Saturday, June 15

বিপর্যস্ত সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা

কলাপাড়া(পটুয়াখালী): প্রাকৃতিক সৌন্দার্যের লীলাভূমি সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা ঘূর্নিঝড় মহাসেনের তান্ডব ও দফায় দফায় জলোচ্ছাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সাগরের অব্যাহত ভাঙ্গনে ইতোমধ্যে সৈকতের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান সাগর বক্ষে হারিয়ে গেছে। এছাড়া বিক্ষুদ্ধ সাগরের ঢেউয়ের তান্ডবে সৈকতের বালু সরে জেগে ওঠা সেই পুরাতন নৌকাটি আবার কাঁদামাটি-পলি জমে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট বৈরি আবহাওয়া কারণে উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের তান্ডবে চির চেনা সেই পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার চেহারাই পাল্টে গেছে। 
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার একেবারে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কূলে নিরিবিলি বিশ্বখ্যাত সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা। দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ সৈকতের একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার মনোরম দৃশ্য পৃথিবীতে বিরল। এ কারণে শীত, গ্রীস্ম ও বর্ষা সব ঋৃতুতেই দেশী-বিদেশী হাজার হাজার পর্যটকদের পদভারে মুখরিত থাকে। কিন্তু সুপার সাইক্লোন সিডর ও আইলাসহ দফায় দফায় প্রকৃতিক দুর্যোগ এবং সাগরের রুদ্র রোষে অব্যাহত ভাঙ্গনের কবলে এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে কুয়াকাটার মূল সৌন্দার্য সারিসারি নারিকেল, ঝাউ, তালবাগানসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। সর্বশেষ মহাসেন’র তান্ডবের পর দফায় দফায় জলোচ্ছাসে কুয়াকাটার জাতিয় উদ্যানের কয়েকশ ঝাউ বনের গাছ সৈকতে উবে পড়েছে। এছাড়া কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের বালুর নীচ থেকে জেগে ওঠা প্রাচীন নৌকাটি চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়। প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধিনে গত জানুয়ারী মাসের দিকে এ নৌকাটি উত্তোলন করে নিরাপদ স্থানে স্থানাস্তর না করে সৈকতে রেখে দেয়ায় জোয়ারের তান্ডবে ব্যপক ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীযরা জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে ৩/৪ ফুটের মত বালুতে দেবে গেছে। এদিকে অব্যাহত ভাঙ্গনের কারনে প্রতিবছরই সৈকতের বিপণি-বিতান গুলো পিছনে সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে মালিক কতৃপক্ষ। জোয়ারের সময় পর্যটকরা সৈকতের বেলাভূমিতে নামতে পারছে না। এ অবস্থায় স্থানীয় ও পর্যটকদের দাবি সাগর শাসনের মধ্যে দিয়ে ভাঙনের হাত থেকে দ্রুত রক্ষা করা হোক কুয়াকাটার সৌন্দার্যকে। 
সিলেট থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক মো. সোহেল রহমান-সারমিন দম্পতি বলেন ,‘প্রতি বছর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসি। গত বছরের কুয়াকাটা ও আজকের কুয়াকাটা সৈকতের কোথাও মিল খুঁজে পাচ্ছিনা। সৈকতের ভাঙ্গন দেখে অনেক কষ্ট লাগছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো.আনোর হোসেন জানান, বৈরি আবহাওয়া ও সাগরে পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রবল ঢেউয়ের কারণে নৌকাটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে প্রাচিন এ নৌকাটি উদ্ধার করার পর পরই এটি নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া উচিৎ ছিলো। এখন এ নৌকাটিকে দ্রুত সরানো না হলে আবারো বালুর নীচে দেবে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 
কুয়াকাটা উন্নয়ন সোসাইটি (কেডিএস) এর নির্বাহী পরিচালক মো.রুমান ইমতিয়াজ তুষার হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘নৌকাটি উত্তোলন নিয়ে প্রথমদিকে খুব তোরজোড় করা হয়েছিল। এখন কর্তৃপক্ষের সেরকম আগ্রহ দেখছিনা। এই মূল্যবান সম্পদটি রক্ষায় আরো যত্নবান হওয়া উচিত।’
এ ব্যাপারে প্রত্নত্তত্ব অধিদপ্তরের উৎকীর্ণলিপি ও মুদ্রা শাখার সহকারী পরিচালক আফরোজা খান মিতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,  নৌকাটিকে পানিউন্নয়ন বোর্ডের নির্ধারিত জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে। এটি স্থানান্তরের বিষয়টি সশস্ত্র বাহিনীর কাছে অতি দ্রুত সম্পাদিত হবে।(ডিনিউজ)

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়