Sunday, June 16

আওয়ামী লীগের ভরাডুবির নেপথ্য


ঢাকা : ২০০৮ সালের ৪ আগস্টের নির্বাচনের বিপরীত ফলাফল হয়েছে এবার চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের সব প্রার্থীরই ভরাডুবি হয়েছে। এই ভরাডুবির কারণ বিশ্লেষণ করেছেন স্থানীয় বোদ্ধারা। তাদের চুলচেরা বিশ্লেষণে পরাজয়ের পেছনে উঠে এসেছে বহু কারণ। ক্ষমতার মসনদ থেকেও ধরাশায়ী এসব হেভিওয়েট প্রার্থীর শোচনীয় পরাজয়কে জাতীয় রাজনীতির সঙ্গেও তুলনা করেছেন অনেকে। ক্ষমতাসীন মহাজোটের অসংখ্য অগণতান্ত্রিক আচরণ, বিরোধী দলের প্রতি জেল, জুলুম, অত্যাচার, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচার, দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ক্ষমতায় থেকে সম্পদ বৃদ্ধি, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী তৈরি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজি, মাস্তানি, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি, তৃণমূল নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করা, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ইসলামী জোট ও হেফাজতে ইসলামের প্রচারণা, জামায়াত-শিবিরসহ অন্যান্য ইসলামী দলের চরম বিরোধিতা, ক্ষমতায় থেকেও প্রতিশ্র“তি রক্ষা না করাসহ অসংখ্য কারণকে চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকরা। তাছাড়া সিলেটের বিগত ৩০ বছরের ক্ষমতার মসনদে জেঁকে বসেছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি তিনবার কাউন্সিলর, পৌর মেয়র ও দুবার সিটি মেয়র হিসেবে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েও সিলেট সিটির ভোটারদের মন জয় করতে পারেননি। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, কোটারিস্বার্থে বিভাজন সৃষ্টি ও সাধারণ মানুষকে মূল্যায়ন না করাকেই পরাজয়ের কারণ মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাছাড়া তারা পুরনো মুখের পরিবর্তনও চেয়েছিল এবার। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে খুলনার তালুকদার আবদুল খালেকের বেলাতেও। তিনিও পৌর মেয়র, এমপি ও সিটি মেয়র হিসেবে ছয়বার কোনো নির্বাচনেই পরাজিত হননি। এবারই তিনি প্রথম এভাবে নতুন মুখের কাছে শোচনীয়ভাবে হারলেন। বরিশাল ও রাজশাহীতেও মানুষ চেয়েছিল পরিবর্তন।

সিলেট : জননন্দিত জননেতা, ‘ভোটের রাজা’ এরকম কত পরিচয়ই না আছে সদ্য সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের। কিন্তু এসব পরিচয়ে পরিচিত কামরানকে বিপুল ভোটে পরাজিত হতে হয়েছে গতকালের জনরায়ে। এই রায়ের ফলে দীর্ঘদিনের জনপ্রতিনিধিত্বের চেয়ার ছাড়তে হচ্ছে তাকে। এতদিন নগরবাসী যাকে ক্ষমতার চেয়ারে বসিয়েছিল সেই জনতাই আবার তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে ক্ষমতার চেয়ার। সেই চেয়ার এবার বসতে দেয়া হচ্ছে কামরানের বিরোধী আদর্শের নেতা আরিফুল হক চৌধুরীকে। কিন্তু কেন? যেখানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ক্ষমতায় সেখানে কামরানকে এভাবে ক্ষমতা থেকে বিদায় দেয়ার আড়ালে রয়েছে নানা কারণ। কামরানের এই বিদায়কে তার সহযোদ্ধারা দেখছেন এক নক্ষত্রের পতন হিসেবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতার চেয়ারে বসে কামরান যে বলয় সৃষ্টি করেছিলেন সেই বলয়ে ছিল শুধু স্বার্থবাদী লুটেরারা। আদর্শহীন কতিপয় মানুষ কামরানকে পুঁজি করে তাদের নানা ধরনের ভিত্তি গড়েছে, খান খান করেছে কামরানের মসনদ। দীর্ঘ ৩০ বছরের ক্ষমতার দিকে ফিরে তাকালে কামরানের চারপাশে এখন শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। নগরবাসীকে দূরে ঠেলে লুটেরাদের কাছে টেনে যে ভবিষ্যতের দিকে তিনি এগুচ্ছিলেন সেই পথ যে কথ হ্রস্য তা এখন বুঝছেন তিলে তিলে। কামরানের বিরুদ্ধে রয়েছে উন্নয়ন বঞ্চিত সিলেটবাসীর হাজারো দুঃখ। স্বপ্নের পাহাড় দেখিয়ে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দিলেও এবার তা আর হতে দেয়নি সিলেট নগরবাসী। এই নগরবাসীই একজন সাধারণ যুবক কামরানকে বানিয়েছিল সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার। পাঠিয়েছিল সিলেট পৌরসভায়। এই নগরবাসীই তাকে বানিয়েছিল পৌর চেয়ারম্যান, মেয়র। অবশেষে সেই কামরানকে ফিরিয়ে দিল সেই জনতাই। তাকে নিয়ে সাধারণ জনতার দুঃখের ফিরিস্তি নিুে উল্লেখ করা হল। সাধারণ জনতার ভাষায়, নাগরিক কমিটি ও মহাজোট সমর্থিত ১৪ দলের প্রার্থী সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিনে ক্ষমতায় থাকাকালে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন, দলীয় সন্ত্রাসীদের লালন, মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তার ছেলে উদয়ন সিংহ পলাশকে এমসি কলেজের পাশে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন করা ছাত্রলীগ ক্যাডারদের লালন, সংখ্যালঘু নারী নেত্রী এস রীনা দেবীর সম্পদ দখল, কাউন্সিলর আজাদ বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতা, এমসি কলেজে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হোস্টেলে আগুন দেয়ার ঘটনা, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগের দু’গ্র“পের পাল্টাপাল্টি গুলিবর্ষণকারীদের মদদ দেয়া, সন্ধ্যাবাজার নিয়ে আলাউদ্দিন আলো নামে এক ব্যক্তির মিনি পতিতালয় স্থাপন, হকারদের পুনর্বাসন নিয়ে দীর্ঘদিনের টালবাহানা, মেয়রের কাছের লোক বলে পরিচিতদের নানাভাবে সুবিধা পাইয়ে দেয়াসহ এন্তার অভিযোগ রয়েছে।

খুলনা : খুলনার রাজনীতির প্রভাবশালী নেতা ও কেসিসির সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের ভরাডুবির নেপথ্যে বেশ কয়েকটি কারণ দায়ী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নগরবাসী। কমিশনার থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ ও খুলনার সিটি কর্পোরেশনে ছয়বার নির্বাচন করে প্রত্যেকটিতে জয় পেয়েছেন তিনি। এবারই প্রথম নির্বাচনে পরাজয়ের স্বাদ বরণ করতে বাধ্য হলেন। তার এ পরাজয়ের নেপথ্য কারণ হিসেবে আÍঅহংকার, মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, দুর্নীতি, দলীয় কোন্দল ও মহাজোটের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টিকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, কেসিসি নির্বাচনের ভরাডুবি রাজনৈতিক জীবনে অর্জন ুান করে দিয়েছে। আগামীতে তাকে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে। দলীয় প্রতিপক্ষরাই তার বড় শত্র“তে পরিণত হবে। পাশাপাশি নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় তাকে চারদলীয় জোটের আন্দোলনের বিরোধিতায় মাঠে থাকতে হবে। ফলে দলের ভেতর ও বাইরে উভয় দিকের চাপের মুখে পড়বেন তিনি। অন্যথায় তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়বে। খুলনার বিশিষ্টজন ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, যে সব কারণে তালুকদার আবদুল খালেকের পরাজয় হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- ২০০৮ সালে কেসিসি নির্বাচনে দেয়া প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হওয়া, হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের সক্রিয় বিরোধিতা করা, সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও ‘অশালীন শব্দ’ (হুয়ারের বাচ্চা) ব্যবহার করে গালিগালাজ করা, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ক্ষুদে ব্যবসায়ীকে চড়-লাথিসহ মারধর করা, কেসিসির কর্মচারীদের অসন্তোষ, নিজ দলের মধ্যে প্রতিহিংসা, মেয়রের দায়িত্বকালীন সম্পদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা, ঠিকাদারদের অসন্তোষ, সুবিধাবঞ্চিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিরোধিতা, কাউন্সিলর পদে যোগ্যদের মনোনয়ন না দেয়া, মহাজোটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি, সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলীকে সম্মিলিত নাগরিক কমিটিতে প্রধান করা, ফেসবুকে দোকানদার আসলামকে চড় ও লাথি মারার দৃশ্য প্রচার, শেখ রাজ্জাক আলীকে খুলনা-২ আসনে দলের মনোনয়ন দেয়ার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে একটি মহল ক্ষুব্ধ হওয়া, ওয়াসার জমি অধিগ্রহণের সময় দৌলতপুরের দেয়ানায় জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তোলা ও বিভিন্ন কারণে গণমানুষের আকাক্সক্ষার বিপক্ষে অবস্থান। এসব কারণে কেসিসি নির্বাচনে খালেকের পরাজয় হয়েছে বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা জানান। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চেয়ে ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

রাজশাহী : রাজশাহীতে সরকারবিরোধী সেন্টিমেন্ট, নাগরিক কমিটির সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের ও প্রচার কমিটির বিরোধ, বিএনপি-জামায়াতের রিজার্ভ ভোট, নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করা এবং নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তিকে দিয়ে কাজ করানোই কাল হল ১৪ দল সমর্থিত ও নাগরিক কমিটি মনোনীত প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের। পাশাপাশি সাত মিলিওনার ঠিকাদারের দৌরাÍ্য আর জনগণ থেকে দূরে সরে যাওয়ায় দ্বিতীয়বার মেয়র হওয়ার সুযোগ পেলেন না লিটন। ব্যাপক উন্নয়ন করার পরও নেতাকর্মীরা বিপদে-আপদে লিটনকে পাশে পায়নি বলে নগরীজুড়েই জনশ্র“তি রয়েছে। এছাড়া নির্বাচিত হওয়ার পর সাধারণ মানুষের থেকে লিটন দূরে সরে গিয়েছিলেন বলেও বিভিন্ন মহলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে নির্বাচনের প্রথম থেকেই নাগরিক কমিটির সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের এবং প্রচার কমিটির মনস্তাত্ত্বিক বিরোধ ছিল। শেষ মুহূর্তে তা অনেকটা মিটিয়ে ফেলার কথা বলা হলেও তা আসলে বাহ্যিকভাবে মিটিয়ে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু দুই পক্ষের দূরত্ব রয়েই গিয়েছিল। আর গত নির্বাচনে যেসব লোকের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহায়তায় নির্বাচনের বৈতরণী পার হয়েছিলেন লিটন তাদের সঙ্গেও মেয়র হওয়ার পর দূরত্ব বেড়েছিল তার। সেই সম্পর্ক আর স্বাভাবিক হয়নি, যা প্রভাব ফেলেছে এই নির্বাচনেও। উদাহারণ হিসেবে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের নেতা জামাত খানের কথা উল্লেখযোগ্য। গত নির্বাচনে লিটনের পক্ষে তার জোরালো ভূমিকা থাকলে নির্বাচিত হওয়ার পর লিটনই তাকে গ্রেফতার করিয়েছিলেন বলে জনশ্র“তি রয়েছে। এদিকে সিটি কর্পোরেশনে হাজারো ঠিকাদারের রুটিরুজি থাকলেও লিটন আসার পর তা চলে যায় গুটিকয়েক লোকের হাতে। বলা হয়ে থাকে লিটনের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে আলোচিত-সমালোচিত সেই সাত মিলিওনার ঠিকাদারের হাতে। যে কারণে দলীয় লোকজনও তার কাছ থেকে দূরে সরে যায়। তাছাড়া রাজশাহী অঞ্চলে ঐতিহ্যগতভাবেই জামায়াত-বিএনপির ভোট ও প্রভাব বেশি। এসব ভোট বিরোধী শিবিরে গেছে বলে স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেয়া যায়। তাছাড়া হেফাজতে ইসলামের লোকজনও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছে লিটনের বিরুদ্ধে। সেইসঙ্গে যোগ হয়েছে সরকারবিরোধী সেন্টিমেন্ট। সারাদেশের সরকারবিরোধী ইমেজের প্রভাব পড়েছে রাজশাহীতেও। ব্যক্তি লিটন বা ব্যক্তি বুলবুলের চেয়ে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি-জামায়াত ফ্যাক্টর কাজ করেছে। আর সব উপসর্গ এক হওয়ায় কপাল পুড়েছে খায়রুজ্জামান লিটনের।

বরিশাল : বরিশালে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থীরও ভরাডুবি ঘটেছে প্রধানত ছয় কারণে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- জিঘাংসামূলক জাতীয় রাজনীতির কুফল, গুলি, ঘুষি, সন্ত্রাস আর বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের ঐক্যকে মোটা দাগে চিহ্নিত করা যায়। সেই সঙ্গে বরিশালের নির্বাচন এই বার্তাও দিয়ে গেল যে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। প্রশাসন তার চরিত্র বদলায় না। ফলে সরকারে যারা থাকে, তাদের পক্ষেই কাজ করে স্থানীয় প্রশাসন, নির্বাচনী অফিস আর পুলিশ প্রশাসন। তবে সবচেয়ে বড় যে বার্তা ভোটাররা দিয়েছেন সেটি হচ্ছে, মুখে যা-ই থাকুক অন্তরে ঘৃণা আর ক্রোধের যে বহ্নিশিখা দাউ দাউ করে জ্বলে, সুযোগ পেলে তার বহিঃপ্রকাশ ব্যালটেই ঘটে। ১৪ দলীয় জোটের পরাজয়ের বিপরীতে ১৮ দলীয় জোটের জয়লাভের পেছনে দুটি মাত্র কারণ বড় করে দেখানো যায়। তা হচ্ছে, দলীয় ঐক্য এবং সরকারের সাড়ে ৪ বছরের শাসনামলের প্রতি সাধারণ মানুষের অনাস্থা। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও এতে প্রাধান্য পেয়েছিল জাতীয় ইস্যু। যে লিফলেটের রেশ ধরে পুলিশের গুলিতে আহসান হাবিব কামালের দেহরক্ষী আহত হন, সেই লিফলেটেই ছিল মূলত হিরনবিরোধী প্রচারণার মূল কথা। তাতে পিলখানায় সেনা কর্মকর্তা হত্যা, মতিঝিলে মধ্যরাতে হেফাজতে ইসলামের ওপর হামলা এবং কথিত নিহত হওয়ার পরিসংখ্যান, শেয়ার বাজার-ডেসটিনি-হলমার্ক-বিসমিল্লাহ গ্র“প ইত্যাদির দুর্নীতি, কুইক রেন্টাল এবং ভিওআইপি ব্যবসার ইস্যুগুলি বড় করে তুলে ধরতে সক্ষম হন সরকার বিরোধীরা। মূলত সরকার সমর্থক প্রার্থীররে পুঁজি ছিল নিজের ব্যক্তিগত ইমেজ। তিনি শহরের অলিগলিতে নিজের ৫ বছরের উন্নয়ন কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরেন নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঘন করেই। বিপরীত দিকে ১৮ দলের প্রার্থীর এ ধরনের ব্যক্তিগত কোনো ইমেজ নেই। কিন্তু হিরনের উন্নয়নের আড়ালে শহরতলী বা বর্ধিত অঞ্চলকে বঞ্চিত রাখার বিষয়টি দক্ষতার সঙ্গে বড় করে তুলে ধরতে সক্ষম হন বিএনপির প্রার্থী। তারা বলতে পেরেছেন, শহরে উন্নয়ন হয়েছে লোক দেখানো। বর্ধিত অঞ্চলকে বঞ্চিত রেখে শহরে একই রাস্তা বারবার উন্নয়নের নামে একদিকে লোক দেখানো কাজ হয়েছে, আরেক দিকে উন্নয়নের নামে অর্থ লোপাট করা হয়েছে। ফলে শহরে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। খাল পরিণত হয়েছে ড্রেনে। এর বাইরে হিরনের নিজের ডকইয়ার্ড তৈরির নামে নদী দখলের অভিযোগ তো রয়েছেই। এই বৈষম্যমূলক উন্নয়নের ফিরিস্তি মানুষের মন গলাতে পারেনি। যে কারণে ‘কলাগাছের’ ওপরই ভোট দিয়েছে মানুষ। সবচেয়ে বড় কাল হয়েছে কামালের দেহরক্ষীর পুলিশের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি। সেটিই ছিল টার্নিং পয়েন্ট। এরপর ভোটের দিন দুপুরে কামালের কপালে ঘুষি মারার ঘটনা বাকি টুকু ডুবিয়েছে টেলিভিশন প্রতীককে। এই সঙ্গে ভোটের কয়েকদিন আগে থেকে টেলিভিশনের পক্ষে প্রশাসনিক সন্ত্রাস, দলীয় নেতা-কর্মীদের ভুয়া ও বানানো মামলায় গ্রেফতার দেখানো, ঘরে অভিযান চালিয়ে ঘুমাতে না দেয়ার বাইরে দলীয় সন্ত্রাসও অন্যতম। ভোটের দিন কেন্দ্রে কেন্দ্রে আনারস প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। উপায়ন্তর না পেয়ে অনেকেই টেলিভিশনের প্রতীক ধারণ করে কেন্দ্রে এজেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। ভোট দিতে বুথে যাওয়া ভোটারদের নজর এড়ায়নি তা। এর বাইরে আরও একটি কারণকে চিহ্নিত করা হয়। সেটি হচ্ছে- আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর নির্লিপ্ততা এবং তার সময়কার ৮ ক্যাডার বাহিনীর কয়েকটির হিরনের সঙ্গে ভিড়ে যাওয়া। অনেকেরই ধারণা, হাসানাত চাননি হিরন আর ফিরে আসুক। কেননা, দীর্ঘদিন আত্মগোপন থেকে ফিরে যখন হাসানাত দেখলেন, বরিশালের রাজনীতিতে তিনি আর অপরিহার্য নন, তখন তিনি শহরই ছেড়ে দিয়েছিলেন। আর যখন এই উত্তম সময় পাওয়া গেল হারানো আসন পুনরুদ্ধারের; সেই সুযোগটি তিনি হাতছাড়া করেননি।(ডিনিউজ)

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়