ঢাকা: মাদকের নীল দংশনে বিপথে যাচ্ছে অনেক তরুন-তরুণীরা। কিন্তু সেই মাদক ব্যবসা করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়ার লোভেও হারিয়ে যাচ্ছে অনেক সম্ভাবনা। বাবা-মার অভাবী সংসারেও লেখাপড়া করে যার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিল সে কী-না আজ মাদক সম্রাজ্ঞী। একবার ধরা পড়ে ১০ মাস জেল খেটে বেরিয়ে আবার সেই পুরনো কাজে লেগে পড়া ম্যানিলা চৌধুরী আবারও গ্রেফতার হয়েছেন ইয়াবাসহ। তার ভাষ্য এপথে আসা যায়, ফিরে যাওয়া যায় না।
ম্যানিলা জানান, বাবা ছোট চাকুরি করতেন। কিন্তু সংসারের সব চাহিদা তিনি পূরণ করতে পারতেন না। তারপরও তিনি চাইতেন আমরা দু'বোন লেখাপড়াশিখে জীবন সংগ্রামে যেন জয়ী হতে পারি। ইচ্ছা ছিল শিক্ষক হবো। সে প্রত্যাশা নিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাত্ আমাদের মাঝে হাজির হয় আব্দুস শুক্কুর শাকু। যার আসল পরিচয় ব্যাংক ডাকাত ও ইয়াবা ব্যবসায়ী। সে কৌশলে আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে। পরে শুক্কুরের প্ররোচনায় শুরু করি ইয়াবা ব্যবসা। লাখ লাখ টাকার স্বপ্ন। ইয়াবা ব্যবসা করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়ে ১০ মাস জেলও খাটি। কিন্তু সে অবস্থান থেকে সরে আসতে পারিনি। আসলে এ পথে (ইয়াবা ব্যবসা) প্রবেশ করা যায়, কিন্তু ফেরা যায় না। আমার মত অনেক 'ম্যানিলা'ই এইসব দুষ্ট লোকের পাল্লায় পড়ে বিপথে পা বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে।
শুক্রবার মহানগর গোয়েন্দা দফতরে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। ম্যানিলা রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের ফিন্যান্স বিভাগে শেষবর্ষের ছাত্রী। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাকেসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করে ৩০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। ডিবি পুলিশ শুক্রবার তাদেরকে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। গ্রেফতারকৃত অপর পাঁচজন হচ্ছে আবু তাহের, কুলসুম, জানে আলম, খালেদ ও আসিফ।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি (পশ্চিম) মশিউর রহমান জানান, পুরনো ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের 'নীরব হোটেলের' সামনে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী ইয়াবা কেনা-বেচা করবে এ তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় জানে আলম ও আসিফকে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৯ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। পরে তাদের দেয়া তথ্যমতে একইদিন রামপুরার বনশ্রী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় কুলসুমকে। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৪ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। কুলসুমের দেয়া তথ্যমতে মতিঝিল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় ম্যানিলা চৌধুরী, আবু তাহের ও খালেদকে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১৭ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট।
এডিসি বলেন, ম্যানিলা চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া এলাকায়। ২০১১ সালে ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার কারণে ১০ মাস জেল হাজতে ছিল। ম্যানিলা জানিয়েছে, সে চট্টগ্রামসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবা সরবরাহ করে থাকে। গ্রেফতারকৃত তাহের টেকনাফ ও মিয়ানমার হতে ইয়াবা বাংলাদেশে নিয়ে এসে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে। আর জানে আলম ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নিকট হতে টাকা সংগ্রহ করে থাকে এবং হুন্ডির মাধ্যমে টাকা নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেয়। আসামি কুলসুম, খালেদ ও আসিফ ম্যানিলা চৌধুরী ও তাহেরের অন্যতম সহযোগী ও ইয়াবা সরবরাহকারী হিসাবে কাজ করে। কুলসুম গাজীপুর এলাকার বিভিন্ন লোকের কাছে ইয়াবা সরবরাহ করে। ম্যানিলা চৌধুরী, তাহের ও জানে আলম চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বাসিন্দা আব্দুস শুক্কুর ওরফে শাকুর মাহমুদ ওরফে শাকুরের হয়ে কাজ করে। শাকু মিয়ানমার হতে ইয়াবা কক্সবাজার হয়ে চট্টগ্রামে নিয়ে আসে এবং সারাদেশে সরবরাহ করে।
শাকু গত ২০০৭ সালে রাজধানীর শুক্রাবাদে ব্র্যাক ব্যাংকে ডাকাতি মামলার আসামি। পলাতক শাকুকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ম্যানিলা, তাহের ও খালেদের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায়, কুলসুমের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় এবং জানে আলম ও আসিফের বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় পৃথক পৃথকভাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। ম্যানিলা এর আগেও মাদক আইনে জেলে গেছেন। কারাগারে থাকার সময় মাদক পাচারকারীদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে ম্যানিলা।(ডিনিউজ)
খবর বিভাগঃ
বিশেষ খবর
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়