আজ থেকে ৫৫ বছর আগে ১৯৫৮ সালের ১৬ এপ্রিল মাত্র ৩৭ বছর বয়সে জরায়ুর ক্যান্সারজনিত কারণে তিনি মারা যান। ডিএনএর গঠন কাঠামো আবিষ্কারের প্রতিযোগিতামূলক ষড়যন্ত্রের শিকার ছিলেন তিনি। সেই নারী বিজ্ঞানী রোজালিন্ড এলসি ফ্রাঙ্কলিনের জন্মদিন ২৫ জুলাই।
পুরুষতাান্ত্রিক সমাজের জাল ভেদ করে যারা সামনে চলে এসেছেন, তাদের মধ্যে হাইপেশিয়া, লরা বেসি, সোফিয়া কোভালেভস্ক্যায়া, লাইস মিটনারের কথা যেমন আমরা উচ্চারণ করি, তেমনি এই কয়েকজন নারী ছাড়াও ক্যারলিন হার্সেল, মেরী এ্যানি ল্যাভিয়েসিয়ের এবং ডিএনএ গবেষক রোজালিন ফ্রাঙ্কলিনের কথাও উঠে আসে। যারা তাদের পুরুষ সহযোগীদের সঙ্গে একনিষ্ঠচিত্তে কাজ করেছেন। অথচ ওই সহযোগীরাই এক সময় তাদের অবদানকে ক্রমশ অবমূল্যায়নের দিকে ঠেলে নিয়ে গেছে। কৃতকর্মের প্রাপ্য সম্মান থেকে করেছে বঞ্চিত। এমনই একঘটনার শিকার অণুজীববিজ্ঞানী এবং ভৌত রসায়নবিদ রোজালিন এলসি ফ্রাঙ্কলিন। সমালোচকদের মতে, তার অবদানের বিচার করলে চিকিৎসাবিজ্ঞানে তার নোবেল পুরুস্কার প্রাপ্তি যথার্থ হতো। নোবেল পুরুস্কারও মহিমান্বিত হতো। অথচ তিনি বঞ্চিত হয়েছেন। এতে তার অবদান এতটুকুও ম্লান হবার নয়।
এ মহিয়সী নারীর জন্মদিনে তার প্রতি সম্মান জানিয়ে ডুডল উৎসর্গ করেছে বিশ্বখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন গুগল। ইন্টারনেটে প্রবেশের সাথে সাথেই আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে নারী বিজ্ঞানী রোজালিন্ড এলসি ফ্রাঙ্কলিনের ছবিসম্পন্ন ডুডল।
লন্ডনের একটি সচ্ছল পরিবারে ১৯২০ সালের জুলাই মাসের ২৫ তারিখে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ডিএনএ, ভাইরাস, কয়লা এবং গ্রাফাইটের গঠন-কাঠামো সংক্রান্ত গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য তাকে মানবজাতি স্মরণ করবে যুগযুগ ধরে। তার মতো আর কোন নারী-বিজ্ঞানীর জীবন এতটা বিতর্কিত এবং কর্মমুখর ছিল না। তিনি ১৯৪৫ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর একজন গবেষণা সহকারী হিসেবে লন্ডনের কিংস কলেজে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ক্রমশ নিজের কর্মদক্ষতার পরিচয় দিতে থাকেন নিত্য-নতুন গবেষণাসংক্রান্ত ধারণা প্রদানের মাধ্যমে। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত তিনি ফ্রান্সের প্যারিসে একটি গবেষণাগারে কাজ করেন। এখানেই তিনি রঞ্জনরশ্মি বিচ্ছিন্নকরণ কৌশল শিখেছিলেন এবং কেলাসতত্ত্ববিদ জ্যাকস মিরিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে গবেষণা করেছিলেন। খুব সাধারণ কিছু সরঞ্জাম নিয়ে ফ্রাঙ্কলিন ডিএনএর একক তন্তুর উচ্চ বিশেষণীয় ফটোগ্রাফ নেয়ার জন্য একটি ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। ১৯৫৩ সালে ডিএন এর গঠন-কাঠামো আবিষ্কারের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেন। রোজালিন ফ্রাঙ্কলিনের এই কেলাস সম্পর্কিত কাজ ওয়াটসন, ক্রিক ও উইলকিনস কর্তৃক উপস্থাপিত ডাবল হেলিক্স মডেলের পরীক্ষামূলক সমর্থন জুগিয়েছিল। অথচ জেমস ওয়াটসন, ফ্রানসিস ক্রিক এবং মরিস উইলকিনসকে ডিএনএর ডাবল হেলিক্স গঠনের জন্য নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হলেও রোজালিন ফ্রঙ্কলিনকে এই অমূল্য কাজের জন্য কোন কৃতিত্ব প্রদান করা হয়নি।
তার এই আবিষ্কারের কল্যাণে ওয়াটসন, ফ্রান্সিস ক্রিক আর উইলকিন্স একসঙ্গে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯৬২ সালে। ততদিনে অকালপ্রয়াত হয়েছেন আরেক সহযোগী রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন। তবে এই ঘটনা স্বীকার করে ওয়াটসন বলেছিলেন, 'নোবেল পুরস্কারের অলিখিত নিয়ম হলো একসঙ্গে তিনজনের বেশি প্রাপককে বিবেচনা করা হয় না। ফ্রাঙ্কলিন বেঁচে থাকলে তাকে না উইলকিন্সকে নোবেল দেয়া হবে-তা নিয়ে বিতর্কই সৃষ্টি হতো। তবে নোবেল কমিটি হয়তো তাদের দুজনকে যুগ্মভাবে রসায়নে নোবেল দিতে পারতেন। তার জায়গায় রসায়নের নোবেল গেল একই ইনস্টিটিউটেরম্যাক্স পেরুজ আর জন কেন্ড্রুর কাছে মায়োগ্লোবিন আর হিমোগ্লোবিনের গঠনকাঠামো ব্যাখ্যা করার জন্য। আর এই কাজের জন্য প্রথমে আমি আর ফ্রান্সিসক্রিক কাজ শুরু করেছিলাম'।--পরিবর্তন
খবর বিভাগঃ
দেশের বাইরে
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়