Saturday, June 15

তবুও বর্ষা শুরু আজ..


এস আর এ হান্নান : রিমঝিম রিমঝিম ঐ নামিল দেয়া/ শুনি শিহরে কদম, বিদরে কেয়া/ ঝিলে শাপলা, কমল ঐ মেলিল দল/ মেঘ অন্ধ গগন, বন্ধ খেয়া। অথবা আষাঢ়ে বাদল নামে নদী ভরভর/ মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর/ দুই কুলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া/ বর্ষার উৎসবে জেগে ওঠে পাড়া। বিদ্রোহী কবি নজরুলের কবিতা ও গানে ফুটে উঠেছে কদম ও বর্ষার সুনিপুণ চিত্র।

বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান/ আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান/ মেঘের ছায়ায় অন্ধকারে রেখেছি ঢেকে তারে/ এই যে আমার সুরের ক্ষেতের প্রথম সোনার ধান; কবিগুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের চিরন্তণ বর্ষার এই গানে সবধিক গুরুত্ব বহণ করছে কদম ফুল। কেবল রবীন্দ্র-নজরুলের গদ্য-পদ্য কিম্বা গানে নয়; বহু কবি-সাহিত্যিকদের লেখায়, বর্ষা-বাদল ও কদম ফুলের অস্তিত্ব ফুটে উঠেছে। জেগে উঠেছে অপরূপ বাংলার শ্বাস্বত প্রতিচ্ছবি।

বর্ষা; ছয় ঋতুর একটি। বাংলা দিনলিপির (বর্ষপঞ্জি) আষাঢ়-শ্রাবণ নিয়ে যার মাতামাতি-সখ্যতা। ওই ঋতুতে বর্ষা ও কদম ফুল যেনো একই সুতোয় গাঁথা। বর্ষাবিহীন কদম ফুল অথবা কদমফুলহীন বর্ষা যেনো খানিকটা ফিকে ফিকে লাগে। অনেকটা খেই হারানোর মতো।

মুনষ্যসৃষ্ট নানান বৈরিতার কারণে ঋতুর ছন্দ পতন ঘটছে। শুক্রবার ছিলো গ্রীস্মের যবণিকা দিবস। প্রকৃতিতে ছিলো বর্ষার আগাম আহ্বান-আমন্ত্রণ। মধুমাস জ্যৈষ্ঠের শেষ দিনে আকাশ ছিলো মেঘাচ্ছন্ন। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিও ঝরেছে। প্রকৃতিতে বর্ষার হাতছনি। আগাম বার্তা জানিয়ে দেয়- কদম্ব শাখায় ফুল ফুটুক বা না ফুটুক শুরু হয়েছে বর্ষার মাখামাখি। জ্যৈষ্ঠের শেষ দিবস তাই-জানিয়ে দেয় বর্ষার আগাম বার্তা-শুভেচ্ছা।

কদম গাছ দীর্ঘাকৃতি, বহু শাখা বিশিষ্ট হয়ে থাকে। সৌন্ধর্যদানে রূপসী তরুর মধ্যে এটি অন্যতম। অগণিত শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট কদম গাছের পাতা বড় বড় ও উজ্বল সবুজ। নিবিড পত্র-পল্লব বিন্যাসের জন্য কদম অত্যন্ত ছাযাঘণ। শীতে কদমের পাতা ঝরে এবং বসন্তে কচি পাতা গজায। অপেক্ষাকৃত হালকা সবুজ রঙের হয়ে থাকে কদমের কঁচি পাতা। টেনিস বলের মতো গোলাকৃতির মাংসল পুষ্পাধারে সজারুর পেখমের ন্যায় সরু সরু ফুলের দৃস্টিদন্দন বিন্যাস। সাদা-হলুদের মিশ্রণে, হলুদ-সাদার আধিক্যে প্রস্ফুটিত কদম ফুল দেখতে অনেক সুন্দর। বাঁদুর ও কাঠবেড়ালীর আহারের মাধ্যমে এর বীজ বিভিন্ন স্থানে পরিবহন হয়ে থাকে।

কদম গাছ লাভজনক না হওয়ায় দিনে দিনে মানুষ ওই গাছের প্রতি নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। কেনোনা, না কদম গাছের কাঠ মূল্যবান। না ফল খাওয়া যায়। ফলে অবহেলা ও অনাদরে বেড়ে ওঠা কদম গাছ ইট ভাটায় বিক্রি হচ্ছে। গাছ চেরাই করে তৈরিকৃত তকতা ব্যবহৃত হচ্ছে ইমারত নির্মাণে, সেন্টারিংয়ের কাজে। ফলে ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে প্রকৃতির শোভাবর্ধণী কদম গাছ।

এখনো সাহিত্য অনুরাগী কেউ কেউ বাড়ির আঙিণায় কদম চারা রোপণ করেন এবং অতিযতেœ বড় করে তোলেন। কোনো কোনো পার্কের ভেতরেও কদম গাছের অস্তিত্ব রয়েছে। এছাড়া, গ্রামাঞ্চলের মেঠো পথে বহূ কদম গাছ মাথা উঁচিয়ে আজও অকৃপণভাবে মেলে ধরে অপরূপ সৌন্ধর্যের ডালা। তবে বর্ষার শুরুতেই কদম শাখায় ফুলের দেখা পাওয়াটা দুস্কর। কেনোনা, প্রকৃতির অস্বাভাবিক ছন্দপতনে পুষ্পিত কদমশাখা দেখার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কোথাও কোথাও কদম শাখায় যে, দুই একটি ফুল ফোটেনি-তা কিন্তু নয়। তবে কদম্ব ডালে ফুলের সারি হাসুক বা না হাসুক; বর্ষার শুরু আজ।

পরিবেশ ও প্রকৃতি বিশেজ্ঞদের মতে, নানা কারণে প্রকৃতির গতি বদলে যাওয়ার কারণে এরকম হচ্ছে।  (ডিনিউজ)

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়