Saturday, June 15

ফেসবুকে বন্ধু তৈরি করে টাকা ধার নিতেন ইমা


ঢাকা : বহু রকমের প্রতারণা জানা রিজওয়ানা খালেদ ইমা ছেলে বন্ধুদের আকৃষ্ট করতে ফেসবুকে পোস্ট করতেন আকর্ষণীয় ছবি। প্রোফাইল পিকচারে একটি ছবি থাকলেও প্রায়ই পোস্ট করতেন নানা রকমের ছবি। আর বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি করে টাকা ধার নিতেন তিনি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ এসেছে। অভিযোগকারীরা গোয়েন্দা পুলিশকে জানিয়েছেন, ‘ফেসবুকে ইমা নিজেই এসব বন্ধুকে রিকোয়েস্ট পাঠান। আর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট হলেই চ্যাটিং বক্সে ‘হায়’ লিখেন। এতে করে ছেলে বন্ধুরা তার প্রতি দুর্বল হতে থাকে। এক পর্যায় চ্যাটিং শুরু হয়। কারও কারও মনে আবার খটকা লাগে। ইমা ‘আসলে কোনো মেয়ে বন্ধু নাকি ভুয়া আইডি তা জানার চেষ্টা করে। এরই এক পর্যায় বন্ধুদের কাছে ইমা তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বর দেন।’
প্রতারণার শিকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যুবক জানিয়েছেন, ‘উচ্চশিক্ষার জন্য তার বিদেশে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বছর তিনেক আগে ফেসবুকে ইমার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর তার সেই যাত্রা ব্যাহত হয়েছে। ফেসবুকে ইমার সঙ্গে পরিচয়ের আগে ওই যুবক তাকে চ্যাটিং বক্সে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘এটা কি তোমার আসল আইডি, নাকি ফেক (ভুয়া) আইডি। উত্তরে ইমা জানিয়েছিল, না না ফেক আইডি হবে কেন-এটা আমার আসল আইডি। বিশ্বাস না হলে ফোন নম্বর দিলাম। কথা বলতে পার।’ ওই যুবক বলেন, ‘ইমা ফোন নম্বর দিলে তার সঙ্গে কথা হয়। এক পর্যায়ে দেখা হয়। গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে বসে লাঞ্চ করা হয়। ধীরে ধীরে সম্পর্ক অনেক গভীর হতে থাকে। প্রায় এক বছরে সম্পর্ককালীন বেশকিছু টাকা ধার নেন তিনি। সর্বশেষ টাকা ধার নিয়ে গা-ঢাকা দেন। আর কোনো খবর নেই।’ মাঝে একবার ফোনে পাওয়া গেলেও তাকে মামলার ভয় দেখানো হয়। মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে সম্পর্কের কথা জাহির করে তাকে শাসিয়ে রাখা হয় বলে জানান ওই যুবক। এদিকে আলোচিত প্রতারক চরিত্র রিজওয়ানা খালেদ ইমার ভাই তানভীর খালেদকে খুঁজছেন গোয়েন্দারা। ইমা ও তানভীর মিলে ভাই-বোনের প্রতারক সিন্ডিকেটের শিকার হওয়া শত শত মানুষ অভিযোগ করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। প্রতারণার শিকার অনেকে বলেছেন, রিজওয়ানা যখন তাদের কাছে দামি গাড়ি হাঁকিয়ে আসতেন তখন বোঝা যেত না তার আসল চরিত্র। কিন্তু টাকা ধার নিয়ে ফেরত চাইলেই তার টালবাহানা শুরু হয়। ভয় দেখানো হয় মিথ্যা মামলার।
ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, রিজওয়ানা খালেদ ইমার ভাই তানভীর ও বাবা আলমগীর খালেদকে গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতেও সম্ভাব্য কয়েকটি এলাকায় তাদের ধরতে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু কোথাও তাদের পাওয়া যায়নি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানান, আমরা নতুন নতুন কিছু তথ্য পেয়েছি। সব ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। আমরা তথ্যদাতাদের কাছে ডকুমেন্টও চেয়েছি। অনেকে অবশ্য তথ্যের সঙ্গে ডকুমেন্ট দেখাতেও সক্ষম হয়েছেন। এডিসি ছানোয়ার হোসেন বলেন, অনেকে অভিযোগ করছেন ফোনে। তারা সরাসরি গোয়েন্দা কার্যালয়ে এসে অভিযোগ দিতে পারেন, এতে করে তারাই আইনগত সহায়তা পাবেন। তিনি বলেন, কেউ কেউ লজ্জা পাচ্ছেন অভিযোগ করতে। অবশ্য তারা সরাসরি এসে অভিযোগ করলে আমরা তাদের বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করব।
ডিবি পুলিশ জানায়, ৭ জুন রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় ইমাকে। গ্রেফতারের আগে দীপংকর সেন নামে একজ নাট্যকারের কাছে ৯ লাখ টাকায় একটি গাড়ি বিক্রির চুক্তি করে ৫ লাখ টাকা নেন ইমা। এ টাকা নেয়ার পর গাড়ি দিতে টালবাহানা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে দীপংকর গাড়ির কাগজ নিয়ে মালিকানা খুঁজতে গিয়ে দেখেন মালিক আরেকজন। এরপরই তিনি গোয়েন্দা পুলিশকে বিষয়টি অবগত করেন।
আমীর হোসেন নামে রেন্ট-এ-কারের ব্যবসায়ীর গাড়ি নাট্যকার দীপংকরের কাছে বিক্রি করে নিজে মালিক সাজতে গিয়ে সর্বশেষ প্রতারণায় ধরা পড়েন ইমা। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে ডিবির কাছে একে একে অভিযোগ আসতে থাকে।(ডিনিউজ)

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়