সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাবে সন্ত্রাসীদের হামলায় সভাপতি ও সম্পাদকসহ ৭ সাংবাদিক এবং ১জন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। সরকার দলীয় সশস্ত্র হামলাকারীরা প্রেসক্লাব ভাংচুর ও বিভিন্ন মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে। এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তাদের একটিকেও জীবিত রাখা হবে না বলেও হুমকি দিয়ে গেছে তারা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথম হামলার পর শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে দ্বিতীয় দফার এই হামলার ঘটনায় সেখানকার সংবাদকর্মীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা প্রেসক্লাব এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেছেন। পুলিশ ফাঁকা প্রেসক্লাব পাহারা দিচ্ছে ।
এদিকে সাংবাদিকদের ওপর এই বর্বরোচিত হামলার খবর প্রচার হতেই সব মহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে।হামলাকারীরা সরকার দলীয় ক্যাডার হওয়ায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতারাও এতে বিব্রত হয়ে পড়েছেন । তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তারাও ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার শ্যামনগরের নকীপুর হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে শ্যামনগর সদর ও মাজাট গ্রামের সমর্থকরা বিভক্ত হয়ে পড়ে। এরই জের হিসাবে শ্রমিকলীগ নেতা লিয়াকত আলী, যুবলীগের আল মামুন লিটন ও ছাত্রলীগের আব্দুর রহমান ও ছুন্নতের নেতৃত্বে দুই শতাধিক লোক লাটিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে মিছিল শেষে শুক্রবার বেলা ১০টার দিকে শ্যামনগর প্রেসক্লাবে হামলা চালায়। এসময় তারা উপস্থিত সাংবাদিকদের মাথায় বাঁশের লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করে। খুঁজতে থাকে অন্যান্য সাংবাদিকদের। রামদা দিয়ে কুপিয়ে ও লাঠিসোটা দিয়ে প্রেসক্লাবের আসবাবপত্র ভাংচুর ও লুটপাট করে। প্রাণভয়ে কয়েকজন সাংবাদিক প্রেসক্লাবের পেছনের কক্ষে আত্মগোপন করেও হামলাকারীদের নৃশংসতার হাত থেকে রেহাই পাননি । এ সময় তারা বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকেন । আতংকিত কয়েকজন সাংবাদিক প্রান রক্ষায় এদিক ওদিক ছুটাছুটি শুরু করেন। হামলায় বাধা দিতে গেলে সন্ত্রাসীরা শ্যামনগর থানার এ এস আই জুলহাজউদ্দিনের হাঁটুতে বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এতে তার পা ভেঙ্গে যায়। এ সময় আতংকিত অন্যান্য পুলিশ সদস্যরাও ছুটাছুটি শুরু করেন । হামলাকারীরা প্রেসক্লাবে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র লন্ডভন্ড করে ও টাকা লুঠ করে নিয়ে যায়।
আহতদের মধ্যে প্রেসক্লাব সভাপতি দৈনিক কালের কন্ঠের আকবর কবির, সাধারণ সম্পাদক দৈনিক যুগের বার্তার আনিসুজ্জামান সুমন, দৈনিক সমকালের এস কে সিরাজ, দৈনিক সত্যপাঠ পত্রিকার মারুফ হোসেন, দৈনিক জনতার কামরুজ্জামান রয়েছেন। তাদেরকে প্রথমে শ্যামনগর ও পরে সাতক্ষীরা হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত সাংবাদিকরা জানান, সন্ত্রাসীরা দুই শতাধিক লোকের একটি মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবে এগিয়ে এলেও উপস্থিত পুলিশ তাদের ভীম মুর্তি দেখে বাধা দেওয়ার সাহস করেনি । হামলাকারীরা আওয়ামীলীগের উপজেলা সভাপতি জগলুল হায়দার ও তার ছেলে রাজীবকে খুঁজতে থাকে। এ ঘটনার পর থেকে শ্যামনগরে আতংক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ আদম আলি নামের এক সরকার দলীয় ক্যাডারকে গ্রেফতার করেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একইভাবে মাজাট গ্রামের লোকজনের পক্ষ নিয়ে সরকার দলীয় ক্যাডাররা হামলা করে প্রেসক্লাবে। তখনও ভাংচুর ছাড়াও কয়েকজন সাংবাদিককে লাঠি দিয়ে মারধর করে ও প্রেসক্লাব থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে। প্রথম দফায় এই হামলার সময় তারা সাংবাদিকদের হুশিয়ার করে জানিয়ে দেয়, এ নিয়ে রিপোর্টের নামে বেশী বাড়াবাড়ি করলে ক্লাবঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। এসব নিয়ে পত্রিকায় খবর প্রকাশের জের ধরে শুক্রবার দ্বিতীয় দফার এই হামলার ঘটনা ঘটে। প্রেসক্লাব এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে হামলার খবর শুনে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, শ্যামনগরের গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলমসহ সাংবাদিক ও রাজনীতিকরা শ্যামনগর ও সাতক্ষীরা হাসপাতালে ছুটে যান। তারা এই হামলার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। শ্যামনগর আওয়ামী লীগের সভাপতি জগলুল হায়দর ও তার দলীয় নেতৃবৃন্দ হামলার নিন্দা জানিয়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। শ্যামনগর প্রেসক্লাব এখন জনশূন্য অবস্থায় খা খা করছে। পুলিশ শুন্য প্রেসক্লাব পাহারা দিচ্ছে। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শ্যামনগর উপজেলা সদরে সাংবাদিকদের পক্ষ নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জগলুল হায়দার মিছিল মিটিং করছেন। তবে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারিদের পক্ষ নিয়ে শ্যামগরের কুখ্যাত সন্ত্রাসী, একাধিক মামলার আসামী, আওয়ামী লীগ নেতা লেলিন এখণও হুংকার দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। যদিও লেলিন তা অস্বীকার করেছেন।--ডিনিউজ
খবর বিভাগঃ
অন্য জেলা
সর্বশেষ সংবাদ
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়