Saturday, June 15

পাওয়া যাচ্ছে না মেয়র প্রার্থী রিমনকে!


সিলেট: সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে হাই ভোল্টেজ মেয়র পদের প্রার্থী তিনি! তবে নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না প্রধান দুই প্রার্থীর সঙ্গে। একেবারেই নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন, আবার বিতর্ক আর হাস্যরসের যোগান দিয়েছেন অদ্ভূত সব কর্মকাণ্ড করে। একমাত্র স্বতন্ত্র এই মেয়র প্রার্থী সিসিক নির্বাচনে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিদ্বদ্বিতা করছেন।
তালা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ছালাহ উদ্দিন রিমনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও। শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই তার খোঁজ জানেন না কেউ। শনিবার ভোটের দিনও কোনো কেন্দ্রে ও মাঠে-ঘাটে খোঁজ নেই। নির্বাচনী কেন্দ্রের বুথগুলোতেও নেই তার কোনো এজেন্টও। নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারাও খোঁজ পাচ্ছেন না তার। তার মোবাইলে ফোন দিয়ে কেউ জানতে পারছেন না কোনো তথ্য। কোথায় ভোট দিয়েছেন তাও জানা যাচ্ছে না।
এরই মধ্যে সিলেট সিটি নির্বাচন কমিশনার এস এম এজহারুল ইসলাম দুপুরে বাংলানউজকে বলেন, “আমরাও তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। সবগুলো কেন্দ্র থেকেই খবর এসেছে, তার কোনো খোঁজ নেই। তিনি ভোট দিয়েছেন কোথায়, সেটিও জানা যায়নি। কোনো কেন্দ্রে তার কোনো এজেন্টের দেখা মেলেনি। আপনারা বরং গোয়েন্দা সংস্থায় খোঁজ নিন।”
শনিবার সকালে ১৪ দল সমর্থিত বদর উদ্দিন আহমদ কামরান সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ও ১৮ দল সমর্থিত আরিফুল হক চৌধুরী রায়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট দেন। কিন্তু মেয়র প্রার্থী ছালাহ উদ্দিন রিমন কোন কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন তাও জানা যায়নি।
মেয়র প্রার্থী হওয়ার পর নগরীতে কোনো পোস্টার লিফলেটও ছিলো না এই মেয়র প্রার্থীর। তবে টিভির লাইভ অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই তিনি হাজির হতেন। কোনো সংলাপ লাইভ না দেখালে তিনি আসতেন না।
নির্বাচনে কামরান ও আরিফ সামান্য ভোট পাবেন আর তিনি জিতবেন এমনটি বাংলানিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন রিমন। প্রায়ই তার এ ধরনের কথাবার্তা নগরবাসীর হাসির খোরাক হতো।
বার বার মেয়র প্রার্থী হওয়ার খায়েশ জাগে রিমনের। ভোট যা-ই পাওয়া যায় ব্যাপার না। তবে প্রার্থী হওয়া চাই— এ লক্ষ্য নিয়েই প্রার্থী হন তিনি। সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এ নিয়ে দুইবার মেয়র প্রার্থী হলেন তিনি। কোনো আয় নেই আবার এসএসসি পরীক্ষা দেবেন এটা তার হলফনামারই তথ্য।
এর আগে প্রার্থী হওয়ার কারণ হিসেবে রিমন বাংলানিউজকে বলেছিলেন, “কামরানের খবর তো জানইন, মানসে আর তানরে ছাইরা না, চান্স লইয়া দেখরাম আমি ফারি কি না, তবে উন্নয়ন করমো মেয়র ওইলে।”
নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি। জীবনে ৬ বার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ৬ বারই ফেল করেছেন। তার মতে “তাতে দোষ কি, আবার ফরীক্ষা দিরাম।” সিলেটের দক্ষিণ সুরমার হাজী ইসরাব আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন  বলেও জানান তিনি।
রিমন আরো জানান, গত বছর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে পাঁচ বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন। আগামী বছর আরো পাঁচ বিষয়ে পরীক্ষা দেবেন। তারপর ইন্টারমিডিয়েট পড়বেন তিনি।
অন্য মেয়র প্রার্থীরা ইশতেহার ঘোষাণা করেছেন, আপনার ইশতেহার কি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ইশতেহার তো আমার মনের ভেতরে।”
প্রতিদ্বন্দ্বী যেখানে হেভিওয়েট দুই প্রার্থী সেখানে আপনার বিজয়ের আশা কতটুকু এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “হাতে গোণা দু’একজন কামরান আর আরিফ ভাইয়ের কথা বলছেন। তারাই লাফালাফি করছেন। কিন্তু যতো গর্জে ততো বর্ষে না।”
রিমন এর আগে ২০০৮ সালের সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪২৪ ভোট পেয়েছিলেন। তার কথা বার্তা আচরণ সবই এখন নগরবাসীর হাসির খোরাক। টিভির লাইভ অনুষ্ঠানে যেতে পাগল প্রায় তিনি। কয়েকদিন আগে সচেতন নাগরিক কমিটির একটি অনুষ্ঠান ছিল মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে। তাকে আমন্ত্রণ জানানো মাত্র তিনি অনুষ্ঠানটি কোনো টিভি চ্যানেলে সরাসরি দেখানো হবে কিনা জানতে চান। পরবর্তীতে কোনো  টিভি চ্যানেলে এটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে না শুনে তিনি সাফ জানিয়ে দেন— যাবেন না।
এ পর্যন্ত তিনি বিবিসি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি ও এসএ টিভির সরাসরি অনুষ্ঠানে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও আরিফুল হকের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। তবে সব অনুষ্ঠানে তার কথা শুনে হেসে গড়াগড়ি খেয়েছেন দর্শকরা।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী সালাহ উদ্দিন রিমন গত সোমবার দুপুরে মোটরসাইকেল যোগে জিন্দাবাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে যানজটে পড়লে এক পথচারী রিমনকে উদ্দেশ্য করে ‘খইবা মেয়র’ বললে প্রতি উত্তরে রিমন কিছুটা রাগান্বিত হয়ে ওই পথচারীকে বলেন, “মেয়ররে অলা মাতাইননিবা”— রিমনের কথা শুনে এসময় পথচারীরা হাসাহাসি করেন।
দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ সূত্র জানায়, এক সময় ছিনতাইয়ের অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন ছালাহ উদ্দিন রিমন। ছিনতাই কেন হয় নগরীতে এমন প্রশ্ন করা হলে রিমন বলেন, “মা-বাবা সন্তানদের প্রতি যত্নশীল হলে সন্তান বিপথগামী হয় না। ছিনতাইকারী হয় না।”
ছালাহ উদ্দিন রিমনের প্রার্থিতার বিষয়ে সচেতন নাগরিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, এ বিষয়টি নিয়ে ভাবা দরকার নির্বাচন কমিশনকে। এত সহজে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকার ফলে ভূঁইফোড় অনেকেই প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের বিষয়টিকেই হালকা করে ফেলছেন।
শাবির মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠানে তরুণদের একটি প্রশ্ন ছিল তার প্রতি যে, ব্যাংকের অলস টাকা তাকে বিনিয়োগ করতে দিলে তিনি কি করবেন। জবাবে রিমন বলেন, “সিটি করপোরেশনের তরুণ ও বেকার যুবকদের মধ্যে তিনি তা বিলিয়ে দেবেন।” কৌতুকের মতো হাস্যকর উত্তর শুনে হেসে উঠেছেন জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে দর্শক হিসেবে আসা কয়েক হাজার তরুণ।
এমনভাবেই হেসে উঠেছিলেন তারা, বেসরকারি টিভি চ্যানেলের লাইভ অনুষ্ঠানে তার কথা শুনে। মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান আরিফের ভিড়ে তাকে নিয়ে আলাপ-আলোচনা কম হলেও হাসি কৌতুক তাকে নিয়েই হচ্ছিল বেশি।(বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম)

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়