Sunday, June 16

হারল আ'লীগ, জিতল সরকার

শাহেদ চৌধুরী
চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেরেছে আওয়ামী লীগ। জিতেছে সরকার। স্থানীয় সরকার নির্বাচন 'অতি দলীয়করণে' এবারের সিটি নির্বাচনে স্থানীয় সমস্যা উপেক্ষিত থেকেছে, জাতীয় রাজনীতির কালো ছায়া পড়েছে এ নির্বাচনে। সাধারণভাবে ধারণা করা হয়েছিল, সিটি নির্বাচনে বিএনপি ভালো করবে। তবে চারটিই তাদের দখলে যাবে, তা অনেকে ভাবেননি। অন্ততপক্ষে বরিশালে বিদায়ী মেয়র হিরনের জয়ের ব্যাপারে দল মোটামুটি নিশ্চিত ছিল। সে আশাও মরীচিকা হয়ে গেল।
পর্যবেক্ষক মহল তাদের তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণে বলেছেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হারলেও সরকার জিতেছে। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব_ অতীতের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন, সিটি নির্বাচনে সরকার বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ করবে না। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করবে। একই সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে প্রধানমন্ত্রীর দাবি এ নির্বাচনে সত্য বলে প্রমাণিত হলো। প্রধানমন্ত্রী গতকাল দুপুরে বলেছেন, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিচ্ছেন। বিএনপি অবশ্য মৃদুকণ্ঠে বলার চেষ্টা করেছে যে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচন নয়। এর মেজাজ আলাদা।
দল সমর্থিত প্রার্থীদের হেরে যাওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন, সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচনে যে আন্তরিক, তা-ই প্রমাণিত হয়েছে। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অবশ্য এ পরাজয়কে জাতীয় নির্বাচনের জন্য 'সতর্কবার্তা' বলে মন্তব্য করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী সমকালকে বলেছেন, সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন করেছে। চার সিটি নির্বাচনের কোথাও কোনো ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেনি। ভোটাররা স্বস্তিতে ভোট দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী গতকাল রাতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, নির্বাচনে পরাজিত হয়ে সরকার প্রমাণ করেছে, তারা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সক্ষম। সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানিয়েছেন, চার সিটির নির্বাচন প্রমাণ করেছে, দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচন সম্ভব। 
অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে এ নির্বাচন আয়োজনের পর নির্বাচন কমিশন স্বভাবতই স্বস্তিতে রয়েছে। সিইসি ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন, ইসি জাতীয় নির্বাচনও সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে পারবে। তবে সব কথার শেষ কথা, আওয়ামী লীগের এ হারের সঙ্গে গ্গ্নানি জড়িয়ে 
রয়েছে। দল তো কিছুটা হতোদ্যম হবেই। 
অনেক প্রার্থীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা থাকার পরও সরকারবিরোধী মনোভাবের কারণে প্রত্যাশিত ফল পায়নি সরকারি দল। সে সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনায় প্রচণ্ড সমন্বয়হীনতা, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদ এবং জাতীয় পার্টিকে আস্থায় আনতে না পারায় এই ভরাডুবি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রাথমিক বিশ্লেষণ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর অপপ্রচারের পাল্টা জবাব দেওয়া হয়নি বলেই নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কোথাও কোথাও ভোটাররা ধর্ম নিয়ে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সরকারবিরোধী মনোভাব। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ হেফাজতে ইসলাম নেতাকর্মীদের সমর্থনও আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বেশ খানিকটা পিছিয়ে দিয়েছিল। 
চার সিটি নির্বাচনের শুরুর দিকে সবক'টিতেই অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ-অসন্তোষ থাকলেও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিনেই প্রতিটিতে একক প্রার্থী দেয় বিএনপি। এতে নেতাকর্মীরা মুহূর্তেই চাঙ্গা হয়ে ওঠে। এর উল্টো চিত্র ছিল আওয়ামী লীগে। একমাত্র বরিশাল সিটি করপোরেশনে গৃহদাহ থাকলেও সেটা নেভাতে ব্যর্থ হয়েছেন শীর্ষ নেতারা। যার কারণে কর্মীরা প্রচণ্ড হতাশ হন। এরই বিরূপ প্রভাব পড়ে অন্য তিন সিটি করপোরেশনে। যার কারণে শওকত হোসেন হিরনের চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ভোটের রাজনীতিতে ব্যর্থ হয়েছে। ঘরের শক্র বিভীষণ ছিল বরিশাল, খুলনা ও সিলেটে। খুলনায় সাবেক দুই এমপির ভূমিকা সহায়ক ছিল না। সিলেটের নেতাকর্মীরা একাট্টা হয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাননি।
অনেকে মনে করেন, এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো সমন্বয় ছিল না। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করে নেতাকর্মীদের সাহস জোগালেও এর উল্টো চিত্র ছিল আওয়ামী লীগে। নেতাদের কেউ কেউ নির্বাচনী এলাকায় গেলেও ফটোসেশনে অংশ নিয়ে দ্রুত ঢাকায় ফিরেছেন। প্রার্থীরাও বিজয় নিয়ে অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও সন্ত্রাসও বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।(দৈনিক সমকাল ১৬ জুন ১৩)

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়