:: শাহীনুর রহমান, পাবনা ::
দীর্ঘ দিনেও পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিন্যাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্মিত হয়নি পাকা ভবন। একমাত্র ভাঙাচোরা টিনের ঘরটি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় এখন স্কুলের পাশের গাছতলায় চলছে কোমলমতি ১৫৭ শিক্ষার্থীর পাঠদান।
দীর্ঘ দিনেও পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিন্যাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্মিত হয়নি পাকা ভবন। একমাত্র ভাঙাচোরা টিনের ঘরটি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় এখন স্কুলের পাশের গাছতলায় চলছে কোমলমতি ১৫৭ শিক্ষার্থীর পাঠদান।
জানা যায়, ১৯৩৩ সালে চাটমোহর উপজেলার বিন্যাবাড়ি গ্রামে গুমানী নদীর তীরে প্রতিষ্ঠিত হয় এই সরকারি বিদ্যালয়টি। ১০ বছর আগে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় স্কুলটি। এরপর সেটি স্থানান্তর করা হয় গ্রামেরই একটি ওয়াকফ্ এস্টেটের জমিতে। কিন্তু কিছুদিন পরই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে দোচালা টিনের স্কুলঘরটি।
স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম জানান, নিজস্ব জমি না থাকায় স্কুলটিতে লাগছে না উন্নয়নের ছোঁয়া। ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে দোচালা টিনের ঘরটি।
স্থানীয় বাসিন্দা জমশেদ প্রামাণিক ও শিবলু হোসেন বলেন, “স্কুলটির ঘর ভাঙা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। গরমের মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস করতে চরম অসুবিধা হচ্ছে। একটি নতুন পাকা ভবন নির্মিত হলে এ দুর্ভোগ ও কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যেতো।”
এদিকে যেকোনো মুহূর্তে সেটি ভেঙে পড়ে কোমলমতি শিশুদের প্রাণহানির কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
স্কুলটির সহকারী শিক্ষক আব্দুল মতিন জানান, ভাঙাচোরা স্কুল ঘরটিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বসার মতো প্রয়োজনীয় চেয়ার, টেবিল ও বেঞ্চ নেই। বেশিরভাগ বেঞ্চই ভাঙা। কোনোমতে দাঁড়িয়ে থেকে ক্লাস করতে হয় শিক্ষার্থীদের। এমনকি ঘরটিতে নেই কোনো দরজা-জানালা। পুরাতন টিনের ভাঙা ঘরের এক পাশে অফিস রুম। কিন্তু সেটি শুধু নামে মাত্র। সেখানে কোনো আসবাবপত্র নেই। অন্যদিকে প্রধান শিক্ষিকা বাড়ি থেকে যৎসামান্য উপকরণ নিয়ে ক্লাস করান।
স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মেহেদী হাসানের বাবা আওলাদ হাসান জানান, বর্তমানে মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে স্কুলঘরের চাল ও বেড়া। দরজা-জানালা ভাঙা। একটু ঝড় বৃষ্টিতে পানি পড়ে ভিজে যায় অফিসের কাগজপত্রসহ শিক্ষার্থীদের বই খাতা। এর মাঝেই গত ১০ বছর ধরে গাছতলায় নিরলসভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে চলেছেন শিক্ষকরা।
তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র লালন হোসেন বলে, “আমাদের শ্রেণিকক্ষ ভাঙা। বেঞ্চও ভাঙা। ক্লাসে বসা যায় না। তাছাড়া প্রচণ্ড গরমের কারণে ভিতরে ক্লাস করা যায় না। বৃষ্টি এলে বইখাতা, জামাকাপড় ভিজে যায়। স্কুলঘর ভাঙা হওয়ার কারণে লেখাপড়ার ভালো পরিবেশ নেই। শিক্ষকরা আমাদের গাছতলায় পড়াচ্ছেন।”
সহকারী শিক্ষক কাফি হোসেন জানান, স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১৫৭ জন। শিক্ষক ৪ জন থাকলেও একজন পিটিআই প্রশিক্ষণে থাকায় ৩ জন শিক্ষক পাঠদান করছেন।
এছাড়া স্কুলে আসবাবপত্র বলতে ভাঙাচোরা ৫-৬ জোড়া বেঞ্চ আর একটি টেবিল ৩টি চেয়ার। স্কুলের সামনে আমগাছের তলায় মাটিতে চট বিছিয়ে বসতে হয় শিক্ষার্থীদের। এর মধ্যেই গাদাগাদি করে দুই শিফটে চলছে ক্লাস।
তিনি জানান, গাছতলায় ক্লাস করানো হয় কিন্তু পাশেই বিভিন্ন ফসল কাটাই, মাড়াই ও ওড়ানোর কাজ করা হয়। এছাড়া শ্যালো ইঞ্জিনের শব্দে লেখাপড়ার করতে চরম কষ্ট হয়। কোনো শিক্ষক এই স্কুলে বদলি হয়ে এলেও এমন পরিবেশে তারা বেশি দিন থাকতে চান না।
এদিকে স্কুলটিতে পাকা ভবন না থাকায় শিশুদের পাঠদান করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “বিদ্যালয়ের দুরবস্থা নিয়ে সরকারি অফিসে বিভিন্ন সময় জানানো হলেও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি।”
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রওশন আরা খাতুন জানান, ১৯৩৩ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন পর্যন্ত একটি পাকা ভবন হলো না।
পাকা ভবন না হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি জানান, স্কুলের জন্য নিজস্ব জমির প্রয়োজন, কিন্তু তা নেই। সম্প্রতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামান খোকন স্কুলের জন্য জমি দিয়েছেন। স্কুলটিতে একটি পাকা ভবন হলে লেখাপড়ার পরিবেশ ও মান আরো ভালো করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধান শিক্ষিকা।
নিমাইচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান বলেন, “আমার নিজ গ্রাম বিন্যাবাড়ি। এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াতে স্কুলটি তার নিজস্ব জমিতে প্রতিষ্ঠিত হোক এজন্য আমি মাঠের একটি জমি দান করেছি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাটমোহর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. সেলিম রেজা বলেন, “বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমি না পাওয়ায় এতদিন পাকা ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। তবে সম্প্রতি একজন জমি দান করায় পাকা ভবন নির্মাণের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশা করছি খুব শিগ্গিরই সরকারের পক্ষ থেকে স্কুলটির পাকা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।”(পরিবর্তন)
খবর বিভাগঃ
বিশেষ খবর
শিক্ষাঙ্গন
সর্বশেষ সংবাদ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়