ঢাকা : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেছেন, ‘আমি ৭ মার্চ রেসকোর্স (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী) ময়দানের ঐতিহাসিক সমাবেশে অংশ নিয়েছিলাম।’
রোববার বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনি সপ্তম দিনের সাক্ষ্য দিতে গিয়ে একথা বলেন।
একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনালের কাছে জিজ্ঞাসা করেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে অংশ নিয়েছিলাম। তাহলে তো আমি দাবি করতেই পারি, আমিও মুক্তিযুদ্ধের একজন সমর্থক।’
এছাড়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী আজ মুক্তিযুদ্ধের সময় তার পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ভূমিকা ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরেন।
সাক্ষ্য দেয়ার সময় সালাহউদ্দিন কদের চৌধুরী সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা ছিলেন। এ সময় তাকে অসুস্থ দেখাচ্ছিল। সাক্ষ্য দেয়ার সময় তিনি বেশ কয়েকবার বসে পড়েন।
আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওই সময় তার ধানমন্ডির বাসায় নিয়মিত আসতেন শেখ কামাল, তোফায়েল আহমেদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সিরাজুল আলম খান, আব্দুল কুদ্দুস মাখন, সালমান এফ রহমান, শাহজান সিরাজসহ আরো অনেকে।’
তিনি আরো বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে আসাদকে যখন হত্যা করা হয় তখন তার ১০ ফুট দূরত্বের মধ্যে আমি ছিলাম। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাস সমাবেশেও অংশ নিয়েছিলাম।’
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘ওই সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাকে স্বাধীনতার ঘোষণা বলে দাবি করা হয়ে থাকে। যদি তাই হয় তবে আমি দাবি করতে পারি আমি মুক্তিযুদ্ধের একজন সমর্থক ছিলাম।’
তিনি বলেন, ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আমি ঢাকায় থাকতাম। যেহেতু ঢাকায় আমাদের কোনো ড্রাইভার ছিল না সে কারণে আমার বাবার বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমিই গাড়ি ড্রাইভ করতাম।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ধানমন্ডির বাড়িটি আমার কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের আড্ডাখানা ছিল। আমার জানা মতে, আমিই একমাত্র ছাত্র ছিলাম যে ধানমন্ডিতে একাকী একটি বাড়িতে বাস করতাম এবং তার একটি গাড়ি ছিল।
তিনি বলেন, ‘আমার পিতা চট্টগ্রামের রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে জড়িত ছিলেন। এমএলএ, এমএনএ, মন্ত্রিসভার সদস্য, স্পিকার এবং ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার পিতার কর্মকাণ্ডের স্বাক্ষর আজও বহন করছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি প্রভৃতি।’
সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, ‘১৯৬০ সালে যখন আমি ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। তখন থেকে আমি নিজস্ব পদ্ধতির জীবন যাপন করতাম, যা আমার পুরো শিক্ষা জীবনেই বহাল ছিল। যার মধ্যে সাদিক পাবলিক স্কুল, নটরডেম কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নের সময় অন্তর্ভুক্ত ছিল।’
তিনি বলেন, ১৯৬৫ সালের শেষ এবং ’৬৬ সালের শুরুর চার মাস সময়, যখন আমি প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম সে সময় ছাড়া ’৬৬ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত আমি কখনোই চট্টগ্রামে আমার পারিবারিক বাসভবন গুডস হিলে থাকিনি।
তিনি আরো জানান, চট্টগ্রামের সঙ্গে আমার সামাজিক যোগাযোগের পুরোটাই ১৯৭৪ সালের পরের। ১৯৭৯ সালের পূর্বে চট্টগ্রামের ভোটার তালিকায়ও আমার নাম ছিল না। ১৯৬৬ সালের শুরুর দিকে আমার পিতা যখন মুসলীম লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন তখন থেকে ’৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি গণপরিষদের একজন স্বতন্ত্র সদস্য ছিলেন। এ সময় তিনি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন, যে আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে আইয়ুব শাসনের সমাপ্তি হয়।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘এ সময় সাধারণভাবেই তার যোগাযোগ ছিল মুসলীম লীগার নন এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিচারপতি মাহবুব মোর্শেদ, এয়ার ভাইস মার্শাল আসগার খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান, নুরুল আমীন, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী।’
তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ এবং ছাত্র ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে তখন আমার ঘনিষ্টতা ছিল। যদিও আমি নিজে কখনো কোনো ছাত্র সংগঠনের সদস্য ছিলাম না।
তিনি জানান, আমার বন্ধুদের সঙ্গে ’৬৯ সালে আমি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম। সে আন্দোলনের একটি ধানমন্ডি অধ্যায়ও ছিল। তারা প্রায়শই আমার ধানমন্ডির বাসায় মিলিত হতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া আমার বন্ধুদের মধ্যে যারা ধানমন্ডিতে থাকতো এবং যারা ধানমন্ডির বাইরে থাকতো তারা আমার বাসায় আসতো।
সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, বাসায় যারা আসতো তাদের মধ্যে যাদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা ছিল তারা হলেন- তওহিদ সামাদ, আহমেদ সালমান ফজলুর রহমান (সালমান এফ রহমান), শেখ কামাল, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নিজাম আহমেদ, খায়রুল বাশার, ইরফান খান, ইমরান আহমেদ, কাজী আনোয়ার, আব্দুস সামাদ, কাইয়ুম রেজা চৌধুরীসহ আরো অনেকে।
জেষ্ঠ্যদের মধ্যে আব্দুর রউফ, তোফায়েল আহমেদ, খালেদ মোহাম্মদ আলী, সিরাজুল আলম খান, আব্দুল কুদ্দুস মাখন, শাহজাহান সিরাজদের তিনি আমন্ত্রণ জানাতেন বলে জানান।
আন্দোলনকে বেগবান করতে তারা আমার বাড়িতে মিলিত হতেন। সিনিয়রদের এসব মিটিংয়ে আতিথেয়তা দেয়াই ছিল আমার কাজ। এসব নেতাদের অনেকে আমার পিতার সঙ্গেও প্রায়শই দেখা করতেন।
সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, ছাত্রলীগ এবং ছাত্রইউনিয়নের বন্ধুদের সঙ্গে আমিও ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক সমাবেশে অংশ নিয়েছিলাম। সে ঐতিহাসিক বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণের আকাঙ্খাই ব্যক্ত করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘এটা দাবি করা হয়ে থাকে যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ কার্যত স্বাধীনতার ঘোষণা। ওই ঐতিহাসিক সমাবেশে আমার উপস্থিতি সুনিশ্চিত করতে পারেন, এমন বহুসংখ্যক ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তোফায়েল আহমেদ, মনিরুল হক চৌধুরী, নূরে আলম সিদ্দিকী, শাহজাহান সিরাজ, সালমান এফ রহমান, খায়রুল বাশার, নিজাম আহমেদ, কাইয়ুম রেজা চৌধুরী, ড. বেলাল বাকী, তাওহিদ সামাদসহ আরো অনেকে।’
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আমার পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর একাধিক বৈঠক হয়। ওইসব বৈঠকের খবর সে সময়কার সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।
মধ্যহ্ন বিরতির আগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে আজকের মতো সাক্ষ্য শেষ করার আবেদন জানান। এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আপনাকে তো সাক্ষ্য শেষ করতে হবে। আপনি ইতিহাসের কথা বলছেন, তা শুনে আমাদের কী লাভ?’
এ সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে তো ইতিহাস থেকেই অভিযোগ আনা হয়েছে। পলাশী থেকে শুরু করা হয়েছে। দেড় বছর আমার বিরুদ্ধে বলা হয়েছে। অথচ আমাকে বলতে দেয়া হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, সাঈদী সাহেবের মামলার সময় বলা হয়েছে, এখনকার সাঈদীর বিচার হচ্ছে না। দেলু শিকদারের বিচার হচ্ছে। আমার ব্যাপারে বলা হচ্ছে, ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলের বিচার হচ্ছে, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিচার হচ্ছে না।
‘আপনাদের লিমিটেশন আমি বুঝি, আমার লিমিটেশনও আমি বুঝি’ যোগ করেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দীর্ঘ সাক্ষ্যে আপত্তি জানান। পরে ট্রাইব্যুনাল আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি করেন। একই সঙ্গে আগামীকালের মধ্যেই সাক্ষ্য শেষ করতে বলেন।(ডিনিউজ)
রোববার বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনি সপ্তম দিনের সাক্ষ্য দিতে গিয়ে একথা বলেন।
একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনালের কাছে জিজ্ঞাসা করেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে অংশ নিয়েছিলাম। তাহলে তো আমি দাবি করতেই পারি, আমিও মুক্তিযুদ্ধের একজন সমর্থক।’
এছাড়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী আজ মুক্তিযুদ্ধের সময় তার পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ভূমিকা ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরেন।
সাক্ষ্য দেয়ার সময় সালাহউদ্দিন কদের চৌধুরী সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা ছিলেন। এ সময় তাকে অসুস্থ দেখাচ্ছিল। সাক্ষ্য দেয়ার সময় তিনি বেশ কয়েকবার বসে পড়েন।
আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওই সময় তার ধানমন্ডির বাসায় নিয়মিত আসতেন শেখ কামাল, তোফায়েল আহমেদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সিরাজুল আলম খান, আব্দুল কুদ্দুস মাখন, সালমান এফ রহমান, শাহজান সিরাজসহ আরো অনেকে।’
তিনি আরো বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে আসাদকে যখন হত্যা করা হয় তখন তার ১০ ফুট দূরত্বের মধ্যে আমি ছিলাম। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাস সমাবেশেও অংশ নিয়েছিলাম।’
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘ওই সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাকে স্বাধীনতার ঘোষণা বলে দাবি করা হয়ে থাকে। যদি তাই হয় তবে আমি দাবি করতে পারি আমি মুক্তিযুদ্ধের একজন সমর্থক ছিলাম।’
তিনি বলেন, ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আমি ঢাকায় থাকতাম। যেহেতু ঢাকায় আমাদের কোনো ড্রাইভার ছিল না সে কারণে আমার বাবার বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমিই গাড়ি ড্রাইভ করতাম।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ধানমন্ডির বাড়িটি আমার কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের আড্ডাখানা ছিল। আমার জানা মতে, আমিই একমাত্র ছাত্র ছিলাম যে ধানমন্ডিতে একাকী একটি বাড়িতে বাস করতাম এবং তার একটি গাড়ি ছিল।
তিনি বলেন, ‘আমার পিতা চট্টগ্রামের রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে জড়িত ছিলেন। এমএলএ, এমএনএ, মন্ত্রিসভার সদস্য, স্পিকার এবং ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার পিতার কর্মকাণ্ডের স্বাক্ষর আজও বহন করছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি প্রভৃতি।’
সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, ‘১৯৬০ সালে যখন আমি ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। তখন থেকে আমি নিজস্ব পদ্ধতির জীবন যাপন করতাম, যা আমার পুরো শিক্ষা জীবনেই বহাল ছিল। যার মধ্যে সাদিক পাবলিক স্কুল, নটরডেম কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নের সময় অন্তর্ভুক্ত ছিল।’
তিনি বলেন, ১৯৬৫ সালের শেষ এবং ’৬৬ সালের শুরুর চার মাস সময়, যখন আমি প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম সে সময় ছাড়া ’৬৬ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত আমি কখনোই চট্টগ্রামে আমার পারিবারিক বাসভবন গুডস হিলে থাকিনি।
তিনি আরো জানান, চট্টগ্রামের সঙ্গে আমার সামাজিক যোগাযোগের পুরোটাই ১৯৭৪ সালের পরের। ১৯৭৯ সালের পূর্বে চট্টগ্রামের ভোটার তালিকায়ও আমার নাম ছিল না। ১৯৬৬ সালের শুরুর দিকে আমার পিতা যখন মুসলীম লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন তখন থেকে ’৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি গণপরিষদের একজন স্বতন্ত্র সদস্য ছিলেন। এ সময় তিনি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন, যে আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে আইয়ুব শাসনের সমাপ্তি হয়।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘এ সময় সাধারণভাবেই তার যোগাযোগ ছিল মুসলীম লীগার নন এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিচারপতি মাহবুব মোর্শেদ, এয়ার ভাইস মার্শাল আসগার খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান, নুরুল আমীন, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী।’
তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ এবং ছাত্র ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে তখন আমার ঘনিষ্টতা ছিল। যদিও আমি নিজে কখনো কোনো ছাত্র সংগঠনের সদস্য ছিলাম না।
তিনি জানান, আমার বন্ধুদের সঙ্গে ’৬৯ সালে আমি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম। সে আন্দোলনের একটি ধানমন্ডি অধ্যায়ও ছিল। তারা প্রায়শই আমার ধানমন্ডির বাসায় মিলিত হতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া আমার বন্ধুদের মধ্যে যারা ধানমন্ডিতে থাকতো এবং যারা ধানমন্ডির বাইরে থাকতো তারা আমার বাসায় আসতো।
সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, বাসায় যারা আসতো তাদের মধ্যে যাদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা ছিল তারা হলেন- তওহিদ সামাদ, আহমেদ সালমান ফজলুর রহমান (সালমান এফ রহমান), শেখ কামাল, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নিজাম আহমেদ, খায়রুল বাশার, ইরফান খান, ইমরান আহমেদ, কাজী আনোয়ার, আব্দুস সামাদ, কাইয়ুম রেজা চৌধুরীসহ আরো অনেকে।
জেষ্ঠ্যদের মধ্যে আব্দুর রউফ, তোফায়েল আহমেদ, খালেদ মোহাম্মদ আলী, সিরাজুল আলম খান, আব্দুল কুদ্দুস মাখন, শাহজাহান সিরাজদের তিনি আমন্ত্রণ জানাতেন বলে জানান।
আন্দোলনকে বেগবান করতে তারা আমার বাড়িতে মিলিত হতেন। সিনিয়রদের এসব মিটিংয়ে আতিথেয়তা দেয়াই ছিল আমার কাজ। এসব নেতাদের অনেকে আমার পিতার সঙ্গেও প্রায়শই দেখা করতেন।
সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, ছাত্রলীগ এবং ছাত্রইউনিয়নের বন্ধুদের সঙ্গে আমিও ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক সমাবেশে অংশ নিয়েছিলাম। সে ঐতিহাসিক বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণের আকাঙ্খাই ব্যক্ত করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘এটা দাবি করা হয়ে থাকে যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ কার্যত স্বাধীনতার ঘোষণা। ওই ঐতিহাসিক সমাবেশে আমার উপস্থিতি সুনিশ্চিত করতে পারেন, এমন বহুসংখ্যক ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তোফায়েল আহমেদ, মনিরুল হক চৌধুরী, নূরে আলম সিদ্দিকী, শাহজাহান সিরাজ, সালমান এফ রহমান, খায়রুল বাশার, নিজাম আহমেদ, কাইয়ুম রেজা চৌধুরী, ড. বেলাল বাকী, তাওহিদ সামাদসহ আরো অনেকে।’
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আমার পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর একাধিক বৈঠক হয়। ওইসব বৈঠকের খবর সে সময়কার সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।
মধ্যহ্ন বিরতির আগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে আজকের মতো সাক্ষ্য শেষ করার আবেদন জানান। এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আপনাকে তো সাক্ষ্য শেষ করতে হবে। আপনি ইতিহাসের কথা বলছেন, তা শুনে আমাদের কী লাভ?’
এ সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে তো ইতিহাস থেকেই অভিযোগ আনা হয়েছে। পলাশী থেকে শুরু করা হয়েছে। দেড় বছর আমার বিরুদ্ধে বলা হয়েছে। অথচ আমাকে বলতে দেয়া হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, সাঈদী সাহেবের মামলার সময় বলা হয়েছে, এখনকার সাঈদীর বিচার হচ্ছে না। দেলু শিকদারের বিচার হচ্ছে। আমার ব্যাপারে বলা হচ্ছে, ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলের বিচার হচ্ছে, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিচার হচ্ছে না।
‘আপনাদের লিমিটেশন আমি বুঝি, আমার লিমিটেশনও আমি বুঝি’ যোগ করেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দীর্ঘ সাক্ষ্যে আপত্তি জানান। পরে ট্রাইব্যুনাল আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি করেন। একই সঙ্গে আগামীকালের মধ্যেই সাক্ষ্য শেষ করতে বলেন।(ডিনিউজ)
খবর বিভাগঃ
রাজনীতি
সর্বশেষ সংবাদ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়