:: ফারুক চৌধুরী ::
প্রিয় ফারজানা
প্রত্যেক পনেরোই আগস্টে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে, বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করি। গভীর শ্রদ্ধা ভরে। স্মরণ করি এই মানুষটিকে যিনি আমদের জাতীয় ইতিহাসের যুগসন্ধিক্ষণে আমার এবং আমাদের মতো লক্ষ-লক্ষ দেশবাসীর রাজনৈতিক সুপ্তি ভঙ্গ করেছিলেন। স্মরণ করি এই মানুষটিকে যিনি না থাকলে স্বাধীনতার সূর্যোদয় এদেশের কবে হত জানি না। স্মরণ করি এই মানুষটিকে যিনি ইতিহাসের কাছে আমাদের প্রজন্মের শ্রেষ্ঠ উপহার।
প্রত্যেক পনেরোই আগস্টে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে, বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করি। গভীর শ্রদ্ধা ভরে। স্মরণ করি এই মানুষটিকে যিনি আমদের জাতীয় ইতিহাসের যুগসন্ধিক্ষণে আমার এবং আমাদের মতো লক্ষ-লক্ষ দেশবাসীর রাজনৈতিক সুপ্তি ভঙ্গ করেছিলেন। স্মরণ করি এই মানুষটিকে যিনি না থাকলে স্বাধীনতার সূর্যোদয় এদেশের কবে হত জানি না। স্মরণ করি এই মানুষটিকে যিনি ইতিহাসের কাছে আমাদের প্রজন্মের শ্রেষ্ঠ উপহার।
সাড়ে তিনটি ঘটনাবহুল বছরে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মাঝে তার সান্নিধ্যে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। মনের গহনে জমা আছে অনেক অনেক স্মৃতি। উষ্ণ, হৃদয়বান, সাহসী এই মানুষটির, এই বাংলার জল মাটি আকাশকে সমস্ত হৃদয় দিয়ে ভালোবাসা এই মনুষটির।
তার সঙ্গে আমার শেষ দেখাটির কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে তাঁর সঙ্গে শেষ কথোপকথন। তা ছিল তোমাকেই কেন্দ্র করে।
কিংস্টন, জামাইকা। ৬ মে ১৯৭৫। কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সম্মেলনে লন্ডন থেকে আমি ছিলাম বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী। সম্মেলন শেষে বিদায় নেয়ার পালা। বঙ্গবন্ধু সদলবলে ফিরে যাবেন দেশে। আর লন্ডনে অবস্থানকারী আমি ফিরব আলাদাভাবে।
আমি কিংস্টনের পথে লন্ডন ছাড়ার সময় তুমি তোমার অতি সাধারণ ক্যামেরাটি আমার হাতে তুলে দিয়েছিলে। বলেছিলে, ‘পাপা, আমার ক্যামেরায় বঙ্গবন্ধুর ছবি তুলে এনো।’
কনফারেন্সর ব্যস্ততায় তোমার অনুরোধটির কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। আর যখন মনে হয়েছিল তখন ঠিক সুযোগ বা সাহস হয় নি ক্যামেরা হাতে বঙ্গবন্ধুর সামনে দাঁড়ানোর।
কিংস্টনের প্যাগাসাস হোটেলে আমার কামরাটি ছিল বঙ্গবন্ধুর স্যুটের কাছেই, যতদূর মনে পড়ে মাত্র দুই কামবার ব্যবধানে। ৬ মে ভোরে তার স্যুটে গিয়ে হাজির হলাম। বঙ্গবন্ধু তখন কনফারেন্সে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার পরনে কালো ট্রাউজার আর সাদা ধোপাদুরস্ত ডাবল কাফ একটি শার্ট। গলাবন্ধ কোটটি তিনি পরেন নি তখনো। তাঁর বসবার ঘরের একটি সোফায় বসে সেদিন খবরের কাগজ পড়ছিলেন।
আমি যেতেই বললেন, কী তুমি কবে লন্ডনে ফিরে যাচ্ছ?
আমি যেতেই বললেন, কী তুমি কবে লন্ডনে ফিরে যাচ্ছ?
বললাম, ‘স্যার আমি আগামীকাল নিউইয়র্ক হয়ে লন্ডন ফিরে যাচ্ছি।’
বললেন, ‘ঠিক আছে। নিউইয়র্কে বেশি থেকো না যেন। তাড়াতাড়ি ফিরে যেও। লন্ডনে তো অনেক কাজ।’ তারপর মৃদু হেসে বললেন, ‘তোমার জন্য খবর আছে। তোমার তো লন্ডনে বছর তিনেকের উপর হলো। ভাবছি তোমাকে দেশে নিয়ে আসব। মনে-মনে তৈরি থেকো।’
সেই সময়ে দেশে বদলির কথা আমি ভাবছিলাম না মোটেও। কিন্তু রাষ্ট্রপতির আদেশ। মৌনতা সম্মতি লক্ষণ ভেবে চুপ থাকলাম কিছুক্ষণ। তারপর বললাম, ‘স্যার, আমার মেয়ে এই ক্যামেরাটি আমাকে দিয়েছে আপনার ছবি তুলে নেয়ার জন্য। আপনাকে কষ্ট দেব।’
‘কষ্ট কেন? তোমার মেয়ের আদেশ। তোলো ছবি।’
সোফায় বসা অবস্থায় কামরার ভেতরেই তার একটি ছবি নিলাম।
সোফায় বসা অবস্থায় কামরার ভেতরেই তার একটি ছবি নিলাম।
তীক্ষè দৃষ্টি বঙ্গবন্ধুর। বললেন, তোমার ক্যামেরাতে তো ফ্লাশ লাইট নেই। চলো, বাইরে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়াই। এই ছবিটি যদি না ওঠে, বাইরের রোদে ওই ছবিটি আসবে নিশ্চয়ই।
বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়ালেন বঙ্গবন্ধু। বললেন, ‘তোমার মেয়েকে বলো, শার্ট পরা ছবি কিন্তু আমার খুব বেশি নেই।’
পনেরই আগস্ট ১৯৭৫-এর ভোরে যখন লন্ডনে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারবর্গের হত্যার মর্মান্তিক খবর পৌঁছাল আমার তখন ২৬ আগস্টে ঢাকা ফিরে আসার প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছিলাম। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর সরকারি আদেশের রদবদলে সেই যাত্রায় আর ঢাকা আমার ফেরা হয় নি।
পনেরই আগস্ট ১৯৭৫-এর ভোরে যখন লন্ডনে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারবর্গের হত্যার মর্মান্তিক খবর পৌঁছাল আমার তখন ২৬ আগস্টে ঢাকা ফিরে আসার প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছিলাম। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর সরকারি আদেশের রদবদলে সেই যাত্রায় আর ঢাকা আমার ফেরা হয় নি।
আমার অপেশাদার হাতে তোমার অতি সাধারণ ক্যামেরায় তোলা অসাধারণ এই মানুষটিকে ছবি দুটি আজ আমাদের পারিবারিক অ্যালবামের অমূল্য সংযোজন।
সেদিন ছবি দু’টি তুলতে গিয়ে আমার মনে হয়েছিল ক্যামেরা হাতে আমি আর তাঁর অধঃস্তন একজন কর্মচারি নই। আমি একজন ফটোগ্রাফার, তাঁর ছবি তুলছি। আর আমরা দু’জনই যেন রক্ষা করছি লন্ডনের স্কুলে পড়া একটি মেয়ের আশাভরা অনুরোধ। আর অনুরোধটি রাখতে পেরে তিনি যেন প্রসন্ন।
অত্যন্ত হৃদয়বান মানুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।(পরিবর্তন)
অত্যন্ত হৃদয়বান মানুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।(পরিবর্তন)
খবর বিভাগঃ
নিবন্ধ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়