Friday, June 21

ফলের বাজার : মাছি টানতে মেশানো হচ্ছে নতুন কেমিক্যাল

:: এম ইদ্রিস আলী, মৌলভীবাজার ::
মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন ফলের বাজারে ভরপুর হরেক রকম মৌসুমী ফল। তবে এর অধিকাংশই বিষাক্ত ফরমালিন যুক্ত। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কেরও যেন কমতি নেই। এদিকে ফলে রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো নিয়ে চলছে নানা প্রক্রিয়া। ফলের মধ্যে ফরমালিন মেশানো হলে তার ওপর মাছি বা এ ধরনের পোকা বসে না। এতে ফল কেনার ক্ষেত্রে অনেক ক্রেতাই সতর্ক হয়ে উঠছেন। তাই সচেতন ক্রেতাদের চোখে ফাঁকি দিতে ব্যবসায়ীরা নিয়েছে নতুন কৌশল। মাছি আকর্ষণ করতে তারা এখন মেশাচ্ছে নতুন আরেক ধরনের বিষাক্ত কেমিক্যাল। এর ফলে একদিকে যেমন প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতারা, অন্যদিকে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
জেলা শহরের বিভিন্ন ফলের বাজারে ঘুরে মৌসুমী ফল নিয়ে আমাদের প্রতিনিধির তৈরি প্রতিবেদনে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আম, জাম, লিচু, আনারস, জামরুল, কলা, কমলা, আঙুর, আপেল, মালটা ও তরমুজসহ দেশি-বিদেশি সব ফলেই মেশানো হচ্ছে ফরমালিন ও নানা ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ। তাজা তরকারি ও শাকসবজিও এক্ষেত্রে বাদ যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে বাজারে এখন রাসায়নিক পদার্থ মেশানো ছাড়া কোনো ফল নেই।
এদিকে সরকারের মাননিয়ন্ত্রনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর আলাদাভাবে শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার শহরে ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করছেন।
ভেজাল অভিযান পরিচালনাকারীদের কাছ থেকে জানা যায়, প্রায় সব ধরনের ফলেই ফরমালিন বা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। পরীক্ষায় ফরমালিন, কার্বাইড, ইথোফেনসহ বিষাক্ত রাসায়নিকের সন্ধান মেলে।
তারা জানান, এ পর্যন্ত মৌলভীবাজার সদর ও শ্রীমঙ্গলে অর্ধশতাধিক ফলের দোকানে ভ্রাম্যমাণ দলের অভিযানে পয়েন্ট ২৩ ভাগ থেকে ৩৩ ভাগ মাত্রায় ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা হাসপাতালের সহকারী ডা. বিনেন্দু ভৌমিক বলেন, “রাসায়নিক মেশানো ফল খেয়ে মানবদেহে অন্তত জটিল ১২টি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, পাকস্থলীতে প্রদাহ, ফুসফুসের সংক্রমণ, কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ নানা রোগ হতে পারে।”
তিনি জানান, বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো এসব ফল খেয়ে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। নারীদের সন্তান ধারণেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে রাসায়নিক মিশ্রিত এসব ফল।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তি ঘোষ বলেন, “ফলের ওপর আগে মাছি ভনভন করতো। এখন আর সেগুলোর আশেপাশে কোনো মাছি বসতে দেখি না। শুনেছি কেমিক্যালের গন্ধে ফলের ওপর মাছি বসে না। তাই যেসব ফলের ওপর মাছি বসছে, সেগুলো বেছে বেছে কিনছি।”
মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. কান্তি ভূষণ ভট্টাচার্য বলেন, ফরমালিনযুক্ত ফলে সাধারণত মাছি বা এ ধরনের কোনো পতঙ্গ বসে না। তাই নতুন আরেক ধরনের কেমিক্যাল মেশানো হচ্ছে যাতে ফলের ওপর পোকা বসে। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। অনেকেই হয়ত মানতে চাইবেন না, কিন্তু এটাই সত্য যে, কেবল বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানো খাদ্য খেয়ে দেশে মৃত্যুর হার শতকরা ৩০ ভাগ বেড়ে গেছে।
এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজারের কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আল-আমিন বলেন, “শুধু মৌসুমী ফল নয় সব ধরনের ফলে বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে। এ রকম তথ্য আমরা প্রতিনিয়তই পাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “কেমিক্যাল মেশালে মাছি থাকে না। এই দেখে অনেক ক্রেতা ফল কিনতে চায় না। তাই ব্যবসায়ীরা অন্য আরেক ধরনের কেমিক্যাল মিশাচ্ছে যাতে করে ফলের ওপর মাছি বসে এবং তা দেখে ক্রেতারা ফল কিনতে আগ্রহী হয়।”
তিনি আরো বলেন, “কেমিক্যাল মেশানোর বিষয়ে এছাড়াও মাঠ পর্যায় থেকে যেসব ভয়ঙ্কর তথ্য আসছে তা খুবই উদ্বেগজনক। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।”(পরিবর্তন ডটকম)

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়