Tuesday, May 21

দরিদ্রের ঠাঁই ভেঙ্গে দিলেও ধণিক ব্যক্তিদের প্রাসাদোপম ভবন আজও অক্ষত

মহম্মদপুর (মাগুরা) : দীর্ঘ এক বছর আগে দরিদ্রের ঠাঁই ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। ওই সময় চোখের জলে পথ ভিজিয়ে সেসব দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা অন্যত্র চলে যায়। কিন্তু ধণিক ব্যক্তিদের প্রাসাদোপম দালানকোঠায় দীর্ঘ এক বছরেও আঁচড় লাগেনি এক বিন্দুও। অক্ষত থাকলো তাদের নির্মিত সুরম্য ভবন। অথচ ভেঙ্গে দেয়া হয় দরিদ্রের মাথা গোঁজার ঠাঁই। রাঘব বোয়ালদের অট্টালিকা অক্ষত থাকলেও উচ্ছেদ হয় চুনোপুটি। উচ্ছেদ হওয়া ভূমিহীন অসহায় দরিদ্র ১৮টি পরিবার এখনও গড়তে পারে নি স্থায়ী আবাসন। পুনর্বাসন না করেই উচ্ছেদ করে দেয়া ওইসব পরিবারের সদস্যদের নেমে যেতে হয়েছে রাস্তায়। গত বছরের ৩০ মে বুধবার দুপুরে তাদের আশ্রয়ের শেষ অবলম্বনটুকুও কেড়ে নেয়া হয়।

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরে অবস্থিত রাজা সীতারাম রায়ের ভূসম্পদ দখলমুক্তকরণের জন্যে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর উদ্যোগ গ্রহণ করে। এক সময়ের স্বাধীনচেতা রাজা সীতারাম রায়ের বিশাল পরিমাণ (বর্তমানে সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত জমি) জমি বিভিন্ন সময়ে বেদখল হতে থাকে। প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর ওই পুরাকীর্তির মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়। আর ওই উদ্যোগে বেকায়দায় পড়ে স্থানীয় সহায়-সম্বলহীন ও খেটে খাওয়া দরিদ্র শ্রেণির ১৮টি অস্বচ্ছল পরিবার। বহু বছর ধরে সেখানে বসবাসরত এসব পরিবারকে উচ্ছেদ করে দেয়া হলেও ধণিক শ্রেণীর দখলদাররা আজও সেখানে বহাল তবিয়তে। ওই এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ করে বসবাস করলেও তাদের গায়ে লাগছে না উচ্ছেদের বাতাস।

সূত্রমতে- উপজেলা সদরে রাজা সীতারাম রায় গড়ে তোলেন রাজবাড়ি। তার আমলে নির্মিত স্থাপত্যশৈলী আজও মাথা উচু করে জানান দিয়ে যাচ্ছে বহু ইতিহাস। বহু সুখ-দু:খ এবং কালের স্বাক্ষ্য হয়ে সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে রাজা সীতারাম রায়ের স্থপনা। কালচক্রে বহু মানুষ সেখানকার জমিতে ঘরবাড়ি তুলে বসবাস করে আসছিলো। প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে গত বছরের ৩০ মে বুধবার দুপুরে ধণাঢ্যদের ব্যয়বহূল ভবন বাদ রেখেই ছিন্নমূল ১৮টি পরিবারকে উচ্ছেদ করে দেয়। উচ্ছেদ হওয়া মৃত্যুঞ্জয় শীল, হারুন শেখ, সিদ্দিক, সিরাজ, দাউদ, সমীর সেন, খবির হোসেন, সত্য শীল, সুনিল বিশ্বাস, নজরুল, শুকুর, আমিনুর, মন্নু, তৈয়েবুর ও টোকনের পরিবার আজও মাথা গোঁজার ঠাঁই গড়ে তুলতে পারে নি। অনেকে বাড়ি ভাড়া করে থাকছে। কেউবা অব্যবহৃত সরকারি ভবনে বাস করছেন।

স্থানীয় ভূমি অফিস সূত্র জানায়- ওই পুরাকীর্তি এলাকার মধ্যে পূর্বনারায়ণপুর মৌজায় ৪২৯ নং দাগে ৪ একর ৫৫ শাতংস এবং মহম্মদপুর মৌজার অন্তর্গত ০৬ নং দাগে ৬৩ শাতংসসহ মোট জমির পরিমান ৫ একর ১৮ শতাংস। এরমধ্যে মালিকানা সম্পত্তির পরিমান এক একর ৪৫ শতাংস এবং ৩ একর ১০ শতাংস জমিতে বিআরডিবি, সাবরেজিস্ট্রি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস অবস্থিত। ওই হিসাব অনুযায়ী এক একর ৬৩ শতাংস জমি এখনো বেদখল রয়েছে।

প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের ওই পুরাকীর্তি এলাকার মধ্যে ধনিক শে্িরণর কহুতল ভবন এবং আরো অনেকের ঘরবাড়ি থাকলেও সেসবের গায়ে উচ্ছেদের বাতাস না লাগলেও ওই এলাকায় বসবাসরত দিনমজুর ও সহায়-সম্বলহীন ১৮ পরিবারকে উচ্ছেদ করে দেয়া হয়। ওই সময় দরিদ্র পরিবার মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয় হারিয়ে দিশেহারা পরিবারের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিমাতাসূলভ আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সুত্র জানায়- প্রততত্ত্ব অধিদপ্তর ঢাকার ২৮ জুলাই/২০১১’র পত্র নং- প্রতœ/অ:দ:/জ:হ:/দখল/২ঙ/১১/১৫৪৯/১ এর মাধ্যমে নামজারী সম্পন্ন করার প্রেক্ষিতে আলোচ্য পুরাকীর্তিটি প্রতœতত্ত্ব অফিদপ্তরের অনুকূলে নামজারীসহ পুরাকীর্তির মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ৮ সেপ্টেম্বর ছ-১/৩/৯৮-আকাখু-৮৬৬ স্মারকে খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক শীহাব উদ্দিন আকবর স্বাক্ষরিত এক পত্র মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দেয়া হয়। উক্ত পত্র প্রাপ্তির পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সামছু দ্দৌজা আলোচ্য এলাকার ১৮ ভূমিহীন পরিবারকে ঘরবাড়ি সরিয়ে জায়গা খালি করে দেয়ার নোটিশ প্রদান করেছিলেন। নোটিশ জারির পর স্বেচ্ছায় তাদের স্থাপণা সরিয়ে না নেয়ায় প্রশাসনের উদ্যোগে উচ্ছেদ করা হয়েছিলো।

উচ্ছেদ হওয়া মৃতুঞ্জয় শীল ক্ষোভের সাথে বলেন, বড় লোকেগার বাড়ি-ঘরে এক বছরেও বাতাস লাগলো না। অথচ আমাগেরে উচ্ছেদ করে দিলো। তিনি আরো বলেন, বউ, ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে আমি খুব কষ্টে আছি। একজনের আদপাকা ঘরে ভাড়া থাহি। নাপিতের কম্ম করে সংসার টানতে পারছি না।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সামছু দ্দৌজা বলেন- প্রাথমিক পর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে ওই সময় ১৮ পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। অধিক যাচাই-বাছাই করে যদি এ রকম অবৈধ দখলদার পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে তাদেরকেও জায়গা ছেড়ে দিতে হবে।
এস আর এ হান্নান,ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়