Saturday, June 29

ফাইনালে মুখোমুখি স্পেন ও ব্রাজিল

ঢাকা:কনফেডারেশনস কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের দুই জায়ান্ট ব্রাজিল ও স্পেন। ফাইনাল রোববার রাতে। ফাইনালে স্বাগতিক ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ স্পেন। একদিকে রয়েছে ল্যাটিন সাম্বা ভক্ত পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা আর অন্যদিকে রয়েছে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। যাদের রয়েছে ইউরোপীয় স্পিডের পাশাপাশি তাদের নিজস্ব স্টাইল। ফুটবল ভক্তরা যেমনটা চেয়েছিলেন তেমনটাই হচ্ছে। আয়োজক দেশের সঙ্গে লড়ছে দুবারের ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নরা। স্পেনের পাসিং জাদুর মোকাবিলা করবেন ব্রাজিলের নতুন তারকা নেইমার। ফাইনালের উপাদান বলতে যা বোঝায়, সবই আছে এবার। উত্তেজনার পারদে ঠাসা এক লড়াই হচ্ছে রোববার। আগামী ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল ভেন্যুতেই হবে ড্রেস রিহার্সেলের শিরোপার লড়াই। টানা তৃতীয় কনফেডারেশনস কাপ শিরোপা হাতে নিতে সেলেকাওদের সামনে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলবে স্পেন। আর এই ম্যাচ নিঃসন্দেহে জিভে জল আনবে ফুটবল ভক্তদের। বৃহস্পতিবার ইতালির বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পেনাল্টিতে ৭-৬ ব্যবধানে জিতে স্পেন অধিনায়ক ইকার ক্যাসিয়াস ভক্তদের মনের কথা বলে দিলেন, স্পেন বনাম ব্রাজিল, আমার মনে হয় কনফেডারেশনস কাপের এমন ফাইনালের জন্য অপেক্ষা করছিল প্রত্যেকে। এই দুই দলই ফাইনাল খেলার সত্যিকারের দাবিদার। ব্রাজিলিয়ানদের জন্য এটি হবে বিশেষ ম্যাচ। আর মারাকানায় খেলা স্প্যানিশ দলের জন্যও বিশেষ কিছু। সৌভাগ্য ছিল বলেই এই ম্যাচটি জিতেছে দল, স্বীকার করলেন স্পেন কোচ ভিনসেন্ত দেল বস্ক। ইতালির সঙ্গে অতিরিক্ত সময় খেলার ফলে ফাইনালে দল ক্লান্ত থাকবে কি না এমন প্রশ্নে দেল বস্কের উত্তর, তিনটি দিন হাতে আছে, এর মধ্যেই আমাদের যা করার করতে হবে। ব্রাজিলের বিপক্ষে মারাকানায় আমরা অবশ্যই উঠে দাঁড়াব। মাঠে শিশুদের মতোই হাসিখুশি মনোভাব নিয়ে খেলোয়াড়দের খেলতে হবে। অনেক কিছুই তারা জিতেছে, কিন্তু এবার তারা মারাকানায় জিততে চায়। গত পাঁচ বছরে বড় কোনো টুর্নামেন্টে স্পেনের জন্য এটি চতুর্থ ফাইনাল। আর ধারাবাহিক তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জিতে দারুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলতে চায় ব্রাজিল। এদিকে সেমিফাইনালে ব্রাজিল পেয়ে গেছে আরেক নতুন তারকাকে। সেমিফাইনালের দু’দিন আগেও ঠিক ছিল না ব্রাজিলের প্রথম একাদশে তার নাম থাকবে কি না। তবে বুধবার কনফেডারেশনস কাপের প্রথম সেমিতে যখন অতিরিক্ত সময়ের দিকে ম্যাচ যাচ্ছিল, তখন তার গোলেই বদলে গেল সব স্ক্রিপ্ট। ৪-২-৩-১ ফরমেশনে খেললেও ব্রাজিল প্রচারমাধ্যম তাকে বলছে ডিভেন্সিভ গার্ড ও অ্যাটাকিং ফোর্সের মিশেল। গোটা ব্রাজিল যখন নেইমার জ্বরে আক্রান্ত তখন জন্ম হলো আর এক তারকার। তার নাম পওলিনহো। সাও পাওলোতে ১৯৮৮ জন্ম তার। খেলেন ব্রাজিলিয়ান ক্লাব কারিন্থিয়াসে। তবে সামনের মরসুমে সম্ভবত টটেনহ্যামে খেলতে দেখা যাবে পওলিনহোকে। এমনকি এও শোনা যাচ্ছে, রিয়াল মাদ্রিদও আগ্রহ দেখিয়েছে পওলিনহোকে নিয়ে। কিন্তু তাও ব্রিটিশ প্রচারমাধ্যম প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের মতো কঠিন ফুটবল যুদ্ধে কি সফল হতে পারবেন এই ব্রাজিলীয় তারকা? তার জবাব খেলার মাধ্যমেই দিয়ে দিয়েছে পওলিনহো। ব্রাজিল দলে তার সতীর্থ ডেভিজ লুইজ বলেছেন, পওলিনহো দুর্দান্ত ফুটবলার। কারণ, সে রক্ষণ  ও আক্রমণ, দুটোই ভালো ব্যালান্স করতে পারে। ইংল্যান্ডে অবশ্যই হিট হবে পওলিনহো। লুইজ ছাড়াও পওলিনহোর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন কোচ স্কোলারিও। আমাদের দল তরুণ হতে পারে কিন্তু পওলিনহোর মতো ফুটবলারদের জন্য ধারাবাহিক ভাবে জয় পেয়ে চলেছি, বলেন স্কোলারি। বৃটিশ প্রেসও এখন মেনে নিচ্ছে, সম্ভাব্য যে ২০ মিলিয়ন পাউন্ড পওলিনহোকে দিচ্ছে টটেনহ্যাম, তা জলে যাবে না। পাশাপাশি ব্রাজিল ফুটবলকে কুর্নিশ করছেন উরুগুয়েরর কোচ। সেমিফাইনালে হেরে যাওয়ার পর অস্কার তাবারেজ বলেছেন, এ দিনের পরে আর কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে না যে, ব্রাজিল নিজেদের ফর্ম ফিরে পাচ্ছে। পরের বিশ্বকাপের জন্য একেবারে ঠিক রাস্তায় হাঁটছে ওরা, বলেন তাবারেজ। তবে তিনি এও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, শুরুতে দিয়েগো ফোরলান পেনাল্টিটা না ফস্কালে খেলার ফল অন্য রকমও হতে পারত। আর যিনি পেনাল্টিটা বাঁচিয়েছেন, সেই জুলিও সিজার কী বলেন? ব্রাজিল গোলকিপার আবার ধন্যবাদ দিচ্ছেন সমর্থকদের। বলছেন, সমর্থকদের চিৎকারই আমায় সাহায্য করল পেনাল্টি বাঁচাতে। এতদিন ব্রাজিল জার্সি গায়ে চাপিয়ে বুঝেছি যে কী ভাবে চাপ সামলাতে হয়। বৃহস্পতিবার রাতে দ্বিতীয় সেমিতে ইতালিকে হারিয়ে ফাইনালে পৌছায় স্পেন। ম্যাচ ও অতিরিক্ত সময়ের মোট ১২০ মিনিট গোলশূন্য থাকলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। ৬-৬ সমতার পর সাডেন ডেথে ম্যাচ জিতে নেয় স্পেন। এর আগে নির্ধারিত ৯০ মিনিট পর্যন্ত তারকাখচিত স্পেনের বিরুদ্ধে সমানে-সমানে লড়াই করে ইতালি। তবে বল পজিশনে বরাবরের মতো ম্যাচে নিজেদের আধিপত্য ধরে রেখেছিলেন জাভি-ইনিয়েস্তারা, বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ পেলেও ইতালির রক্ষণ দূর্গ ভাঙ্গতে পারেনি ভিসেন্তে দেল বস্কের দল। অধরা কনফেডারেশন্স কাপের শিরোপা জিততে আর একটি জয় চাই স্পেনের। রোববার রিও ডি জেনিরোর বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামে ফাইনালে স্পেন খেলবে স্বাগতিক ব্রাজিলের বিপক্ষে। ঠিক এক বছর আগে ইউরো ২০১২ এর ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল স্পেন ও ইতালি। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের সেই ফাইনাল ফুটবল-ইতিহাসের অন্যতম সফল দল ইতালিকে বহু দিন তাড়া করে বেড়াবে। পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ খেলে ফাইনালে ওঠার পর স্পেনের কাছে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল তারা। এটা পরিষ্কার,স্পেনকে কনফেডারেশনস কাপের ফাইনালে চায়নি ১৯৬ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ ব্রাজিল। সে জন্য ফোরটালেজার সেমিফাইনালে ইতালির প্রতিটা পাস ও আক্রমণকে হাততালি দিয়ে উৎসাহিত করেছে সাম্বার অধিবাসীরা। কিন্তু বিরুদ্ধস্রোতেও হতোদ্যম হয়নি স্প্যানিয়ার্ডরা। ইতালির বিপক্ষে নিষ্ফলা ম্যাচের পর পেনাল্টি শ্যুটআউটে ব্রাজিলের পাশে রিও ডি জেনিরোর রবিবাশরীয় ফাইনালে নাম লেখায় স্পেন, কনফেডারেশনস কাপে যেটা লা রোজাদের জন্য প্রথম। আর ব্রাজিলের জন্য এটি পঞ্চমবারের ফাইনাল, যেটি জিতলে টুর্নামেন্টে তাদের চতুর্থবার শিরোপা জয়ের রেকর্ড হবে। বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন  স্পেনও উন্মুখ হয়ে আছে শিরোপাটির জন্য। কনফেডারেশনস কাপ কখনো জেতা হয়নি তাদের। আরও একটি বিষয়, রোববার ফাইনাল জিতলে গত পাঁচ বছরে এটি হবে স্পেনের চতুর্থ বড় শিরোপা জয়। কে হাসবে শেষ হাসি, তার জন্য রোববার মারাকানার দিকে নজর রাখতে হবে। অনেকে স্পেনের ফাইনালে ওঠাকে ‘ভাগ্যের ছোঁয়া’ বলে অভিহিত করলেও পরিসংখ্যান তা বলে না। গ্র“প পর্বে তিনে তিন জয় নিয়ে সেমিতে নাম লেখায় তারা। হয়তো ব্রাজিলের মতো ওতটা দাপট দেখিয়ে নয়, কিন্তু সেটাই তো তাদের স্টাইল। আর এটাও মনে রাখা দরকার, ২০১২ সালের ইউরোতেও পেনাল্টি শ্যুটআউটেই প্রতিযোগিতাটির ফাইনালে নাম লেখায় স্পেন। কিন্তু কিয়েভের ফাইনালে দারুণ দাপট দেখিয়ে ইতালির মতো ফুটবল সুপার পাওয়ারকে বিধ্বস্ত করে ফুটবলের ‘লাল দৈত্য’রা। সুতরাং কনফেডারেশনস কাপে চারবার ফাইনাল খেলা ব্রাজিল ফুটবলের একটা সোনালি প্রজন্মকে মোকাবেলায় স্বস্তি নিয়ে মাঠে নামতে পারবে না। কারণ, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা-জাভি হার্নান্দেজের মতো সেরা খেলোয়াড়রা ঠিক আসল সময়েই জ্বলে ওঠেন। ব্রাজিল কোচ লুইস ফিলিপ স্কোলারিও তাই বলছেন। শনিবার রিওর সংবাদ সম্মেলনে বিগ ফিল বলেন, ছেলেরা দারুণ খেলছে। দ্রুত উন্নতির ছাপ দেখাচ্ছে। কিন্তু স্পেনের মতো দলের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে এসব ফলাফল নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে বিপদ হতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে আমাদের। কিন্তু নেইমার-অস্কাররা এসব বার্তাকে থোড়াই কেয়ার করেন। তাই ফাইনাল মহারণের আগেই সেলেকাওদের চতুর্থ কনফেডারেশনস কাপের জন্য হুংকার দিয়ে রেখেছেন এই জুটি, যার সারমর্ম হলো কাপটা চাইই চাই। ফাইনালে নেইমার খেলতে নামছে এমন একটা দেশের বিরুদ্ধে যার ন-ন’জন কিনা ওর ক্লাব সতীর্থ । পিকে, আলবা, জাভি, ইনিয়েস্তা কে নেই। ওরা সবাই বার্সেলোনার। হয়তো পরের সপ্তাহেই যে জার্সি পরে কিনা নেইমারও ক্লাব প্র্যাক্টিসে নেমে পড়বে! কনফেড ফাইনালে স্কিলের যুদ্ধ জমবে ভালো। এক দিকে নেইমার-অস্কার। অন্য দিকে, তোরেস-ভিয়ারা। রোববার রাতে দেখা যাবে কে সেরা। নেইমার নাকি অন্য কেউ। স্পেন নাকি ব্রাজিল?


ফুটবল ভক্ত শাকিরা
স্পেনের একনিষ্ট ভক্ত শাকিরা কনফেডারেশন কাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল স্পেন বনাম ইটালীর ম্যাচ গ্যালারীতে বসে দেখেন। ভক্তরা কলম্বিয়ান সঙ্গীতশিল্পী শাকিরাকে হৃদয় খুন করা হাসির সঙ্গে মঞ্চে নাচ ও উল্লাস করতে দেখতেই অভ্যস্ত। বৃহস্পতিবার সেই শাকিরা হয়ে গেলেন ফুটবলের একনিষ্ঠ ভক্ত। আশা করা যায় স্পেন ফাইনালে উঠায় তাকে রোববার রাতেও গ্যালারীতে বসে খেলা দেখবেন। কনফেডারেশনস কাপের দ্বিতীয় সেমিতে স্পেন ও ইতালির খেলা দেখতে স্টান্ডে দাঁড়িয়ে গেলেন শাকিরা। স্পেনিশ বয়ফ্রেন্ড জেরার্ড পিকেকে হাততালি দিয়ে উজ্জীবিত করলেন। তাতেই কি না টাইব্রেকারে দারুণ এক পেনাল্টি কিক নিয়ে দলকে কক্ষপথে রাখলেন পিকে । ফোরটালেজার স্টেডিয়ামকে আলোকিত করার সময় শাকিরার কোকড়ানো চুলে ব্লাক হোয়াইট টপের বাহার আকর্ষণের কেন্দ্রে রেখেছিল তাকে। তবে এ সময় ৩৬ বছর বয়সী এ শিল্পীকে যতোটা না বিশ্বখ্যাত তারকা মনে হচ্ছিল, তার চেয়ে বেশি মনে হয়েছে ফুটবল-ভক্ত। এ কারণেই হয়তো ছয় মাসের বাচ্চা মিলানকে সঙ্গে নিয়ে আসেননি তিনি। শাকিরার সঙ্গে ফুটবলের সম্পর্ক ২০১০ সালে। যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ওই ফিফা বিশ্বকাপের থিম সং ‘ওয়াকা ওয়াকা’ (দিস টাইম ফর আফ্রিকা) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অপূর্ব দেহশৈলী প্রদর্শন করে তা পরিবেশন করেন। শাকিরা, যাতে একটি বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন পিকে। এতেই ফুটবল ও গানের জগতের দুই বাসিন্দার পরিচয়, প্রণয় ও পরিণয়। ফেসবুক ও টুইটারে ২০১১ সালের ২৯ মার্চ যা স্বীকার করেন কলম্বিয়ান গায়িকা।


ডিনিউজবিডি/সোহেল  

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়