Monday, June 24

ঐকমত্যের অভাবে ফের ওয়ান ইলেভেনের আশঙ্কা দেখছেন আসিফ নজরুল


যুক্তরাষ্ট্র : ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন গণতন্ত্রের অন্যতম সোপান। গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরস্পর ইন্টারটুইন্ড বা যমজ সন্তানের মতো। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি 
পরীক্ষিত ও স্বীকৃত মাধ্যম। তাই বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বা সব দলের নিকট গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনী পদ্ধতির বাইরে গিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নির্বাচন নিয়ে, নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে বিরোধের জের ধরে সাংবিধানিক সঙ্কট, এমনকি গৃহযুদ্ধ পর্যন্ত দেখা গেছে। আবার নির্বাচনী ফলাফলের বিরোধকে কেন্দ্র করে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রও ভেঙে গিয়ে নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। বাংলাদেশেও নির্বাচন পদ্ধতিবিষয়ক রাজনৈতিক সহিংসতায় ওয়ান ইলেভেনের মতো ঘটনার জন্ম হয়েছে এবং আগামী ৩ থেকে ৯ মাসের মধ্যে যদি বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল দু’টি একটি নিরপেক্ষ ও সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী পদ্ধতি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয় তাহলে আবারও দেশে ওয়ান ইলেভেনের মতো ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।’ গতকাল সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কের পাঠকনন্দিত পত্রিকা সাপ্তাহিক আজকাল আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ নির্বাচন: বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রত্যেকবার নির্বাচনের সময় এলেই একটা যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ জন্য দেশের সাধারণ মানুষের মতো আপনারা প্রবাসীরাও উদ্বিগ্ন থাকেন। এটা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে, আফ্রিকাতে ল্যাটিন আমেরিকাতে প্রায়ই দেখা যায়। এমনও হয়েছে নির্বাচন নিয়ে, নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে বিরোধের জের ধরে আফ্রিকাতে সুদান নামক একটি দেশও ভেঙে গেছে। এখন দক্ষিণ সুদান একটি স্বাধীন দেশ। এছাড়া জাম্বিয়া, বতসোয়ানা, মোজাম্বিক এই সব দেশেও নির্বাচনী রাজনৈতিক সহিংসতাকে কেন্দ্র করে সাংবিধানিক সঙ্কট, এমনকি গৃহযুদ্ধ পর্যন্ত দেখা গেছে।
আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচিত কোন সরকারই তার মেয়াদ পূরণ করতে পারে নি। তাদের অপমৃত্যু হয়েছে। বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচিত সবগুলো সরকার তাদের মেয়াদ পূর্ণ করতে পেরেছে। আমরা আশাবাদী যে, বর্তমান সরকারও তার মেয়াদ পূর্ণ করবে। স্থানীয় নির্বাচন বা সিটি করপোরেশন নির্বাচন আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট এক নয়। স্থানীয় সরকার কিংবা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সকলের ফোকাস থাকে ওই নির্বাচনী কর্মকাণ্ড তদারকে, কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সমগ্র দেশব্যাপী সকলের মনোযোগ থাকে বিধায় নিবিড় পর্যবেক্ষণ সম্ভব হয় না। দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনে অতীতে সব সময়ই ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে কারচুপি করেছে। তত্ত্বাধায়ক সরকার বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি পরীক্ষিত ও স্বীকৃত মাধ্যম। তাই বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বা সব দলের নিকট গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনী পদ্ধতির বাইরে গিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে ২০১০ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে আরও কার্যকর করা নিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আসিফ নজরুল বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে ওয়ান ইলেভেনের মতো মাঝে মাঝে অদ্ভূত কিসিমের শাসন এসে হাজির হয় এটা ঠিক, কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন সংশোধন করে এর কাজ, ক্ষমতা ও সময়সীমা সুস্পষ্ট ভাবে নির্দিষ্ট করে দিয়ে তা দূর করা যেতে পারে।’
নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সাপ্তাহিক আজকালের প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক জাকারিয়া মাসুদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্পাদক আহমেদ মুসা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন নির্বাহী সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ। ড. আসিফ নজরুল বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে তাদেরকে বাংলাদেশের দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে প্রো-বাংলাদেশী রাজনীতি চর্চার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে নিউ ইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক, সাহিত্যিক, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী উপস্থিত ছিলেন।(ডিনিউজ)

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়