন। ইলিশ মৌসুমে জেলেরা বেরীবাধেঁর ওপর ছোট্ট কুটিরের মত তৈরী করে মাচানে বাসা বাধেন। দুচোখে বাধেঁন জালভরা চকচকে রুপোলী ইলিশের স্বপ্ন। কিন্তু মৌসুম শুরু হয়ে একমাস পেরুলেও চকচকে ইলিশ মরিচিকার মত ধুসর। বাস্তবে দেখা মেলেনি এখনও।বরগুনার বিষখালী-বলেশ্বর-পায়রা নদীকে ঘীরে এভাবেই মৌসুমী সংসার পেতেছেন কয়েক হাজার প্রান্তিক জেলে। জেলার প্রায় অর্ধলক্ষাধিক জেলের বছরের ৬ মাস এভাবেই কাটে। ছোট্ট একটি নৌকায় ৭/৮ জন জেলে কাজ করেণ।  জেলেদের হিসেবে জৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি ইলিশ মৌসুম শুরু হয়। কিন্তু গতবারের মত এবারও মৌসুমে ইলিশের দেখা মিলছেনা। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও সংসারের ভরন-পোষনের দায়ভার কাধে নিয়ে আবারও আশায় বুক বেধেছেন জেলেরা। রুপোলী ইলিশ মিলবে নদীতে।
বদলে যাবে স্ত্রী’র ছেড়া কাপড়, ছেলে-মেয়ের বায়নার জামা-কাপর, জুতো নিয়ে ফিরবেন বাড়িতে। কিন্তু কাংখিত ইলিশের দেখা মিলছেনা। তাই পোষাক তো দূরে থাক, খাবার পেটের ক্ষুধা নিবারনই দায় হয়ে পরেছে। আমতলীর  উপজেলার সোনকাটা  এলাকার জেলে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সরকার খালি মাছ ধরতে নিষেধ করে। মোরা প্যাডের দায়ে হ্যারপরও গাঙ্গে নামি। হেগো কোস্টগার্ডের লোকজন মোগো সব জাল নিয়া পুইর‌্যা হালায়।
এহন আবার ধার দেনা হইর‌্যা জোডাইয়া গাঙ্গে নামছি। মাছ তো নাই। কী খামু পোলা মাইয়া লইয়া। কাংখিত ইলিশের দেখা না মেলায় সিদ্দিকুর রহমানের মতই পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন উপকূলীয় প্রান্তিক জেলেরা। একদিকে আড়তদারদের পাওনা ঋন অপরদিকে ইলিশের আকালে দিশেহারা নদীর ইলিশ শিকারী জেলেরা।  জেলা মৎস্য কর্মকর্তা  বলেন, উপকূলীয় জেলেদের পরিচয়পত্র প্রদানের আওতায় আনার কার্যক্রম চলছে। প্রকৃত জেলে চিহ্নিতকরণের পর সরকারি বিভিন্ন সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হবে।---ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়