ঢাকা: ওডিআইয়ের ৪০ বছর পেরিয়ে গেছে তারপরও ওয়ানডের কোনো শিরোপা জেতা হয়নি ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ডের। এর মধ্যে টেস্ট র্যাংকিংয়ের শীর্ষে পৌঁছেছে তারা। ২০১০এ ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত টি-২০ শিরোপা ছাড়া আর কোনো কৃতিত্ব তাদের নেই। জিতেছে কয়েকটি অ্যাশেজ (অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে)। কিন্তু জেতা হয়নি শুধু ওয়ানডের কোন ট্রফি। সেই খরা কাটানোর ভালো সুযোগ রোববার। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শেষ ফাইনালে নিজেদের মাঠেই তারা মুখোমুখি ভারতের। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের জেরে টালমাটাল হয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে পাড়ি জমিয়েছিল ভারত। সঙ্গে ইংল্যান্ডে মহেন্দ্র ধোনিদের খারাপ পরিসংখ্যান দলটির ভক্তদের শিরোপা স্বপ্নকে কঠিন করে তুলেছিল। তবে এবারের ইংলিশ গ্রীষ্মে দুরন্ত পারফরম্যান্সে সব শঙ্কা ও ভয়কে জয় করেছে আকাশি-সাদা তেরেঙ্গাধারীরা। ফাইনালের আগে তারা পেয়েছে ভয়াবহ বন্যায় দেশে হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর দুঃসংবাদ। ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষের মুখে হাসি ফোটাতেই রোববার বার্মিংহামে নামবে তারা। ২০১১ সালে আইসিসি বিশ্বকাপ জয়ের পর টানা দ্বিতীয় বিশ্ব-শিরোপার কাছাকাছি ভারত। রোববার চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারালেই বিশ্বকাপের পর টানা আইসিসির দ্বিতীয় ট্রফিটিও ঘরে তুলবে ভারত। বিশ্বকাপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারত চলমান চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে দারুণ পারফর্ম করছে। মহেন্দ্র সিং ধোনির বুদ্ধিদীপ্ত ক্যাপ্টেন্সিতে গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচ ও সেমিফাইনালে গুড়িয়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষকে। আর মাত্র একটি ধাপ, এটি জয় করলেই বড় একটি কৃতিত্ব দেখাবে দলটি। প্রথমবারের মতো টানা আইসিসির দুটি শিরোপা ঘরে তুলবে। শেষ হাসিটা কে হাসবেন, কুক নাকি ধোনি দেখার সেটাই। সবসময় ব্যাটিংই মূল শক্তি ভারতের। এর স্বাক্ষর রেখে তাদের ব্যাটসম্যানরা চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে রান করেছে ৬৫.৪৬ গড় আর ওভারপ্রতি ৫.৯৩ রেটে। বিপরীতে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের গড় মাত্র ৩৫.০০ আর ওভারপিছু রান নিয়েছেন ৫.৬৫ রেটে। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি তাদের বোলিংটাও অসাধারণ এবার। সবচেয়ে বেশি ৩৭ উইকেট নিয়েছে ভারতই। বিপরীতে ইংলিশরা নিয়েছে ৩০ উইকেট। ভারতীয় বোলারদের গড় ২৩.৮৯ ও ইকোনমি রেট ৪.৬৬। বিপরীতে ইংলিশদের গড় ২৮.৪০ ও ইকোনমি রেট ৫.৩৩। বুঝতেই পারছেন বোলিং, ব্যাটিং দুই বিভাগেই এগিয়ে ভারত। এতটা এগিয়ে আছে বলে খোদ ইংলিশ সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসেইন এগিয়ে রাখলেন ভারতকে। বললেন, পুরো টুর্নামেন্টে কোন ম্যাচ না হারা একমাত্র দল ভারত। এটাই বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগাবে ওদের। ধোনির মাথাটাও ঠাণ্ডা। ফাইনাল জেতার অনেক অভিজ্ঞতাও আছে ওর। তেমনি স্বীকার করলেন আরেক সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভনও। তিনি ডেইলি টেলিগ্রাফে এক কলামে ভারতকেই এগিয়ে রাখলেন। এদিকে স্বাগতিক দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এই টূর্ণামেন্টে শিরোপা জিততে পারলে ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) ২০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। দলের ১৫ জন ক্রিকেটারদের মাঝে এই অর্থ ভাগ করে দেবার কথা রয়েছে। যে কোনো প্রতিযোগিতার ফাইনাল মানে বিশেষ কিছু । ঐদিন যারা মাথা ঠান্ডা রেখে মাঠে শ্রেষ্ঠ পারফরম্যান্স দেখাতে পারে জয়ের মুকুট তাদের হাতেই শোভা পায়। সুতরাং এখন অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। সারা বিশ্বের কোটি কোটি ক্রিকেট প্রেমি দর্শকরা এখন একটি উত্তেজনায় ঠাসা ফাইনাল দেখার প্রত্যাশায়। ওয়ানডে ক্রিকেটে রাজাসন গেড়েছে ভারত। ফরম্যাটটির নাম্বার ওয়ান দল তারা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও। মহেন্দ্র ধোনির এই দলটিই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের নজির দেখিয়েছে। এই দ্বি-মুকুটের সঙ্গে রোববার চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারালে আইসিসির টুর্নামেন্টে সাফল্যের রথচক্র পূরণ হবে ধোনির। তবে আইসিসির টুর্নামেন্টে চতুর্থ বারের মতো ফাইনালে উঠে নিশ্চয়ই ব্যর্থদের কাতারে থাকতে চাইবে না ক্রিকেটের গোড়াপত্তনকারীরা। ক্ষুরধার বোলিং দিয়ে অ্যালিস্টার কুকরা চাইবে অদম্য ভারতকে ভূপাতিত করতে। সেক্ষেত্রে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উঠানোর পর আইসিসির দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের উৎসব করতে পারবে এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির স্বাগতিক দলটি। ধোনি বাহিনীর ব্যাটিং যেমন গভীরতা দেখিয়েছে, বোলাররাও আগের রেকর্ডকে ছাড়িয়েছে। পেস-বান্ধব উইকেটে আলো ছড়িয়েছেন ভুবনেশ্বর কুমার ও রবিন্দ্র জাদেজার মতো নতুনরা। তবে ইংলিশরাও এমনিতে ফাইনালে আসেনি। সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ক্রিকেট শক্তিকে নাস্তানাবুদ করেছে জেমস এন্ডারসন-স্টিভ ফিন-স্টুয়ার্ট ব্রডরা। ফাইনালের দুই পক্ষই ব্যাটিংয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে মরিয়া। আট জাতির টুর্নামেন্টে ইতোমধ্যেই তা প্রমাণ করেছে তারা। । এখন দ্য ব্যাটল অফ ইকুয়াল এর ফাইনালে যারা নিজেদের বিকশিত করতে পারবে, তাদেরই শিরোপা- এমন দাবি ক্রিকেট লিখিয়ে মাইকেল স্প্রিং ও রবি শাস্ত্রীদের। যদিও ইংলিশ দলপতি কুক ও ভারত অধিনায়ক ধোনি পরস্পরকে সমীহ করছেন।
ফাইনাল ২৩ জুন, বিকেল ৩.৩০
ফাইনাল ২৩ জুন, বিকেল ৩.৩০
সরাসরি সম্প্রচার : স্টার ক্রিকেট ও মাছরাঙা টেলিভিশন
ভারত-ইংল্যান্ড পরিসংখ্যানে
মোট ওয়ানডে : ৮৬
ভারতের জয় : ৪৬
ইংল্যান্ডের জয় : ৩৫
টাই : ২
পরিত্যাক্ত : ৩
ইংল্যান্ডের মাটিতে দু’দল
মোট ওয়ানডে : ৩৩
ইংল্যান্ডের জয় : ১৮
ভারতের জয় : ১১
টাই : ১
পরিত্যাক্ত : ৩(ডিনিউজ)
খবর বিভাগঃ
খেলাধুলা
সর্বশেষ সংবাদ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়