কক্সবাজার: গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ‘আরলি রিকভারি প্রকল্প’র অধীনে ত্রাণ বিতরণের নামে রেডক্রিসেন্ট কক্সবাজার জেলা কমিটির আজীবন সদস্য কবির হোসেন, তার পুত্র সেস্বচ্ছাসেবকলীগ নেতা ওসমান সরওয়ার আলম সহ ৩ জনকে আসামী করে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গরীর, অসহায় , দুঃস্থরা ত্রাণও পায়নি, তাদের প্রায় ৯ লাখ টাকাও আত্মসাৎ এর অভিযোগে ১৫ জুলাই কক্সবাজার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করে ভোক্তভোগী রমজান আলী।
সুত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার সদরের দরগাপাড়া খরুলিয়া এলাকার বাসিন্দা জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য নামধারী ভুয়াঁমুক্তিযোদ্ধা কবির হোছন, তার পুত্র জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্য ওসমান সরওয়ার আলমসহ আরো কয়েকজন মিলে রেডক্রিসেন্ট প্রকল্পের অধীনে গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ‘আরলি রিকভারি প্রকল্প’র ত্রাণ, কাজের বিনিময়ে টাকা, প্রশিক্ষনের বিনিময়ে টাকা সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়ার প্রলোভনে ফেলে কার্ড বিতরণর করে গরীব দুঃস্থ জনগণের সাথে চরম ভাবে প্রতারণা করে ।
অভিযোগ আরো জানা যায়, এই পিতা পুত্র চক্র সদরের পিএমখালী সহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন থেকে মাথাপিছু ৩ হাজার টাকা হারে টাকা আদায় করেন। বন্যা দুর্গত এলাকার ক্ষুতিগ্রস্ত লোকজনকে দ্রুত পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিদেশী অর্থায়নে ‘আরলি রিকভারি প্রকল্প’র অধীনে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ,বয়স্ক, কাজের বিনিময়ে টাকা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে টাকা সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়ার নামে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা পরিচয়দানকারী ওসমান সরওয়ার ও তার পিতা কবির হোসেন মিলে কার্ড বিতরণের নামে টাকা আদায়ের জন্য গত ২৫ ফেব্রুয়ারী তাদেরই ভাগীনা রমজানকে ম্যানেজার নিয়োগ করেন।
এই ম্যানেজার রমজানের মাধ্যমে সদরের পিএমখালী ইউনিয়নের অন্তত তিনশতাধিক নারী পুরুষের কাছ থেকে কার্ডের নামে ৯ লক্ষাধিক টাকা উত্তোলণ করেন। গরীব, অসহায় ও দুঃস্থ নারী পুরুষ চড়া সুদে টাকা নিয়ে , গৃতপালিত পশু বিক্রি করে এমনকি বাড়ীর প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র বিক্রি করেও অনেকে টাকা দেন রমজানকে। আর এই রমজান উত্তোলিত ৯ লাখ টাকা কবির হোসেন ও তার পুত্র ওসমান সরওয়ারের হাতে দেন। কবির হোসেন টাকা গ্রহণের সময় নিজ নাম স্বাক্ষরও করেন। কিন্তু পরবর্তীতে টাকা গুলো আত্মসাৎ করে ফেলেন তারা। গরীর লোকজন কার্ডের জন্য আমাকে চাপ সৃষ্টি করলে বিষয়টি তাদের অবহিত করি।
আদালতে দায়েরকৃত মামলার বাদী পিএমখালী ইউনিয়নের জুমছড়ি গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মো. রমজান (২২) আরো জানান, লোকজনের কাছ থেকে উত্তোলিত ৯ লাখ টাকা কবির হোসেন ও তার পুত্র ওসমান সরওয়ার এবং ইতোপূর্বে কাডর্ বিলিকারী খরুলিয়া দরগাপাড়ার খুইল্যা মিয়ার ছেলে জয়নাল আত্মসাৎ করেন। এই তিন জনকে আসামী করা হয়েছে।
এ ঘটনায় উল্লেখিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও হুমকির অভিযোগে গত ৩০ জুন কক্সবাজার মডেল থানায় এজাহার দায়ের করা হলে থানা পুলিশ এদের কোন নোটিশ দেন। কিন্তু তারা কার্ডতো দেয়ই নাই, টাকা ফেরৎ দেয়ার কথা বললে তারা উল্টো আমাকে প্রাণ নাশ সহ বিভিন্ন হুমকি দেন।
থানায় এজাহার দেয়ায় তাকে প্রাণ নামের হুমকি দেয়ার বিষয়েও থানায় সাধারণ ডায়েরী দায়ের করেন বলে জানান তিনি। এছাড়া থানায় এজাহার দেয়ার পরেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় অবশেষে ১৫ জুলাই কক্সবাজার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামী করা হয়েছে, সদরের খরুলিয়া দগা পাড়ার মৃত গোলাম হোছনের পুত্র কবির হোসেন (৫৫), কবির হোছনের পুত্র ওসমান সরওয়ার (৩০) ও একই এলাকার মৃত খুইল্যা মিয়ার পুত্র জয়নাল (২৫) কে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য কক্সবাজার মডেল থানায় প্রেরণ করেছেন বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে কবির হোসেন ও তার পুত্র ওসমান সরওয়ারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তারা মামলার বিষয়টি স্বীকার করেন এবং ঘটনাটি পুরোপুরি মিথ্যা বলে দাবী করেন।
এদিকে, প্রতারক কবির হোসেন নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করলেও কক্সবাজার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা কমান্ডের সাথে যোগাযোগ করা হলে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদরে দপ্তর সম্পাদক সুনীল জানান, কবির হোসেন নামের কোন মুক্তিযোদ্ধা নেই। একই কথা স্বীকার করলেন জেলা কমান্ড মো. শাহজাহানও। এখন সচেতন মহলের প্রশ্ন জাতীর শ্রেষ্ট সন্তানরে নাম ভাঙ্গিয়ে এধরনের প্রতারণার ঘটনায় তাদের ভামুর্তিও ক্ষুন্ন করা হচ্ছে।--ডিনিউজ
খবর বিভাগঃ
অন্য জেলা
অপরাধ বার্তা
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়