মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ : শবেবরাত ভাগ্যরজনী। 'শব' শব্দের অর্থ রাত্রি, 'বরাত' শব্দের অর্থ ভাগ্য। মুসলিম উম্মাহ এ রজনীকে বছরের এক পুণ্যময়ী রজনী বলে বিশ্বাস ও পালন করে থাকে। শাবান মাসের ১৪ তারিখের দিবাগত রাতকে 'শবেবরাত' বলে গণ্য করা হয়। আল্লাহ পাকের নির্দেশে পরবর্তী শবেবরাত পর্যন্ত এক বছরের ভাগ্যলিপি নির্ধারিত হয় এ রাতেই। এ রাতে গোটা মুসলিম উম্মাহ তাদের বিগত দিনের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন আল্লাহর কাছে, আর ভবিষ্যতের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য অনুগ্রহ চান। মাগরিবের নামাজের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শবেরাতের ইবাদত-বন্দেগি, শেষ হয় ভোরে ফজরের নামাজ শেষে দোয়ার মাধ্যমে।
এই রাতে মুসলিম উম্মাহ উন্মুক্ত হস্তে দান-খয়রাত করে পুণ্য লাভের আশায়। অনেকে দিনে রোজাও রাখেন। এই রাতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন যে, তোমাদের মধ্যে কি কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে? আমি অবশ্যই তাকে ক্ষমা করে দেব। এই রাতে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া, কোরআন শরিফ তেলাওয়াত, দোয়া ও মোনাজাত করার আগ্রহ দেখা যায় অনেক বেশি। গরিব-মিসকিনদের মধ্যে খাদ্যদ্রব্য বিশেষ করে রুটি, টাকা-পয়সা দান করতে দেখা যায়। ভ্রাতৃত্ববোধের নতুন উজ্জীবন লক্ষ্য করা যায় এ সময়। অভাবিত এক ধর্মীয় পরিবেশ তৈরি হয় দেশ জুড়ে। এ অবস্থায় ব্যক্তির আত্মশুদ্ধি ও কল্যাণকর সমাজ বিনির্মাণে মানব মনের এই আবেগ, উচ্ছ্বাস ও ভাবকে কাজে লাগাতে হবে।
আমাদের প্রিয় নবী (স.) প্রত্যেক বছর রজব মাস এলে দোয়া করতেন, "আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রজাবা ও শা'বান ওয়াবাল্লাগনা ইলা শাহরি রমাজান" অর্থাত্ হে আল্লাহ আমাকে রজব ও শা'বানে বরকত দাও এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দাও। অন্যান্য সময় তিনি এ ধরনের দোয়া করে কোন মাস পাওয়ার জন্য প্রত্যাশা করতেন না। সে কারণে আমরাও রাসুলুল্লাহর মত এখন থেকে এই দোয়া করতে পারি।
হযরত হাফসা (রা.) বলেন, চারটি জিনিস রাসূল (স.) কখনোই ছাড়তেন না। তাহলো আশুরার রোজা, জিলহজ্জের দশটি রোজা, প্রতি মাসে ৩টি রোজা ও ফজরের আগে দু'রাকায়াত সুন্নাত নামাজ (নাসাঈ ১ম খন্ড)। হাদীস শরীফে ইরশাদ হচ্ছে, যে ব্যক্তি শাবান মাসের ১৫ তারিখে রোজা পালন করবে, দোজখের আগুন তাকে কখনো স্পর্শ করবে না। হজরত মুহাম্মদ (স.) আরো বলেছেন, আমাকে হজরত জিবরাঈল (আ.) উপদেশ দিয়েছেন যে, আপনার উম্মতদের বলে দিন, তারা যেন শবেবরাতকে জিন্দা রাখে। তাহলে শবেকদরকে জিন্দা রাখা হবে। তিনি আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি ওই রাতে ১০০ রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে, তার জীবনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে এবং দোজখের আগুন তার জন্য হারাম হয়ে যাবে। অন্য এক হাদিসে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, একদা জিবরাঈল (আ.) এসে আমাকে বলে গেছেন, হে আল্লাহর হাবিব! আপনি শয্যা ত্যাগ করে উঠুন এবং আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করুন ; কেননা এ রাতে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় বান্দাদের জন্য ১০০ রহমতের দরোজা খোলা রাখেন। সুতরাং এ রাতে আপনি স্বীয় উম্মতের জন্য সুপারিশ করুন।
শবেবরাতে বর্জনীয় কাজকর্ম সম্পর্কে হাকিমুল উম্মত হজরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবি (রহ.) তাঁর 'খুতবাতুল আহকাম' কিতাবে এ রাতকে কেন্দ্র করে ইবাদাতের উদ্দেশ্যে হালুয়া-রুটি বা খিচুড়ি তৈরি করা, দোকানপাট, ঘরবাড়ি এবং মসজিদ আলোকসজ্জা করা, পটকাবাজি ও আতশবাজি করা, মাজারগুলোতে ভিড় করার ব্যাপারে নিষেধ করেছেন। এগুলোর ভিত্তি শরিয়তে নেই। এসব কাজের কোনোটা সব সময়েই হারাম। আর কিছু কাজ যেমন হালুয়া-রুটি বানিয়ে বিতরণ করা, এগুলোকে শবেবরাতের কাজ মনে করা এবং এগুলোর পেছনে পড়ে শবেবরাতের মূল কাজ তাওবা, ইস্তিগফার ও নফল ইবাদত থেকে বিরত থাকা কোনো অবস্থায়ই কাম্য হতে পারে না। বরং পবিত্র এ রাতে নিজেদের মনে ধর্মীয় চেতনা উজ্জীবিত করার পাশাপাশি বিশেষ করে মানবিক ও সামাজিক দায়-দায়িত্ব, দেশপ্রেম ও মানব জাহানের সঙ্গে একাত্মতাবোধ জাগিয়ে রাখার দোয়া মুনাজাত ,দরুদ পাঠ, মিলাদ কিয়াম করাই যুক্তিসঙ্গত।
যদি ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে অন্যায়-অনাচার ও সব ধরনের পাপাচার থেকে মুক্ত রেখে এ রাতে দোয়া করা হয়, তখনই একমাত্র কাঙ্ক্ষিত ফজিলত লাভ সম্ভব। তাই কোন অবস্থাতেই যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে এ রাত না কাটে -সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখা ঈমানী দায়িত্ব।
লেখক :সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
এই রাতে মুসলিম উম্মাহ উন্মুক্ত হস্তে দান-খয়রাত করে পুণ্য লাভের আশায়। অনেকে দিনে রোজাও রাখেন। এই রাতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন যে, তোমাদের মধ্যে কি কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে? আমি অবশ্যই তাকে ক্ষমা করে দেব। এই রাতে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া, কোরআন শরিফ তেলাওয়াত, দোয়া ও মোনাজাত করার আগ্রহ দেখা যায় অনেক বেশি। গরিব-মিসকিনদের মধ্যে খাদ্যদ্রব্য বিশেষ করে রুটি, টাকা-পয়সা দান করতে দেখা যায়। ভ্রাতৃত্ববোধের নতুন উজ্জীবন লক্ষ্য করা যায় এ সময়। অভাবিত এক ধর্মীয় পরিবেশ তৈরি হয় দেশ জুড়ে। এ অবস্থায় ব্যক্তির আত্মশুদ্ধি ও কল্যাণকর সমাজ বিনির্মাণে মানব মনের এই আবেগ, উচ্ছ্বাস ও ভাবকে কাজে লাগাতে হবে।
আমাদের প্রিয় নবী (স.) প্রত্যেক বছর রজব মাস এলে দোয়া করতেন, "আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রজাবা ও শা'বান ওয়াবাল্লাগনা ইলা শাহরি রমাজান" অর্থাত্ হে আল্লাহ আমাকে রজব ও শা'বানে বরকত দাও এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দাও। অন্যান্য সময় তিনি এ ধরনের দোয়া করে কোন মাস পাওয়ার জন্য প্রত্যাশা করতেন না। সে কারণে আমরাও রাসুলুল্লাহর মত এখন থেকে এই দোয়া করতে পারি।
হযরত হাফসা (রা.) বলেন, চারটি জিনিস রাসূল (স.) কখনোই ছাড়তেন না। তাহলো আশুরার রোজা, জিলহজ্জের দশটি রোজা, প্রতি মাসে ৩টি রোজা ও ফজরের আগে দু'রাকায়াত সুন্নাত নামাজ (নাসাঈ ১ম খন্ড)। হাদীস শরীফে ইরশাদ হচ্ছে, যে ব্যক্তি শাবান মাসের ১৫ তারিখে রোজা পালন করবে, দোজখের আগুন তাকে কখনো স্পর্শ করবে না। হজরত মুহাম্মদ (স.) আরো বলেছেন, আমাকে হজরত জিবরাঈল (আ.) উপদেশ দিয়েছেন যে, আপনার উম্মতদের বলে দিন, তারা যেন শবেবরাতকে জিন্দা রাখে। তাহলে শবেকদরকে জিন্দা রাখা হবে। তিনি আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি ওই রাতে ১০০ রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে, তার জীবনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে এবং দোজখের আগুন তার জন্য হারাম হয়ে যাবে। অন্য এক হাদিসে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, একদা জিবরাঈল (আ.) এসে আমাকে বলে গেছেন, হে আল্লাহর হাবিব! আপনি শয্যা ত্যাগ করে উঠুন এবং আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করুন ; কেননা এ রাতে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় বান্দাদের জন্য ১০০ রহমতের দরোজা খোলা রাখেন। সুতরাং এ রাতে আপনি স্বীয় উম্মতের জন্য সুপারিশ করুন।
শবেবরাতে বর্জনীয় কাজকর্ম সম্পর্কে হাকিমুল উম্মত হজরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবি (রহ.) তাঁর 'খুতবাতুল আহকাম' কিতাবে এ রাতকে কেন্দ্র করে ইবাদাতের উদ্দেশ্যে হালুয়া-রুটি বা খিচুড়ি তৈরি করা, দোকানপাট, ঘরবাড়ি এবং মসজিদ আলোকসজ্জা করা, পটকাবাজি ও আতশবাজি করা, মাজারগুলোতে ভিড় করার ব্যাপারে নিষেধ করেছেন। এগুলোর ভিত্তি শরিয়তে নেই। এসব কাজের কোনোটা সব সময়েই হারাম। আর কিছু কাজ যেমন হালুয়া-রুটি বানিয়ে বিতরণ করা, এগুলোকে শবেবরাতের কাজ মনে করা এবং এগুলোর পেছনে পড়ে শবেবরাতের মূল কাজ তাওবা, ইস্তিগফার ও নফল ইবাদত থেকে বিরত থাকা কোনো অবস্থায়ই কাম্য হতে পারে না। বরং পবিত্র এ রাতে নিজেদের মনে ধর্মীয় চেতনা উজ্জীবিত করার পাশাপাশি বিশেষ করে মানবিক ও সামাজিক দায়-দায়িত্ব, দেশপ্রেম ও মানব জাহানের সঙ্গে একাত্মতাবোধ জাগিয়ে রাখার দোয়া মুনাজাত ,দরুদ পাঠ, মিলাদ কিয়াম করাই যুক্তিসঙ্গত।
যদি ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে অন্যায়-অনাচার ও সব ধরনের পাপাচার থেকে মুক্ত রেখে এ রাতে দোয়া করা হয়, তখনই একমাত্র কাঙ্ক্ষিত ফজিলত লাভ সম্ভব। তাই কোন অবস্থাতেই যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে এ রাত না কাটে -সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখা ঈমানী দায়িত্ব।
লেখক :সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
খবর বিভাগঃ
ইসলাম
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়